ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বিতর্কিত ৯টি ধারা সংশোধনের দাবিতে সম্পাদক পরিষদের মানববন্ধন। ২০১৮ সালের ১৫ অক্টোবর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বিতর্কিত ৯টি ধারা সংশোধনের দাবিতে সম্পাদক পরিষদের মানববন্ধন। ২০১৮ সালের ১৫ অক্টোবর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন

কারও আপত্তিই আমলে নেওয়া হয়নি

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনটি তৈরির আগে এবং পরে কারও আপত্তিই আমলে নেয়নি সরকার। ২০১৮ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর জাতীয় সংসদে এ আইনের বিল পাস হয়। পরের মাসে (৮ অক্টোবর ২০১৮) রাষ্ট্রপতি বিলটিতে সই করেন। এর মাধ্যমে বহুল আলোচিত আইনটি কার্যকর হয়।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের খসড়া তৈরি, মন্ত্রিসভায় অনুমোদন, সংসদে বিল উত্থাপন ও রাষ্ট্রপতির সইয়ের আগে ও পরে সাংবাদিকদের বিভিন্ন সংগঠন, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সম্পাদক পরিষদ এবং দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংগঠন ও সংস্থা আপত্তি তুলেছিল। সরকারের পক্ষ থেকে কয়েকজন মন্ত্রী ও সংসদীয় কমিটির সদস্যরা বৈঠক করে আপত্তিগুলো শুনেছিলেন। কিন্তু শেষে দেখা যায়, দাবিগুলো উপেক্ষা করা হয়েছে।

শুধু পুলিশের একটি আপত্তি আমলে নেওয়া হয়। সেটি হলো, আইনের ৪৩ ধারায় তল্লাশি, জব্দ ও গ্রেপ্তারের ক্ষেত্রে সংসদীয় কমিটি ডিজিটাল নিরাপত্তা এজেন্সির মহাপরিচালকের অনুমোদন নেওয়ার বিধান যুক্ত করার সুপারিশ করেছিল। কিন্তু শেষ মুহূর্তে তড়িঘড়ি করে অনুমোদনের বিষয়টি বাদ দেওয়া হয়। ফলে পরোয়ানা ছাড়াই পুলিশ তল্লাশি, জব্দ ও গ্রেপ্তারের ক্ষমতা পায়।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন পাসের পর দুই বছর চার মাসের মতো পেরিয়েছে। প্রথম আলো গত বছর হওয়া ১৯৭টি মামলা বিশ্লেষণ করে দেখেছে, বেশির ভাগ মামলাই হয়েছে ‘কটূক্তি’, ‘মানহানিকর বক্তব্য’, ‘বিকৃত ছবি শেয়ার’, ‘গুজব ছড়ানো’ এবং ‘সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র’জাতীয় অভিযোগে। ৮০ শতাংশ ক্ষেত্রে মামলার বাদী পুলিশ ও ক্ষমতাসীন দলের নেতা–কর্মীরা।

বেসরকারি সংস্থা সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস) গতকাল শনিবার ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে একটি সমীক্ষার ফল প্রকাশ করে। এতে দেখা যায়, ২০২০ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এ আইনে ৭৮৩টি মামলা হয়েছে। এসব মামলার ৪০২টির তথ্য সংগ্রহ করে সিজিএস বলছে, অভিযুক্ত ব্যক্তিদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সাংবাদিকতা পেশার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নতুন করে আলোচনায় এসেছে কারাবন্দী লেখক ও উদ্যোক্তা মুশতাক আহমেদের মৃত্যুর পর। তিনি এ আইনে করা মামলায় প্রায় ১০ মাস ধরে কারাগারে ছিলেন। গত বৃহস্পতিবার তাঁর মৃত্যু হয়।

৫৭ ধারার বদলে ‘আরও কঠোর’ আইন
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনটি করা হয় তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি (আইসিটি) আইনের ৫৭ নম্বর ধারা নিয়ে প্রবল সমালোচনার মুখে। আইসিটি আইন প্রথম করা হয়েছিল ২০০৬ সালে। ৫৭ ধারাটি যুক্ত করা হয় ২০১৩ সালে। এ ধারায় মানহানি, কটূক্তি, রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি নষ্ট করাসহ একগুচ্ছ অভিযোগে ইলেকট্রনিক মাধ্যমে লেখালেখি সম্প্রচারের বিরুদ্ধে মামলার সংখ্যা বাড়তে থাকে।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মত, ৫৭ ধারা বাতিল চেয়ে যে আন্দোলন হয়েছিল, তার ফলশ্রুতিতে সরকার নতুন আরও কঠোর করে। আইসিটি আইনের ৫৭ ধারার নির্যাস নতুন আইনের বিভিন্ন ধারায় ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। সঙ্গে যুক্ত করা হয় তথ্য ও মতপ্রকাশে আরও কিছু কড়া বিষয়।

সংসদীয় কমিটিও আমলে নেয়নি
২০১৮ সালের ২৯ জানুয়ারি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের খসড়া অনুমোদন করে মন্ত্রিসভা। ৯ এপ্রিল বিলটি পরীক্ষার জন্য সংসদীয় কমিটিতে পাঠায় সংসদ।

সাংবাদিকদের তিনটি সংগঠন—সম্পাদক পরিষদ, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) ও অ্যাসোসিয়েশন অব টেলিভিশন চ্যানেল ওনার্সের (অ্যাটকো) প্রতিনিধিদের সঙ্গে বিলটি নিয়ে দুই দফা বৈঠক করে সংসদীয় কমিটি। প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনার আশ্বাসও দেওয়া হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বড় কোনো পরিবর্তন আনা হয়নি। যে ধারাগুলো নিয়ে বিভিন্ন পক্ষের আপত্তি ছিল, তার কয়েকটিতে কিছু জায়গায় ব্যাখ্যা স্পষ্ট করা, সাজার মেয়াদ কমানো এবং শব্দ ও ভাষাগত কিছু সংশোধনী আনা হয়।

সংসদীয় কমিটিতে আলোচনায় অংশ নেওয়া সম্পাদক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মাহ্‌ফুজ আনাম, অ্যাটকো সহসভাপতি মোজাম্মেল বাবু ও ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি মনজুরুল আহসান বুলবুল আইনটি পাসের পর (২২ সেপ্টেম্বর ২০১৮) একটি যৌথ বক্তব্য দেন। এতে তাঁরা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, সংসদীয় স্থায়ী কমিটি তাঁদের সঙ্গে প্রতিশ্রুত চূড়ান্ত বৈঠক না করেই সংসদে একতরফাভাবে সুপারিশ উপস্থাপন করেছে। এতে সাংবাদিক সমাজের মতামত যথাযথভাবে প্রতিফলিত হয়নি।

তিন মন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি
দৈনিক পত্রিকার সম্পাদকদের সংগঠন সম্পাদক পরিষদের আশঙ্কা ছিল, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন মতপ্রকাশের অধিকার ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ক্ষুণ্ন করবে। তারা বিভিন্নভাবে নিজেদের উদ্বেগের বিষয় ও যুক্তি তুলে ধরে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বিল সংসদে পাস হওয়ার ১০ দিন পর ২০১৮ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর সম্পাদক পরিষদ একটি ব্যাখ্যা গণমাধ্যমে তুলে ধরে। তাতে কী কী কারণে তাঁরা উদ্বেগ প্রকাশ করছেন এবং কোন কোন ধারা নিয়ে তাঁদের আপত্তি রয়েছে, তা বিস্তারিত তুলে ধরা হয়।

একই দিন (২৯ সেপ্টেম্বর) সম্পাদক পরিষদের মানববন্ধন কর্মসূচি ছিল। তার আগেই তখনকার তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু সম্পাদক পরিষদকে চিঠি দিয়ে কর্মসূচি স্থগিত করে আলোচনায় বসার অনুরোধ জানান। সম্পাদক পরিষদ কর্মসূচি স্থগিত করে। ৩০ সেপ্টেম্বর তথ্যমন্ত্রী, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার এবং প্রধানমন্ত্রীর তৎকালীন তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরীর সঙ্গে সম্পাদক পরিষদের বৈঠক হয়। তিন মন্ত্রীর পক্ষ থেকে তখন প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল, সম্পাদক পরিষদের উদ্বেগ মন্ত্রিসভার বৈঠকে তোলা হবে এবং আইনটি সংশোধনের লক্ষ্যে আরও আলোচনা হবে। কিন্তু পরের দুটি মন্ত্রিসভার বৈঠকে এ নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি।

২০১৮ সালের ৮ অক্টোবর ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বিলে রাষ্ট্রপতি সই করেন। তিন দিনের মাথায় সম্পাদক পরিষদ এক বিবৃতি দিয়ে জানায়, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বিষয়ে সম্পাদক পরিষদের উদ্বেগ মন্ত্রিসভার বৈঠকে উত্থাপনে সরকারের তিনজন মন্ত্রী যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তা পূরণ হয়নি। এ জন্য তাঁরা গভীর হতাশা ব্যক্ত করেন। সম্পাদক পরিষদ বিষয়টিকে আস্থা ও বিশ্বাসের লঙ্ঘন বলে উল্লেখ করে। এরপর ১৫ অক্টোবর (২০১৮) জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সম্পাদক পরিষদ মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে।

যদিও ওই দিন সচিবালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে সম্পাদক পরিষদের সঙ্গে আলোচনা বন্ধ হয়ে যায়নি। তথ্যমন্ত্রী আরও বলেন, সম্পাদক পরিষদকে বলা হয়েছিল, আইনে রাষ্ট্রপতি স্বাক্ষর করলেন কি করলেন না, তার সঙ্গে আলোচনার কোনো সম্পর্ক নেই। যেকোনো আইন পরিমার্জন করা যায়।

অবশ্য সম্পাদক পরিষদের সভাপতি ও দ্য ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহ্‌ফুজ আনাম গত রাতে প্রথম আলোকে বলেন, আইনটি হয়ে যাওয়ার পর সরকার আর কখনো আলোচনার জন্য সম্পাদক পরিষদকে ডাকেনি। তবে তথ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে বৈঠকে প্রাসঙ্গিকতা এলে তাঁদের পক্ষ থেকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে। তিনি বলেন, এমনিতেই আইনটি কঠিন। এ আইনের অধীনে ২০টি ক্ষেত্রে সাজা হতে পারে। এর মধ্যে ১৪টি জামিনযোগ্য নয়। আইনে অনেক অস্পষ্টতাও রয়েছে। এর ওপর যখন অপপ্রয়োগ হয়, তখন এটি কঠিন থেকে কঠিনতর হয়ে যায়। সেটাই এখন হচ্ছে।

নতুন করে সম্পাদক পরিষদের পক্ষ থেকে আইনটি সংশোধনের জন্য দাবি তোলা হবে কি না, জানতে চাইলে মাহ্‌ফুজ আনাম বলেন, ‘আমরা নিজেদের মধ্যে আলোচনার উদ্যোগ নিচ্ছি।’

বিভিন্ন সংগঠনের আপত্তিও উপেক্ষা
২০১৮ সালে আইনটি সংসদে পাস হওয়ার পর বিভিন্ন সংগঠন ও সংস্থা বিবৃতি দিয়ে বিলটিতে সই না করার জন্য রাষ্ট্রপতিকে অনুরোধ জানায়। বিবৃতিদাতা ও বিভিন্নভাবে উদ্বেগ জানানো সংগঠনের মধ্যে ছিল অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, আর্টিকেল–১৯, কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্ট (সিপিজে), ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি), সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন), বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নসহ সাংবাদিকদের ১২টি সংগঠন। রাষ্ট্রপতি বিলটিতে সই করার পর আইনটি পর্যালোচনার আহ্বান জানিয়েছিল জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদও।

লেখক মুশতাক আহমেদের মৃত্যুর পর ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে বিভিন্ন সংগঠন বিবৃতি দিচ্ছে। গত শুক্রবার ১৩ দেশের কূটনীতিকেরা এক বিবৃতিতে বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ধারাগুলো ও এর প্রয়োগ নিয়ে ওইসিডিভুক্ত (ধনী দেশগুলোর সংগঠন) দেশগুলোর সরকারের ভীষণ উদ্বেগ রয়েছে। গতকাল টিআইবি এক বিবৃতিতে বলেছে, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন যে বিরোধী মত ও সমালোচকদের কণ্ঠরোধ করতেই কার্যত ব্যবহৃত হচ্ছে, তা বলাটা অত্যুক্তি হবে না।

যে কারণে উদ্বিগ্ন সম্পাদক পরিষদ
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে কেন উদ্বিগ্ন, তা সম্পাদক পরিষদ বিশদভাবে ব্যাখ্যা করেছিল। এ ব্যাখ্যা ২০১৮ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়, যার শিরোনাম ছিল ‘কেন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বিরোধিতা করছি’। এতে আইনটির ৯টি ধারা (৮, ২১, ২৫, ২৮, ২৯, ৩১, ৩২, ৪৩ ও ৫৩) নিয়ে সম্পাদক পরিষদ তাদের উদ্বেগ তুলে ধরেছিল। ধারাগুলো বিশ্লেষণ করে সম্পাদক পরিষদ যেসব মৌলিক ত্রুটি চিহ্নিত করেছিল, সেগুলো হচ্ছে:

১. ডিজিটাল যন্ত্রের মাধ্যমে অপরাধ সংঘটন প্রতিহত করা এবং ডিজিটাল অঙ্গনে নিরাপত্তা বিধানের লক্ষ্যে একটি আইন প্রণয়নের চেষ্টা করতে গিয়ে এমন একটি আইন করা হয়েছে, যা সংবাদমাধ্যমের কর্মকাণ্ডের ওপর নজরদারি, বিষয়বস্তুর ওপর নিয়ন্ত্রণ এবং আমাদের সংবিধানপ্রদত্ত সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা এবং নাগরিকদের বাক্‌ ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিয়ন্ত্রণের সুযোগ সৃষ্টি করবে।

২. এই আইন পুলিশকে বাসাবাড়িতে প্রবেশ, অফিসে তল্লাশি, লোকজনের দেহ তল্লাশি এবং কম্পিউটার, কম্পিউটার নেটওয়ার্ক, সার্ভার ও ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম-সংক্রান্ত সবকিছু জব্দ করার ক্ষেত্রে সীমাহীন ক্ষমতা দিয়েছে। পুলিশ এ আইনে দেওয়া ক্ষমতাবলে পরোয়ানা ছাড়াই সন্দেহবশত যেকোনো ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করতে পারবে। এ ক্ষেত্রে পুলিশের কোনো কর্তৃপক্ষের কোনো ধরনের অনুমোদন নেওয়ার প্রয়োজন নেই।

৩. এই আইনে অস্পষ্টতা আছে এবং এতে এমন অনেক শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে, যার ভুল ব্যাখ্যা হতে পারে এবং সহজেই সংবাদমাধ্যমের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা যেতে পারে।

৪. ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন এমন এক আতঙ্ক ও ভীতির পরিবেশ তৈরি করবে, যেখানে সাংবাদিকতা, বিশেষত অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা কার্যত অসম্ভব হয়ে পড়বে।

৫. এই আইন সংবাদমাধ্যমের কর্মী ছাড়াও কম্পিউটার ও কম্পিউটার নেটওয়ার্ক ইত্যাদি ব্যবহারকারী সব ব্যক্তির মধ্যে ভীতি সৃষ্টি করবে।

সম্পাদক পরিষদের দৃষ্টিতে উদ্বেগের আরেকটি বিষয় হলো, এ আইনের অপরাধ ও শাস্তিসংক্রান্ত প্রায় ২০টি ধারার মধ্যে ১৪টি জামিন অযোগ্য, ৫টি জামিনযোগ্য এবং একটি সমঝোতাসাপেক্ষ। এর ফলে অনিবার্যভাবে একটা ভীতির পরিবেশ সৃষ্টি হবে, যেখানে সাংবাদিকতার স্বাভাবিক অনুশীলন অসম্ভব না হলেও হয়ে উঠবে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ।

সম্পাদক পরিষদের ব্যাখ্যায় ১৯৫৬ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি গণপরিষদে সংবিধান প্রণয়ন-সম্পর্কিত এক বিতর্কে স্পিকারের উদ্দেশে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বক্তব্য তুলে ধরা হয়। বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘এটা পরিষ্কারভাবে লিপিবদ্ধ থাকতে হবে যে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা থাকবে, তাঁরা তাঁদের ইচ্ছামতো বক্তব্য লিপিবদ্ধ করতে পারবেন এবং জনমত গড়ে তুলতে পারবেন।’