ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭-এর বিচারক মোছা. কামরুন্নাহার আদালতে আসলেও এজলাসে বসেননি। ওই ট্রাইব্যুনালে আজ রোববার বিচারকাজও অনুষ্ঠিত হয়নি। প্রথম আলোকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন ওই ট্রাইব্যুনালের স্পেশাল পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ফারহানা আহমেদ অরেঞ্জ।
পিপি ফারহানা আহমেদ জানান, বিচারক সকাল সাড়ে ৮টার সময় আদালতে আসেন। এরপর তিনি কখন খাস কামরা থেকে চলে গেছেন তা জানেন না। আজ কোনো মামলার শুনানি অনুষ্ঠিত হয়নি।
রোববার সকালে বিচারক মোছা. কামরুন্নাহার আদালতে না বসার নির্দেশ দেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন । রোববার সকাল ৯টা ৩০ মিনিট থেকে মোছা. কামরুন্নাহারকে আদালতে না বসার নির্দেশ দেওয়া হয়। সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ বিচারপতিদের সঙ্গে আলোচনাক্রমে প্রধান বিচারপতি এ নির্দেশ দেন।
সুপ্রিম কোর্টের মুখপাত্র মোহাম্মদ সাইফুর রহমান এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানান।
একই সঙ্গে মোছা. কামরুন্নাহারের বিচারিক ক্ষমতা সাময়িকভাবে প্রত্যাহার করে তাঁকে বর্তমান কর্মস্থল থেকে প্রত্যাহারের প্রস্তাব করা হয়েছে। এ জন্য আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগে তাঁকে সংযুক্ত করতে সুপ্রিম কোর্ট থেকে মন্ত্রণালয়ে পত্র পাঠানো হয়।
ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭-এর বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন মোছা. কামরুন্নাহার। তিনি ১১ নভেম্বর চার বছর আগে রাজধানীর বনানীর রেইনট্রি হোটেলে ধর্ষণের অভিযোগে করা মামলার রায় ঘোষণা করেন। রায়ে পাঁচ আসামির সবাইকে খালাস দেওয়া হয়।
মোছা. কামরুন্নাহার রায় ঘোষণার সময় নির্দেশনা দেন, ধর্ষণের অভিযোগের ক্ষেত্রে ঘটনার ৭২ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলে পুলিশ যেন মামলা না নেয়।
বিচারকের এমন নির্দেশনা বা পর্যবেক্ষণ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন আইনজীবী ও মানবাধিকারকর্মীরা। প্রতিবাদ জানিয়েছে বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক ও নাগরিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা। আদালতের এ নির্দেশনা সংবিধান ও ন্যায়নীতির পরিপন্থী বলে উল্লেখ করেছেন তাঁরা। এমন প্রেক্ষাপটে গতকাল সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখে পড়েন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি প্রাঙ্গণে গতকাল শনিবার বিকেলে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, ‘একটি কথা অত্যন্ত পরিষ্কারভাবে বলতে চাই, আমি ওনার (বিচারক) রায়ের বিষয়বস্তু নিয়ে এখন কথা বলতে চাই না ।
কিন্তু ওনার (বিচারক) অবজারভেশনে ৭২ ঘণ্টা পর পুলিশ যেন কোনো ধর্ষণ মামলার এজাহার না নেয়, এই যে বক্তব্য উনি দিয়েছেন, এটি সম্পূর্ণ বেআইনি ও অসাংবিধানিক। এ কারণে আমি প্রধান বিচারপতির কাছে বিচারক হিসেবে তাঁর দায়িত্ব পালন নিয়ে যেন ব্যবস্থা নেওয়া হয়, সে জন্য একটা চিঠি লিখছি।’