কোভিড-১৯ চিকিৎসার নামে প্রতারণা ও অনিয়মের খবর প্রকাশ হওয়ায় বিদেশে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। বিশেষ করে লাইসেন্সবিহীন রিজেন্ট হাসপাতাল ও জেকেজি হেলথ কেয়ারের করোনা পরীক্ষার নামে জালিয়াতির বিষয়ে খোঁজ নিচ্ছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, কোভিড–১৯ চিকিৎসার মতো স্পর্শকাতর বিষয়ে প্রতারণার খবরে বিদেশে প্রবাসী বাংলাদেশিরা নানা বিড়ম্বনায় পড়ছেন। কোনো কোনো ক্ষেত্রে তাঁদের হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। বিতর্কিত এ দুই প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রমে সরকার বিব্রত। এ বিষয়ে কী কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, তা বাংলাদেশি অধ্যুষিত বিভিন্ন দেশের সরকারকে জানানোর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।
করোনা পরীক্ষা নিয়ে বেসরকারি দুই প্রতিষ্ঠানের জালিয়াতি এবং এ জন্য প্রবাসীদের দুর্দশার কথা জানিয়ে পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব, স্বাস্থ্যসেবাসচিব, প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানসচিবকে চিঠি পাঠিয়েছেন। চিঠিতে বলা হয়েছে, প্রবাসী বাংলাদেশিদের অনেকেই কোভিড–১৯ দুর্যোগের আগে আগে দেশে এসেছিলেন। তাঁদের অনেকেই প্রবাসে ফিরে যেতে আগ্রহী। বিশ্বের অধিকাংশ দেশে প্রবেশের জন্য কোভিড–১৯ সনদ (নেগেটিভ) উপস্থাপন করা বাধ্যতামূলক। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক বিষয় হলো বেসরকারি দুটি প্রতিষ্ঠানের কোভিড–১৯ পরীক্ষায় জালিয়াতির খবর বিদেশি গণমাধ্যমে ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয়েছে। এর ফলে বাংলাদেশ থেকে প্রবাসে ফেরার সময় বাংলাদেশিরা বাড়তি পরীক্ষার মুখোমুখি হচ্ছেন। কোনো কোনো ক্ষেত্রে হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ সরকার কী কী পদক্ষেপ নিয়েছে, তা বিভিন্ন দেশের সরকারকে জানানো প্রয়োজন।
জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘ইতালিতে যাঁরা গেছেন, তাঁরা ভুয়া সনদ নিয়ে যাননি। তবে বাংলাদেশের দুটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের জালিয়াতির ঘটনা ও ইতালিতে যাওয়া প্রবাসীদের ঘটনা একই দিনে। এটা আমাদের কিছুটা বিব্রত করেছে। এ কারণে আমরা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে বলেছি কিছু সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল নির্দিষ্ট করে দিতে। এ ছাড়া আইইডিসিআর দেখবে সনদ সঠিক আছে কি না। এমনভাবে এ সনদ দেওয়া হবে, যাতে তা অনলাইনে থাকে। যেকোনো দেশ অনলাইনে তা চেক করে নিতে পারবে।’
>রিজেন্ট হাসপাতাল ও জেকেজির প্রতারণার খবর বিদেশি গণমাধ্যমে
সরকার বিব্রত।
কোভিড–১৯ সনদ কে দেবে সিদ্ধান্ত হয়নি
স্বাস্থ্য ও প্রবাসী মন্ত্রণালয় পরস্পরের ওপর দায় চাপাচ্ছে
কোভিড–১৯ চিকিৎসার মতো স্পর্শকাতর বিষয়ে প্রতারণার খবরে প্রবাসী বাংলাদেশিরা নানা বিড়ম্বনায় পড়ছেন
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইতালির বিমানবন্দরের ঘটনা উল্লেখ করে বলেন, সেখানে ২৭৬ জন গিয়েছিলেন। আর সনদ নিয়ে গিয়েছিলেন ৩৩ জন। তাঁরা সরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে স্বেচ্ছায় সনদ নিয়ে গিয়েছিলেন। সে সময় ইতালি সরকার নিষেধাজ্ঞাও জারি করেনি। সে দেশের সরকার জ্বর মেপে ২০ শতাংশ যাত্রীকে ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিনে পাঠিয়েছিল একটি হোটেলে। তাঁরা কোয়ারেন্টিন না করে ঘুরে বেড়িয়েছেন, আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে দেখা করেছেন। কেউ কেউ কাজেও গেছেন। সেখান থেকে ইতালির কিছু লোক সংক্রমিত হন। এ খবর ইতালির পত্রিকায় ছাপা হলে সেখানকার মানুষ খেপে যায়। এরপর ওই দেশের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় প্রথম এক সপ্তাহের জন্য ইতালি যাওয়া স্থগিত করে। পরে কাতার ওয়েজের দুটি ফ্লাইটে বাংলাদেশিরা গেলে তাঁদের ফেরত পাঠানো হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রবাসীদের পাঠায় প্রবাসী মন্ত্রণালয়। করোনা ছাড়াও তাদের অন্য পরীক্ষার সনদও দিতে হয়। তাই এ বিষয়ে তাদেরই উদ্যোগ নিতে হবে। তবে আমরা কিছু প্রতিষ্ঠান ঠিক করে দেব। কিন্তু সেখান থেকে সনদ নেওয়ার বা দেওয়ার দায়দায়িত্ব আমরা নেব না।’
যে করেই হোক দেশের ভাবমূর্তি ফেরাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলছে সবাই। কিন্তু কোন মন্ত্রণালয় প্রবাসীদের করোনা সনদ দেবে এবং এ বিষয়ে তদারক করবে, সে সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না মন্ত্রণালয়গুলো। পররাষ্ট্র, প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় বলছে, যেহেতু বিষয়টি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট, তারা পরীক্ষা করে সনদ দেবে। তবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, এটা তাদের কাজ নয়। তারা কিছু হাসপাতালের নাম নির্দিষ্ট করে দেবে। এসব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সমন্বয় বা তদারক করতে হবে প্রবাসী মন্ত্রণালয়কে। কেননা কাজটি প্রবাসীদের নিয়ে।
প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানসচিব আহমেদ মুনিরুছ সালেহীন প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশ থেকে যাঁরা যাবেন, তাঁদের কোভিড–১৯ নেগেটিভ সনদ নিতে হবে। এখানে মূল ভূমিকা পালন করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। তারাই করোনা পরীক্ষার জন্য হাসপাতাল নির্বাচন করে দেবে।