কাঁঠালবাড়ি-শিমুলিয়া নৌপথ

কাটেনি নাব্যতা সংকট, ডুবোচরে আটকে যাচ্ছে ফেরি

পদ্মায় নাব্যতা সংকট থাকায় লৌহজং টার্নিং পয়েন্টে ডুবোচরে আটকা পড়ে ডাম্ব ফেরি টাপলো। আজ বিকেলে টাপলো ফেরিতে বসে তোলা। ছবি: প্রথম আলো
পদ্মায় নাব্যতা সংকট থাকায় লৌহজং টার্নিং পয়েন্টে ডুবোচরে আটকা পড়ে ডাম্ব ফেরি টাপলো। আজ বিকেলে টাপলো ফেরিতে বসে তোলা। ছবি: প্রথম আলো

মাদারীপুরের কাঁঠালবাড়ি ও মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়া নৌপথে দেখা দিয়েছে নাব্যতা সংকট। এর ফলে নৌপথের লৌহজং টার্নিং পয়েন্ট হয়ে চলা ফেরিগুলো আটকে যাচ্ছে ডুবোচরে। অন্যদিকে কয়েকটি ফেরি বিকল্প চ্যানেল ব্যবহার করে চলাচল করায় পদ্মায় তীব্র স্রোতের মুখে পড়ছে ফেরিগুলো। 

আজ শনিবার বিকেল ৫টার দিকে শিমুলিয়া থেকে ছেড়ে আসে টাপলো নামের ডাম্ব ফেরি। ফেরিটি নৌপথের লৌহজং টার্নিং পয়েন্টের দিকে এলে ১৫টি যানবাহন ও শতাধিক যাত্রী নিয়ে ডুবোচরে ধাক্কা লাগে। পরে কয়েক ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে ফেরিটি উদ্ধার করা হয়।

শিমুলিয়া থেকে ডাম্ব ফেরিতে ওঠা যাত্রী সঞ্জয় কর্মকার প্রথম আলোকে বলেন, দীর্ঘ সময় অপেক্ষায় থেকে বিকেল ৪টার দিকে ফেরিতে উঠেছি। পরে লৌহজং টার্নিং পয়েন্টে এসে ফেরিটি ডুবোচরে আটকে যায়। ফেরির চালক দীর্ঘ সময় চেষ্টা করে ডুবোচর থেকে উদ্ধার করে ফেরিটি। পরে সাড়ে ছয়টায় এসে ঘাটে পৌঁছাই। ফেরিগুলো এভাবে আটকে গেলে আমাদের চরম দুর্ভোগে পড়তে হয়।

টাপলো নামের ডাম্ব ফেরিটির মাস্টার কামাল হোসেন বলেন, ‘লৌহজং টার্নিং পয়েন্ট ঘুরতে গেলেই আটকে যাচ্ছে ফেরি। এতে দুর্ঘটনার ঝুঁকি থাকে। আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করি নিরাপদে পদ্মা পাড়ি দিতে। কিন্তু এভাবে ডুবোচরে ফেরি আটকে গেলে যেকোনো সময়ে ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা।
বর্তমানে এই নৌপথে চলাচলরত ১৯টি ফেরির মধ্যে স্বল্প যানবাহন নিয়ে চলাচল করছে ১২টি। চাহিদা অনুসারে ফেরি না চলায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা ফেরিঘাটে আটকা পড়ে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন এই নৌপথে চলাচলরত যাত্রী ও চালকেরা।
বিআইডব্লিউটিসি কাঁঠালবাড়ি ঘাটের ব্যবস্থাপক মো. সালাম হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘নাব্যতা সংকট থাকায় সব ফেরি চালানো সম্ভব হচ্ছে না। আমাদের ১৯টি ফেরির মধ্যে ১২টি ফেরি স্বল্প যানবাহন নিয়ে চলাচল করছে। তবে আশা করছি দুই-তিন দিনের মধ্যে সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে।’
বিআইডব্লিউটিসি কাঁঠালবাড়ি ঘাট সূত্র জানায়, ফেরি চলাচল ব্যাহত হওয়ায় কাঁঠালবাড়ি ঘাটে পণ্যবাহী ট্রাকসহ আটক পড়েছে ৩ শতাধিক যানবাহন। তবে, ফেরিতে যাত্রীবাহী বাস, অ্যাম্বুলেন্স ও পচনশীল দ্রব্যের যানবাহনকে অগ্রাধিকার দিকে পার করা হচ্ছে। ফেরি চলাচল ব্যাহত হওয়ায় যাত্রীদের চাপ বেড়েছে লঞ্চ ও স্পিডবোটে। এদিকে নদীতে নাব্যতা সংকট দূর করতে ড্রেজিং কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

আজ চারটার দিকে কাঁঠালবাড়ি ঘাটে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ঘাটের ৪ নম্বর ঘাটে একটি ডাম্ব ও একটি কে-টাইপের ফেরি নোঙর করে রাখা। ঘাটের তিনটি পয়েন্টে কোনো ফেরিতেই যানবাহন উঠতে দেখা যায়নি। তবে, ১ নম্বর ঘাটে ছোট (ভিআইপি) ফেরি অল্প কিছু যানবাহন নিয়ে শিমুলিয়া যাচ্ছে। ঘাটের চারটি সংযোগ সড়কেই ছোট-বড় যানবাহনের ছিল দীর্ঘ সারি।
ঢাকাগামী একটি যাত্রীবাহী বাসের চালক রোকন শেখ বললেন, ‘খুলনা থেকে বেলা সাড়ে ১১টায় ঘাটে এসেছি। ফেরির কোনো দেখা পাইনি। যাও দু-একটা আসে তাতে যাওয়ার সৌভাগ্য হয়নি। কী করব বুঝতে পারছি না। যাত্রীরা এত সময় ঘাটে আটকা পড়ায় বারবার উত্তেজিত হয়ে উঠছে।’
চট্টগ্রামগামী ট্রাকের চালক কামাল বলেন, ‘ঘাটে এসেছি আজ পাঁচ দিন। দুই দিন হলো সিরিয়ালে বসে আছি। কখন ফেরিতে উঠতে পারব, তা কেউ ঠিক করে বলছে না।’
কাঁঠালবাড়ি ঘাটের ট্রাফিক পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) কুশল কুমার সাহা প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঘাটের অবস্থা পরিবর্তন হয়নি। ফেরি আগের চেয়ে বেশি চললেও সব যানবাহন পারাপার করা সম্ভব নয়। ফেরি চলাচল ব্যাহত থাকায় টার্মিনাল ও ঘাটের সংযোগ সড়কে যানবাহনের চাপ রয়েছে।’