ভরদুপুর। সড়কের পাশের নির্জন জায়গা। সেখান থেকে ভেসে আসছিল নবজাতকের কান্নার শব্দ। স্থানীয় কয়েকজন বিষয়টি খেয়াল করেন। তাঁরা ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখতে পান, শুধু নবজাতকই নয়, পাশে তার জন্মদাত্রী মাও শুয়ে কাতরাচ্ছেন। কথা বলার চেষ্টার পর আর বুঝতে অসুবিধা হয়নি, ওই নারী মানসিক ভারসাম্যহীন। মঙ্গলবার কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর উপজেলার বলিয়ারদী ইউনিয়নের নোয়াহাটা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। পরে ওই মা ও নবজাতককে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
ছেলে নবজাতকটির ওজন আড়াই কেজি। মা ও নবজাতক কেমন আছেন, তা জানতে চাওয়া হয় উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা জালাল আহমেদের সঙ্গে। তিনি বলেন, শিশুটি সুস্থ আছে। এক-দুবার বুকের দুধ পান করেছে। পরে বিকল্প খাবার দেওয়া হচ্ছে। মায়ের শরীরে অপুষ্টি রয়েছে। শারীরিকভাবেও দুর্বল হয়ে পড়েছেন।
এলাকাবাসী ও উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, ভারসাম্যহীন ওই নারীর বয়স আনুমানিক ৩০ বছর। সোমবার বিকেলে প্রথমবারের মতো তাঁকে নোয়াহাটা গ্রাম এলাকায় দেখা যায়। নোয়াহাটা গ্রামে একটি মসজিদ রয়েছে। মসজিদের পেছনে সড়কের পাশের জায়গাটা কিছুটা নির্জন। মঙ্গলবার দুপুর পৌনে ১২টার দিকে আশপাশে ছিলেন কয়েকজন। তাঁরা হঠাৎ নবজাতকের কান্নার শব্দ শুনতে পান। নির্জন জায়গায় এমন ঘটনায় প্রথমে কিছুটা ভড়কে যান। পরে ঘটনাস্থলের দিকে এগিয়ে যান। তখন দেখতে পান, সড়কের পাশে নবজাতকের সঙ্গে শুয়ে আছেন এক নারী। বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর কিছুক্ষণের মধ্যেই সেখানে লোকজন জড়ো হন। তাঁরা ওই নারীর সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেন। কিন্তু কিছুই বলেন না তিনি। তখন আর বুঝতে বাকি থাকে না, ওই নারী মানসিক ভারসাম্যহীন।
এদিকে মানসিক ভারসাম্যহীন নারীর কাছে নবজাতক নিরাপদ নয়, এমনটি ভাবতে শুরু করেন এলাকাবাসী। তাঁদের মধ্যে একজন ওই নবজাতককে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন। কিন্তু যতই ভারসাম্যহীন হোক না কেন, মা তাঁর সন্তানকে হাতছাড়া করতে চাননি। নিজে অসুস্থ হলেও নবজাতককে বুক আগলে রাখেন তিনি। এ অবস্থায় বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও সমাজ সেবা কর্মকর্তার নজরে আনা হয়। পরে প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে মা ও নবজাতককে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়।
মঙ্গলবার রাতে বাজিতপুরের ইউএনও দীপ্তিময়ী জামান ওই হাসপাতালে যান। নারীর সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেন। সাড়া না দেওয়ায় কিছুই জানা সম্ভব হয়নি। পরে তিনি প্রয়োজনীয় পোশাক ও শিশু উপকরণ কিনে দিয়ে আসেন।
ইউএনও বলেন, ‘আমরা প্রথমে ওই নারীর নাম-পরিচয় শনাক্ত করার চেষ্টায় আছি। পরিচয় জানা গেলে দুজনকে নিজ ঠিকানায় পাঠানো যাবে। তা না হলে আইন অনুযায়ী পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করা হবে।’
মা-নবজাতকে নিয়ে পরবর্তী পরিকল্পনা জানতে কথা হয় সমাজসেবা কর্মকর্তা বাবুল মিয়ার সঙ্গে। তিনি জানালেন, পরিচয় বের করতে না পারলে ২০১৩ সালের শিশু আইন অনুযায়ী শিশুটিকে শিশু নিবাসে পাঠানোর চেষ্টা করা হবে। আর মাকে ভরঘুরে ও নিরাশ্রয় ব্যক্তি আইনে আশ্রয় কেন্দ্রে পাঠানোর পরিকল্পনা আছে।