মহামারি করোনা জয় করার জন্য মনে সাহস রাখা ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, করোনা শুনলেই মৃত্যু ভয় পেয়ে বসে। কোনো মৃত্যুই কাম্য নয়। তবে আমাদের দেশে করোনায় মৃত্যুর হার কম, সুস্থতার হার অনেক বেশি। করোনার ভয়ে আতঙ্কিত হব কেন? ভয়কে জয় করতে হবে। মরার আগে মরব কেন?
আজ বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদের বাজেট অধিবেশনের সমাপনী বক্তব্যে সংসদ নেতা শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন।
করোনার বিস্তার সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রত্যেকটি জায়গায় আঘাত করার করোনার নিজস্ব একটা পদ্ধতি আছে। প্রথমে হয়তো একজন, তারপর দুজন। তারপর দেখা গেল ১০ জন। এভাবে কিন্তু বাড়তে থাকে। তিনি বলেন, সিঙ্গাপুরের একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান থেকে বাংলাদেশ সম্পর্কে যে কথাটি বলা হয়েছিল, সেটায় দেখা গেছে যে মে মাসের পর থেকে আস্তে আস্তে এটা বাড়বে। জুন-জুলাই মাস পর্যন্ত বাড়তে থাকবে। তারপর এক সময় এটা হয়তো কমতে থাকবে।
করোনায় মানুষের কথা সরকার বেশি ভেবেছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এমন একটা ভাইরাস যা চোখেও দেখা যায় না, একটা অদৃশ্য শক্তি। অথচ এর জন্য সারা বিশ্ব আজ আতঙ্কগ্রস্ত। এই অবস্থার মধ্যে চলতে গিয়ে আমাদের দেশের মানুষ করোনাভাইরাসে যেন নিঃস্ব হয়ে না যায়, কষ্ট না পায়।
বাজেট সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকার বাজেট দিয়েছি। উন্নয়ন বাজেট আমরা দিয়েছি ২ লাখ পাঁচ হাজার ১৪৫ কোটি টাকার। করোনার কারণে সবটুকু আমরা অর্জন করতে পারব কি না অনেকেই সেই প্রশ্ন তুলেছেন। বাজেট বক্তৃতায় এটা নিয়ে বিস্তারিত বলতে চাই না। এটা বলব, আমরা আশাবাদী।’
করোনা পরিস্থিতি ও বাজেট নিয়ে সমালোচনার জবাব দিতে গিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, এনজিও এবং অন্য রাজনীতিক দল সমালোচনা করছে। ঘরে বসে বাজেটের সমালোচনা করতে পারেন। সরকারের কাজের খুঁত ধরা যায়। তবে মাঠে কিন্তু আমরাই আছি। বঙ্গবন্ধুর গড়া আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতারাই আছেন। মাঠে অন্যদের দেখা যায় না।
শেখ হাসিনা বলেন, সারা বিশ্বে করোনাভাইরাসের কারণে এক অস্বাভাবিক পরিস্থিতির মধ্যে এই সংসদ চলেছে । মানুষ আতঙ্কগ্রস্ত এবং করোনার কারণে সব জায়গায় অর্থনীতির চাকা বন্ধ। যোগাযোগ বন্ধ। মানুষের স্বাধীন জীবন যেন একটি অদৃশ্য শক্তির কারণে স্থবির হয়ে গেছে। এই ধরনের অবস্থা কিন্তু অতীতে কখনো দেখা যায়নি। ঠিক সেই অবস্থার মধ্যে দেশের মানুষের জীবনমান রক্ষার জন্য পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার।
কারও নাম উল্লেখ না করে রিজেন্ট হাসপাতালের বিরুদ্ধে নেওয়া ব্যবস্থার ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজকে যে খবর হলো— যে খবর আপনারা পাচ্ছেন, কে করেছে? কে ধরেছে তাদের? আমরা যাকেই পাচ্ছি তাকেই ধরছি। আমরাই ধরি আবার আমাদের দোষারোপ করা হয়।’
দুর্নীতির শেকড় গভীরে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৭৫ সালের পর সামরিক স্বৈরশাসকেরা অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে তা কুক্ষিগত করার জন্য মানুষকে দুর্নীতি শিখিয়েছে। সমাজকে কলুষিত করে গেছে। মানুষ যে আদর্শ ও নীতি নিয়ে চলত, তা হারিয়ে যায়। তারা যে দুর্নীতির বীজ বপন করে গেছে, এখন তা মহীরূহ হয়ে গেছে। আপনি যেখানেই কাটেন আবার গজিয়ে ওঠে, এর মূলোৎপাটন করা যথেষ্ট কঠিন।