>
- ২০০৮ সালে ভারতে ঢোকার সময় ভুলে বাদলকে গ্রেপ্তার করে বিএসএফ
- পর্যটক ভিসা নিয়ে তাজমহল দেখতে বেরিয়েছিলেন বাদল
- খুনের মামলায় বাদলকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়
- নির্দোষ জানার পর গত ৬ জুলাই বাদলকে ফেরত আনে সরকার
- কিন্তু তিন মাস পরও বাদল কারামুক্ত হননি
‘নিরপরাধ’ বিবেচনায় ঢাকঢোল পিটিয়ে ভারত থেকে বাংলাদেশে ফেরত আনা হয়েছিল ১০ বছর ধরে কারাগারে থাকা বাদল ফরাজিকে। কিন্তু দেশে এসেও সেই কারাগারেই দাগি আসামিদের সঙ্গে দিন পার করছেন এ ব্যক্তি।
একটি খুনের মামলার আসামির সঙ্গে নামের মিল থাকার কারণে ২০০৮ সালে বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে ভারতে ঢোকার সময় বাদল ফরাজিকে গ্রেপ্তার করে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)। পর্যটক ভিসা নিয়ে বাংলাদেশের বাগেরহাট থেকে তাজমহল দেখতে বেরিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু এরপর আর ফেরেননি। পাসপোর্ট অনুযায়ী, বাদলের স্থায়ী ঠিকানা বাগেরহাট এবং বর্তমান ঠিকানা খুলনায়।
নির্দোষ জানার পরও বাংলাদেশে এনে তিন মাস ধরে কারাগারে এভাবে আটক রাখা মানবাধিকার লঙ্ঘন বলে মনে করছেন মানবাধিকারকর্মীরা। তাঁদের মতে, ভারতে থাকলে সেখানকার মানবাধিকারকর্মীদের চাপে বাদল মুক্ত হয়ে যেতেন। মুক্ত হওয়ার পর মামলা করতে পারতেন, পারতেন ক্ষতিপূরণ চাইতে।
এদিকে একমাত্র ছেলে নিখোঁজের পর থেকে অসুস্থ বাদলের মা সারাফালি বেগম। দীর্ঘদিন সন্তান ফিরে আসার আশায় থেকে মারা গেছেন বাদলের বাবাও। মোংলা থেকে কান্নাজড়িত কণ্ঠে মুঠোফোনে বাদলের মা সম্প্রতি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার কাছে ভারতের কারাগার আর ঢাকার কারাগার একই কথা। এত দূর থেকে অসুস্থ শরীরে টাকা খরচ করে সন্তানকে দেখতে যাওয়ার মতো সাধ্য আমার নেই।’ তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘সরকার বারবার বলছে আমার ছেলে নির্দোষ। তাহলে কেন তারা কারাগারে রাখছে। আর কারাগারেই যদি রাখবে, তাহলে আর দেশে ফেরত আনল কেন? ছেলে আসার অপেক্ষা করতে করতে হয়তো আমিও চলে যাব।’
সেই সময় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছিলেন, বাদল ফরাজিকে এনেই মুক্তির ব্যবস্থা করা হবে। কিন্তু তিন মাস পার হলেও মুক্তি পেলেন না বাদল ফরাজি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘দেখি, আমরা আইন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বলব। কীভাবে তাঁকে বের করা যায় তার একটি উপায় বের করতে হবে।’ তবে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের কারাধ্যক্ষ মাহবুবুল ইসলাম বলেন, ‘বাদল ফরাজিকে আমরা অপরাধী হিসেবে পেয়েছি, আর রায় দিয়েছেন ভারতের আদালত। তাকে পুরো সাজাই খাটতে হবে। আমাদের সে রকম নির্দেশনাই দেওয়া আছে।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০০৮ সালের ৬ মে নয়াদিল্লির অমর কলোনির এক বৃদ্ধা খুনের মামলায় গ্রেপ্তার হন বাদল ফরাজি। ওই হত্যা মামলায় বাদল সিং নামের এক আসামিকে খুঁজছিল ভারতের পুলিশ। ওই বছরের ১৩ জুলাই বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে ভারতে প্রবেশের সময় বিএসএফ ভুল করে বাদল ফরাজিকে গ্রেপ্তার করে। নিম্ন আদালতের রায়ে খুনের দায়ে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০২ ধারায় ২০১৫ সালের ৭ আগস্ট বাদলকে দোষী সাব্যস্ত করেন দিল্লির আদালত। ওই মামলায় তাঁকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। পরে হাইকোর্টেও একই সাজা বহাল থাকে। প্রকৃত ঘটনা জানার পর সরকার গত ৬ জুলাই বাংলাদেশি নাগরিক বাদল ফরাজিকে ফেরত আনে। এরপর থেকে তিনি ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন।
আইন ও সালিশ কেন্দ্রের সাবেক নির্বাহী পরিচালক মানবাধিকারকর্মী নূর খান লিটন বলেন, নির্দোষ জানার পর একদিনও কোনো ব্যক্তিকে কারাগারে রাখা মানবাধিকার লঙ্ঘন। নামের মিল থাকার কারণে তিনি সাজা খাটছেন, যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এর চেয়ে ভারতে থাকলেই বাদল আরও আগে মুক্তি পেতেন।
আইনজীবী শাহদীন মালিক প্রথম আলোকে বলেন, সরকার তাঁকে মুক্ত করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারে। রাষ্ট্রপতি চাইলে তাঁকে বিশেষ ক্ষমা করতে পারবেন অথবা তাঁর সাজা কমানো বা মওকুফ করতে পারবেন। অথবা যেকোনো দিবসে সাধারণ ক্ষমা করা যেতে পারে।