আগের দিন ট্রেন-লঞ্চ চালু হয়েছে। গতকাল সোমবার থেকে বাসও চলছে। স্বাভাবিক পরিস্থিতি থাকলে ঈদ শেষে এ সময়টায় বাস-ট্রেনের ফিরতি যাত্রায় ব্যাপক ভিড় হওয়ার কথা। কিন্তু কাল বাসে সেই চাপ দেখা যায়নি। কারণ, করোনা পরিস্থিতির কারণে স্বাস্থ্যবিধি মেনে বাস-ট্রেনে অর্ধেক আসন ফাঁকা রাখা হয়েছিল।
পরিবহন মালিক-শ্রমিক ও রেল কর্তৃপক্ষ বলছে, ঈদের আগে-পরে একাধিকবার লকডাউনের মধ্যেই মানুষ যেনতেনভাবে ঢাকা ছেড়েছে বা প্রবেশ করেছে। ফলে খোলার পর যে ভিড় হওয়ার আশঙ্কা ছিল, সেটা এখনো দেখা যায়নি। লক্ষণীয় বিষয়টি হচ্ছে, বাস-ট্রেনের যাত্রীদের মধ্যে স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়ে সচেতনতা দেখা যাচ্ছে। প্রায় প্রত্যেকের মুখেই মাস্ক। কেউ কেউ আবার গ্লাভস, সানগ্লাস পরেছেন।
বাস চালুর প্রথম দিন ঢাকা ও দূরপাল্লা—দুই পথেই বাড়তি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে। ঢাকায় সর্বনিম্ন ভাড়া মিনিবাসে ৫ এবং বড় বাসে ৭ টাকা। কিন্তু গতকাল সর্বনিম্ন ভাড়া ২০ থেকে ৩০ টাকা আদায় করা হয়েছে। অথচ সরকার ভাড়া বাড়িয়েছে ৬০ শতাংশ।
দূরপাল্লার পথে এসি বাসের যাত্রী কম ছিল। ভাড়া নিয়ে খুব একটা সমস্যা হয়নি। নন-এসি বাসের চাহিদা বেশি থাকায় কোথাও কোথাও দ্বিগুণ ভাড়া বৃদ্ধির অভিযোগ পাওয়া গেছে।
শ্যামলী পরিবহনের স্বত্বাধিকারী রমেশ চন্দ্র ঘোষ বলেন, সবাই স্বাস্থ্য সুরক্ষা মেনে চলছে। এখন অর্ধেক আসন পূর্ণ করতে পারলেই হয়।
ঢাকায় আসছে বেশি
ঢাকামুখী বাসগুলোতে কিছুটা যাত্রী বেশি। ঢাকা থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে ছেড়ে যাওয়া বাসগুলো প্রায় ফাঁকা। দুপুরে সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল ছিল ফাঁকা। পরিবহনশ্রমিকেরা জানিয়েছেন, সকালে কিছু বাস ছেড়ে গেছে। রাতে আরও কিছু বাস চালানোর পরিকল্পনা রয়েছে।
সোহাগ পরিবহনের কর্মীরা জানান, কক্সবাজার, বেনাপোলসহ কয়েকটি গন্তব্যে যাত্রী নেই বলে বাস চালু করা সম্ভব হয়নি। চট্টগ্রামের পথে সকালে দুটি এসি বাস ছেড়ে গেছে। যাত্রী ছিল ১০ জন।
কিশোরগঞ্জের পথে অনন্যা পরিবহনের একটি ৪০ আসনের বাস ১৪ জন যাত্রী নিয়ে দুপুরে ঢাকা ছেড়ে গেছে।
গাবতলী ও মহাখালী বাস টার্মিনালের পরিবহনশ্রমিকেরা জানান, বৃহত্তর ময়মনসিংহ, উত্তরবঙ্গ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল থেকে ঢাকায় আসার যাত্রী কিছুটা বেশি। এঁরা হয়তো ঈদের আগে বাড়ি গিয়েছিলেন। এখন ফিরে আসছেন।
সোহাগ পরিবহনের স্বত্বাধিকারী ফারুক তালুকদার প্রথম আলোকে বলেন, দু-তিন দিন পর বোঝা যাবে, মানুষ বের হবে কি না।
ঢাকায়ও গণপরিবহন কম
গণপরিবহন চালুর প্রথম দিন রাজধানী ঢাকায় বাস-মিনিবাসে অর্ধেক আসন ফাঁকা রাখার নিয়ম মানতে দেখা যায়। তবে বাসের সংখ্যা কিছুটা কম ছিল। কমলাপুর স্টেশনের আশপাশের সড়কে শতাধিক বাস অলস দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়।
মালিকেরা জানান, যাত্রী এখনো সেভাবে নামেনি। সব শ্রমিকও ঢাকায় এসে পৌঁছাননি। দীর্ঘদিন বসে থাকার কারণে অনেক বাস-মিনিবাসেই ত্রুটি দেখা দিয়েছে। সেগুলো মেরামত করতে হচ্ছে।
রেল কর্তৃপক্ষ ও যাত্রী উভয়ই তৎপর
গতকাল দুপুরে জ্যোতির্দেব সাহা দুই মেয়ে ও এক ছেলেকে নিয়ে কমলাপুর স্টেশনে বনলতা এক্সপ্রেস ট্রেনে উঠছিলেন। প্রত্যেকের মুখে দুটি করে মাস্ক। হাতে গ্লাভস ও চোখে সানগ্লাস। মাথাও ঢাকা। তাঁরা রাজশাহী যাচ্ছিলেন।
জ্যোতির্দেব সাহা বলেন, তাঁর স্ত্রী একটি সরকারি হাসপাতালের নার্স। একটানা এক সপ্তাহ কাজ করার পর ১৪ দিন কোয়ারেন্টিনে থাকেন। আর তিনি নিজে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। এত দিন তিন সন্তানকে নিজেই দেখভাল করতেন। এখন নিজেকেও কাজে নামতে হবে। তাই বাচ্চাদের গ্রামের বাড়িতে রেখে নিজে ঢাকায় ফিরে আসবেন।
বেলা পৌনে একটার দিকে সিলেট থেকে আসা কালনী এক্সপ্রেস কমলাপুর স্টেশনের ৫ নম্বর প্ল্যাটফর্মে থামে। যাত্রীদের অনেকটা সারিবদ্ধভাবেই নামতে দেখা যায়। প্রায় প্রত্যেকের মুখেই মাস্ক দেখা গেছে। কারও কারও হাতে গ্লাভস ও মাথা ঢাকা ছিল।
বেলা তিনটার দিকে এই ট্রেনই আবার সিলেটের উদ্দেশে যাত্রা করে। এর আগে রেলের কর্মীদের ট্রেনটিতে জীবাণুনাশক স্প্রে করতে দেখা যায়।
কমলাপুর স্টেশনের প্রবেশমুখে রেলের পক্ষ থেকে গতকালও স্বাস্থ্য সুরক্ষার ব্যাপক তৎপরতা দেখা গেছে।
রেলের হিসাবে, গত ৩১ মে ঢাকায় ৬ জোড়া ট্রেন আসা-যাওয়া করেছে। এসব ট্রেনে মোট ৪ হাজার ৫৭২টি টিকিট বিক্রির জন্য রাখা হয়েছিল, যা মোট ধারণক্ষমতার অর্ধেক। টিকিট বিক্রি হয়েছে ৩ হাজার ৬১০টি (৭৯ শতাংশ)।
কমলাপুর রেলস্টেশনের ব্যবস্থাপক (ম্যানেজার) আমিনুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা এবং যাত্রী ও ট্রেন জীবাণুমুক্ত রাখাকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিচ্ছেন তাঁরা।