কোভিড-১৯ আক্রান্তদের চিকিৎসায় রাজধানীতে আরও তিনটি বেসরকারি হাসপাতাল যুক্ত হচ্ছে। এ ছাড়া করোনা রোগীদের জন্য নির্ধারিত যেসব হাসপাতালে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ) ছিল না, সেগুলোতে আইসিইউ সুবিধা যুক্ত করার কাজও প্রায় শেষ।
দেশে গতকাল শনিবার পর্যন্ত কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়েছেন ১৩ হাজার ৭৭০ জন। তাঁদের মধ্যে ঢাকা মহানগরে ৬ হাজার ৪২৩ জন। রোগী বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তাঁদের চিকিৎসার জন্য রাজধানীতে হাসপাতাল ও শয্যাও বাড়াচ্ছে সরকার।
এর আগে রাজধানীতে করোনা রোগীদের জন্য সরকার ১০টি হাসপাতাল নির্ধারণ করেছিল। এর মধ্যে তিনটি বেসরকারি হাসপাতাল। এ ছাড়া ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের একটি অংশেও করোনায় আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
সর্বশেষ যুক্ত হওয়া তিনটি বেসরকারি হাসপাতাল হলো হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ইমপালস হাসপাতাল ও আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। এই তিনটিতে করোনা রোগীদের জন্য মোট শয্যা আছে ৮৫০।
গত ২৫ এপ্রিল স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের এক চিঠিতে জানানো হয়, হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালকে শুধু কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসার জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এ জন্য চিকিৎসা ব্যয়ও সরকার বহন করবে।
হলি ফ্যামিলি হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ মুর্শেদ প্রথম আলোকে বলেন, করোনায় আক্রান্তদের চিকিৎসার জন্য ৪০০ শয্যা প্রস্তুত করা হয়েছে। হাসপাতালে ১০টি আইসিইউ রয়েছে। হাই ডিপেন্ডেন্সি ইউনিটের (এইচডিইউ) ছয়টি শয্যাও ভেন্টিলেশনে ব্যবহার করা যাবে। আগামী সপ্তাহে হাসপাতালে করোনা রোগী ভর্তি শুরু হবে।
আগামী সপ্তাহে ধানমন্ডির আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেও করোনা রোগীদের চিকিৎসা কার্যক্রম শুরু হবে। এ জন্য ২০০ শয্যা প্রস্তুত করা হয়েছে বলে জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ১০টি আইসিইউ শয্যা থাকবে।
গত শুক্রবার পর্যন্ত সারা দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত পুলিশ সদস্যের সংখ্যা ১ হাজার ৪২৯। এর অর্ধেকই ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সদস্য। পুলিশ সদস্যদের চিকিৎসার জন্য তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল এলাকায় অবস্থিত বেসরকারি ইমপালস হাসপাতাল ভাড়া নিয়েছে সরকার। এই হাসপাতালের শয্যাসংখ্যা ২৫০।
পুলিশ সদর দপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি, গণমাধ্যম ও জনসংযোগ) সোহেল রানা প্রথম আলোকে বলেন, রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালের ওপর চাপ কমাতে ইমপালস হাসপাতাল প্রাইভেট লিমিটেড প্রাথমিকভাবে আড়াই মাসের জন্য ভাড়া নেওয়া হয়েছে। শিগগিরই ইমপালস হাসপাতালে পুলিশ সদস্যদের চিকিৎসা দেওয়া শুরু হবে।
চালু হচ্ছে বসুন্ধরা আইসোলেশন সেন্টার
করোনা রোগীদের চিকিৎসায় ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় (আইসিসিবি) অস্থায়ী হাসপাতালের জন্য পরিচালক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। হাসপাতাল চালুর জন্য চিকিৎসক, নার্স নিয়োগ হয়েছে। অন্যান্য জনবল নিয়োগের কাজ প্রক্রিয়াধীন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল শাখা) আমিনুল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, বসুন্ধরায় আইসোলেশন সেন্টারের অবকাঠামোর কাজ শেষ হয়েছে। এই সপ্তাহে এটি চালু হবে। ২ হাজার ১৩ শয্যার আইসোলেশন সেন্টারের পাশাপাশি ৭১ শয্যার আইসিইউ ইউনিট থাকবে।
আইসিইউ সুবিধা যুক্ত হচ্ছে
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের জন্য নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ) ও কৃত্রিম শ্বাসপ্রশ্বাস দেওয়ার সুবিধা বা ভেন্টিলেশন জরুরি। কিন্তু করোনা রোগীদের জন্য নির্ধারিত সরকারি হাসপাতালগুলোর মধ্যে মহানগর জেনারেল হাসপাতাল, মিরপুরের মাতৃ ও শিশুস্বাস্থ্য হাসপাতাল এবং রেলওয়ে জেনারেল হাসপাতালে আইসিইউ সুবিধা ছিল না। এর মধ্যে মহানগর এবং মাতৃ ও শিশুস্বাস্থ্য হাসপাতালে ৫ শয্যার আইসিইউ ইউনিট স্থাপন করা হচ্ছে।
বাবুবাজার ব্রিজসংলগ্ন মহানগর হাসপাতালটি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি)। গত শুক্রবার হাসপাতালটিতে ৫১ জন করোনা রোগী ভতি ছিলেন। হাসপাতালটির পরিচালক প্রকাশ চন্দ্র রায় প্রথম আলোকে বলেন, ৫ শয্যার আইসিইউ ইউনিট বসানোর কাজ শেষ। সিটি করপোরেশনের মাধ্যমে শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্র (এসি) কেনার প্রক্রিয়া চলছে। এসি লাগানো হলেই আইসিইউ ইউনিট চালু করা হবে।
মিরপুরের লালকুঠিতে অবস্থিত মাতৃ ও শিশুস্বাস্থ্য হাসপাতালটিতে গত শুক্রবার ৪৭ জন করোনা রোগী ভর্তি ছিলেন। হাসপাতালটি ২০০ শয্যার হলেও করোনা চিকিৎসার জন্য ১৭৫টি শয্যা প্রস্তুত করা হয়েছে।
হাসপাতালের পরিচালক শামছুল করিম প্রথম আলোকে বলেন, হাসপাতালে আইসিইউ সুবিধা ছিল না। ৫ শয্যার আইসিইউ ইউনিট প্রস্তুতের কাজ শেষ পর্যায়ে। কয়েক দিনের মধ্যে আইসিইউ ইউনিট চালু করা যাবে।
রোগী নেই শুধু শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভারে
করোনা রোগীদের জন্য নির্ধারিত সরকারি হাসপাতালগুলোর মধ্যে কুয়েত বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতাল, কুর্মিটোলা হাসপাতাল, মুগদা হাসপাতাল, মহানগর হাসপাতাল, মাতৃ ও শিশুস্বাস্থ্য হাসপাতাল এবং রেলওয়ে জেনারেল হাসপাতালে বর্তমানে রোগী ভর্তি আছে। বেসরকারি হাসপাতাল রিজেন্টের উত্তরা ও মিরপুর শাখা এবং নারায়ণগঞ্জের শিমরাইলে অবস্থিত সাজিদা ফাউন্ডেশনে রোগী ভর্তি ছিল।
মহাখালীতে অবস্থিত শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল চিকিৎসাসেবা দেওয়ার জন্য প্রস্তুত। তবে গতকাল পর্যন্ত এই হাসপাতালে করোনায় আক্রান্ত কোনো রোগী ভর্তি করা হয়নি। হাসপাতালের পরিচালক ফারুক আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, হাসপাতাল চিকিৎসাসেবা দেওয়ার জন্য প্রস্তুত আছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে এখনো করোনায় আক্রান্ত কোনো রোগী এখানে পাঠানো হয়নি।
রাজধানীর মহাখালীতে অবস্থিত ঢাকা উত্তর সিটি করপোশেনের (ডিএনসিসি) মার্কেটে আইসোলেশন সেন্টার নির্মাণের কাজ চলছে। এখানে থাকবে ১ হাজার ৩০০ শয্যা। সপ্তাহ দুয়েকের মধ্যে এটির কাজ শেষ হবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক আমিনুল হাসান।
পোশাকশ্রমিকদের জন্য শয্যা নির্ধারণের পরিকল্পনা
করোনায় আক্রান্ত পোশাক কারখানার শ্রমিকদের জন্য একাধিক হাসপাতালে শয্যা নির্ধারণের বিষয়ে আলোচনা চলছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় গঠিত মিডিয়া সেলের সদস্য ও স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (বিশ্ব স্বাস্থ্য) রীনা পারভীন প্রথম আলোকে বলেন, পোশাকশ্রমিকদের জন্য হাসপাতালে নির্ধারিত শয্যা রাখার বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে। এ বিষয়ে কোনো প্রজ্ঞাপন বা আদেশ জারি হয়নি।