করোনা চিকিৎসা-সংশ্লিষ্টদের বদলি স্থগিত

আরটিপিসিআর ল্যাবসহ অন্যান্য ল্যাব কার্যক্রমের সঙ্গে সম্পৃক্ত চিকিৎসক, কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালের চিকিৎসার সঙ্গে সম্পৃক্ত চিকিৎসক এবং মেডিকেল কলেজের বিভিন্ন বিভাগের একমাত্র চিকিৎসক যিনি শিক্ষা কার্যক্রমের সঙ্গে সম্পৃক্ত চিকিৎসকদেরও পদায়ন করা হয়ে থাকতে পারে। চিকিৎসকদের বর্তমান কর্মস্থলের বিষয়ে তথ্যগত ভুল থাকার কারণে কোনো কোনো ক্ষেত্রে আদেশ ত্রুটিপূর্ণ হয়ে থাকতে পারে। এসব কারণে আদেশ বাস্তবায়নে জটিলতা থাকলে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকদের বিষয়ে বাস্তবায়ন কার্যক্রম স্থগিত থাকবে।

ফাইল ছবি

করোনাভাইরাস মহামারি মোকাবিলায় একযোগে এক হাজার ২৫১ জন চিকিৎসককে বিভিন্ন হাসপাতাল ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সংযুক্তি দিয়ে পদায়নের আদেশ জারি করেছিল স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ। সেখানে মারা যাওয়া দুই চিকিৎসককে যেমন পদায়ন করা হয়েছিল, তেমনি অবসরে যাওয়া এবং চাকরি ছেড়ে দেওয়া চিকিৎসকের নামও ছিল তালিকায়। এ ছাড়া আরটিপিসিআর ল্যাবের দায়িত্বে থাকা চিকিৎসকদের অন্যত্র পদায়নসহ  আরও কিছু অসংগতি রয়েছে এই পদায়নের তালিকায়।
এ নিয়ে সমালোচনার মুখে আজ মঙ্গলবার রাতে মৃত ও অবসরে যাওয়া চিকিৎসকদের নাম বাদ দিয়ে সংশোধিত তালিকা প্রকাশ করে  স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ। এ ছাড়া পৃথক এক আদেশে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ জানিয়েছে, আরটিপিসিআর ল্যাবসহ অন্যান্য ল্যাব কার্যক্রমের সঙ্গে সম্পৃক্ত চিকিৎসক, কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালের চিকিৎসার সঙ্গে সম্পৃক্ত চিকিৎসক এবং মেডিকেল কলেজের বিভিন্ন বিভাগের একমাত্র চিকিৎসক যিনি শিক্ষা কার্যক্রমের সঙ্গে সম্পৃক্ত চিকিৎসকদেরও পদায়ন করা হয়ে থাকতে পারে। চিকিৎসকদের বর্তমান কর্মস্থলের বিষয়ে তথ্যগত ভুল থাকার কারণে কোনো কোনো ক্ষেত্রে আদেশ ত্রুটিপূর্ণ হয়ে থাকতে পারে। এসব কারণে আদেশ বাস্তবায়নে জটিলতা থাকলে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকদের বিষয়ে বাস্তবায়ন কার্যক্রম স্থগিত থাকবে। একই সঙ্গে আগামীকাল বুধবারের মধ্যে সুস্পষ্ট কারণ উল্লেখ করে তাঁদের তালিকা পাঠাতে সব মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করেছে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ।

রাতে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব লোকমান হোসেন মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, প্রশাসনিক আদেশে উনিশ-বিশ হতে পারে। সেগুলো সংশোধন করা হবে।
দেশে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ পরিস্থিতি এখন ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। ঢাকার বাইরের পরিস্থিতিও উদ্বেগজনক। চিকিৎসা সেবা নিয়ে হিমশিম খাচ্ছে স্থানীয় প্রশাসন। এমন পরিস্থিতিতে গত রোববার ও সোমবার পৃথক প্রজ্ঞাপনে মেডিকেলে কলেজের এক হাজার ২৫১ জন চিকিৎসককে বিভিন্ন হাসপাতালে করোনা চিকিৎসার জন্য দায়িত্ব দিয়ে আদেশ জারি করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এই আদেশ বলবৎ থাকবে।

এই বদলির আদেশে স্বাস্থ্য মন্ত্রণায়ের অদক্ষতা ও অব্যবস্থাপনার চিত্র ফুটে উঠেছে। এই বদলির কারণে করোনা পরীক্ষা, করোনা চিকিৎসা ও অন্যান্য চিকিৎসা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
ইকবাল আর্সলান, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) সভাপতি

মোট পাঁচটি বিভাগে এসব চিকিৎসকে সংযুক্তি দিয়ে পদায়ন করা হয়। এই চিকিৎসকেরা আগের কর্মস্থল (মূল কর্মস্থল) থেকে বেতন-ভাতা তুলবেন। পদায়ন হওয়া চিকিৎসকদের প্রায় সবাই মেডিকেল কলেজ ও ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজিতে কর্মরত ছিলেন। তাঁদের বিভিন্ন হাসপাতালে বা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পদায়ন করা হয়েছে।


স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, বিদ্যমান সংকট মোকাবিলার জন্য মেডিকেল কলেজে কর্মরত এসব চিকিৎসককে হাসপাতালগুলোতে সংযুক্ত করা হয়েছে। এটি বদলি নয়। সংকট কেটে গেলে তাঁরা আবার আগের কর্মস্থলে ফিরে আসবেন।
এদিকে পদায়নের তালিকায় মৃত চিকিৎসক ফেরদৌস আরা শেখের নাম রয়েছে। রংপুর মেডিকেল কলেজ থেকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পদায়ন করা হয়েছে তাঁকে। তিনি গত ২৬ ফেব্রুয়ারি মারা গেছেন।

বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ থেকে ৫৪ চিকিৎসককে পদায়ন করা হয়। এই তালিকায় চলতি বছরের জানুয়ারিতে করোনায় মারা যাওয়া চিকিৎসক জীবেশ কুমার প্রামাণিকের নামও ছিল। অবশ্য পরে পৃথক আদেশ মৃত এই দুই চিকিৎসকের নাম তালিকা থেকে বাদ দিয়ে সংশোধিত আদেশ জারি করে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ।
রংপুর মেডিকেল কলেজ থেকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পদায়ন করা মমতাজ বেগম চার মাস আগে অবসরে যান। পরে তাঁর নামটি বাদ দিয়ে সংশোধিত আদেশ জারি করা হয়।

অন্যদিকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের ছয়জন শিক্ষককে বিভিন্ন জায়গায় সংযুক্তিতে পাঠানো হয়েছে। এই ছয়জনের মধ্যে আরটিপিসিআর তত্ত্বাবধান কমিটির আহ্বায়ক মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের প্রধান আবুল কালামকে বিআইটিআইডিতে, সদস্যসচিব আরিফুর রহমানকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও সদস্য সাবরিনা শারমিনকে ফেনীর দাগনভূঞা পদায়ন করা হয়। একই বিভাগের আ ন ম সাইফুল করিমকে বিআইটিআইডিতে, জাহানারা রোজীকে চমেক কোভিড বিভাগে এবং আফরিন সুলতানাকে খাগড়াছড়িতে পদায়ন করা হয়।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, বিদ্যমান সংকট মোকাবিলার জন্য মেডিকেল কলেজে কর্মরত এসব চিকিৎসককে হাসপাতালগুলোতে সংযুক্ত করা হয়েছে। এটি বদলি নয়। সংকট কেটে গেলে তাঁরা আবার আগের কর্মস্থলে ফিরে আসবেন।

আওয়ামী লীগ পন্থী চিকিৎসকদের সংগঠন স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) সভাপতি অধ্যাপক ইকবাল আর্সলান প্রথম আলোকে বলেন, ‘এই বদলির আদেশে স্বাস্থ্য মন্ত্রণায়ের অদক্ষতা ও অব্যবস্থাপনার চিত্র ফুটে উঠেছে। এই বদলির কারণে করোনা পরীক্ষা, করোনা চিকিৎসা ও অন্যান্য চিকিৎসা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’