আপনি বিশ্বাস করেন অথবা না করেন, করোনাভাইরাসের মাধ্যমে নতুন বাংলাদেশের সূচনা হয়েছে। এটাকে কেউ কেউ পাগলের প্রলাপ-বৈকল্য হিসেবে অভিহিত করতে পারেন। বলতে দ্বিধা নেই, কোভিড-১৯ বিশ্ব অর্থনীতি ও স্বাস্থ্যসেবাকে হুমকির মধ্যে ফেলে দিয়েছে। যারা অর্থনীতি ও সামরিক ব্যবস্থায় সুপার পাওয়ার, তারাও অনেকটা অসহায়। হয়তো এটার কারণে বিশ্ব বেশ কয়েক বছর পিছিয়ে যাবে। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে রেহাই পেতেও বেশ সময় লেগে যাবে। কিন্তু এই করোনাভাইরাস মাধ্যমে যে ভীতিকর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তা ভয়াবহ ক্ষতির পাশাপাশি আমাদের সামনে সুযোগও এনে দিয়েছে নতুন করে দেশ গড়ার। সুযোগ এসেছে সব জাত-পাত, বর্ণ-ধর্মের ঊর্ধ্বে উঠে নতুন মানবিক পৃথিবী গড়ে তোলার। আমরা যদি করোনাভাইরাস আক্রমণ পরবর্তী পরিস্থিতি বিবেচনা করি, তাহলে স্পষ্টই দেখতে পাব কোন সুযোগগুলো আমাদের সামনে প্রতীয়মান।
এক.
মূলত করোনাভাইরাসের কারণেই সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার মুক্তি ত্বরান্বিত হয়েছে, যা রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন আশার সঞ্চার করেছে। এই মুক্তির মাধ্যমে বাংলাদেশ হয়তো ফিরে পারে সুস্থ গণতান্ত্রিক চর্চার পথ। বাংলাদেশের দুই বড় দলের মধ্য বৈরিতা সবার অজানা বিষয় নয়। অথচ এই দুই নেত্রী যুগপৎভাবে এরশাদবিরোধী আন্দোলনে রাজপথে নেমেছিল। তাদের দুজনের ভূমিকা গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় অগ্রগণ্য। একজন আরেকজনের আত্মীয়ের বিয়েতে উপস্থিত হয়ে একসঙ্গে ভোজন করেছে। এসব ছবি এখনো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঘুরে বেড়াই। তাদের ভেতরকার সেই সুসম্পর্ক দেশের মানুষ প্রত্যক্ষ করেছে। কিন্তু পালাবদল ও ক্ষমতা কাঠামোর দ্বন্দ্বে তলানিতে নেমেছিল। তাদের দুজনের টেলিফোন আলাপ এবং তার পরবর্তী সময়ে দোষারোপের রাজনীতি মানুষকে হতাশ করেছে। দুই নেত্রীনির্ভর দুই দলের মধ্যে নানা সংঘাত-সংকট জাতিকে কিংকর্তব্যবিমূঢ় করেছে। অবশেষে আবার সুড়ঙ্গের শেষ প্রান্তে আলোর ঝিলিক। গত বুধবার (২৪ মার্চ) রাজনৈতিক অঙ্গনের গত বিশ-ত্রিশ বছরের অন্যতম আলোচিত ঘটনা ঘটল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্বাহী আদেশে ৬ মাসের মুক্তি পেলেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। সবাই প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বের ভূয়সী প্রশংসা করছেন। কেউ কেউ বিষয়টা বাঁকা চোখে দেখে নানা ধরনের কথা বলছেন। কেউ বলছেন খালেদা জিয়া যে আপসহীন—এটা প্রমাণিত হয়েছে। কেউ বলছেন, শেখ হাসিনা খুব দূরদর্শী রাজনীতিবিদ হওয়ার কারণে এই করোনাভাইরাসের মহামারির সময় তাঁকে মুক্তি দিয়েছেন, যাতে বিএনপি কোনো রাজনৈতিক শোডাউন বা ফায়দা তুলতে না পারে। খালেদার বিষয়টা এমনভাবে সরলীকরণ করা ঠিক হবে না। অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষক বিষয়টা সমালোচনা চোখে দেখতে নারাজ। তাঁর বয়স ও স্ট্যাটাস অনুযায়ী তিনি এমন মুক্তি পেতেই পারেন।
দুই.
ইতালি একটা প্রথম সারির শিল্পোন্নত দেশ। তাদের স্বাস্থ্যসেবার মানের দিক দিয়ে পৃথিবী প্রথম সারির। সেই দেশ এখন অসহায় করোনাভাইরাসের মহামারির কাছে। তাদের প্রধানমন্ত্রী জুসেপ্পে কন্তের কণ্ঠে তাই হতাশা ও ভেঙে পড়ার সুর। টুইটারে তিনি বলেছেন, ‘কী করতে হবে তা আমরা জানি না। পৃথিবীর সমস্ত সমাধান শেষ হয়ে গেছে।’ তাঁর এ বক্তব্য বিশ্ববাসীকে নাড়া দিয়েছে। তিনি সব ধর্মের লোকের কাছে তাদের নিজ নিজ ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করতে বলেছেন। বহুদিন পর উচ্চ স্বরে আজানের অনুমতি দেওয়া হয়েছে সে দেশে। এ ঘটনায় এটা প্রমাণ করেছে যে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়ন শেষ কথা না। আমরা যেসব দেশকে স্বপ্ন মনে করি, যেসব দেশে যাওয়ার সুযোগ দিলে হয়তো ঢাকা শহর ফাঁকা হয়ে যাবে। সেসব দেশ উন্নয়নশীল দেশের কাছে সহায়তা কামনা করেছে। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের কাছে মেডিকেল ইকুইপমেন্ট চেয়েছে বলে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের মাধ্যমে পত্রিকায় খবর এসেছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সার্ক নেতাদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্স করেছেন। ভারতের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে ৩০ হাজার সার্জিক্যাল মাস্ক এবং ১৫ হাজার হেডকভার ভারতীয় হাইকমিশনার রীভা গাঙ্গুলী দাস বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে সহায়তা হিসেবে হস্তান্তর করেছে। অন্যদিকে, বাংলাদেশ সরকার নরেন্দ্র মোদির ঘোষিত সার্ক তহবিলে ১৫ মিলিয়ন ডলার দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।
তিন.
করোনা আক্রমণে বিশ্বভ্রাতৃত্ববোধ ও ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধা-ভক্তি জাগ্রত হয়েছে। যে ভারতে এনআরসি এবং সিএএ নিয়ে বিরোধ এবং সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় উত্তপ্ত হয়েছিল, তা এখন নিস্তেজ হয়ে গেছে। ভারতে ২১ দিনের লকডাউন চলছে। করোনাভাইরাসের ভয়াবহতা রোধে তাদের দেশের মানুষের মধ্যে মনের অজান্তে নতুন সম্প্রীতি ও ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। মাঝে ইরান ভারতের সাম্প্রদায়িক অস্থিতিশীলতার কারণে কঠোর ভাষায় সমালোচনা করেছিল, সেই ইরান ভারতের কাছে করোনাভাইরাস মোকাবিলায় সাহায্য প্রার্থনা করেছে। স্পেনে দীর্ঘদিন পর মাইকে আজান দেওয়ার অনুমতি মিলেছে। করোনাভাইরাস মহামারি আকার ধারণ করার পর চীনের প্রেসিডেন্ট মুসলিমদের বাড়ি বাড়ি পরিদর্শন করেছেন। অথচ কিছুদিন আগে উইঘুর প্রদেশে মুসলিম সম্প্রদায়ের ওপর অমানবিক নির্যাতন চালানো হয়েছে, তা বিশ্ব বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে দেখেছে। কিন্তু তাদের দেশে করোনা মহামারি আকার ধারণা করলে চীন সরকার মুসমানদের ওপর বিতর্কিত কার্যক্রম থেকে সরে এসেছে। করোনা প্রভাবে ইসরায়েল, ফিলিস্তিন কাশ্মীর বা অন্য দেশে সম্প্রদায়গত হানাহানি প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে।
চার.
বাংলাদেশের মানুষ স্বাস্থ্য ও শৃঙ্খলাবিধি মেনে চলার ক্ষেত্রে যত্নবান হয়েছে। অথচ বিশ্বে করোনাভাইরাসের আক্রমণের ভয়াবহতার আগে বাংলাদেশের জনগণের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার অভ্যাস তাদের প্রাত্যহিক জীবনপ্রণালি থেকে অনেকটা উঠে গিয়েছিল। কিন্তু এখন তারা বাসাবাড়িতে, অফিস-আদালতে নিয়মিত হ্যান্ডওয়াশ বা সাবান দিয়ে হাত ধুচ্ছেন, স্যানিটাইজার ব্যবহার করছেন। হাতে গ্লাভস, মুখে মাস্ক ব্যবহার করছে। হাঁচি-কাশি, থুতু ফেলার ক্ষেত্রে যথাসম্ভব মেনে চলছে। শহরে ফিরে আসছে শৃঙ্খলা। সরকার ও বিভিন্ন সংস্থার পক্ষ থেকে রাস্তাঘাট ধোয়া-পরিষ্কার করা হচ্ছে, গাড়ি দিয়ে পানিসহ জীবাণুনাশক স্প্রে করা হচ্ছে, যা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন শহরে হাতছানি দিচ্ছে। সরকারের পক্ষ থেকে নাগরিক সুবিধা প্রাপ্তির অবারিত সুযোগ তৈরি হয়েছে। হাসপাতাল, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের তৎপরতায় সরকারি-বেসরকারি সেবার মান আগের চেয়ে উন্নতর হয়েছে, যা করোনা ভাইরাসের আক্রমণ না হলে হয়তো হতভাগা জনগণের কপালে জুটত কি না সন্দেহ। তবে এই সেবা আরও উত্তম করা পর্যাপ্ত সুযোগ রয়েছে।
পাঁচ.
আর একটা উল্লেখ করার মতো দিক, জনপ্রতিনিধিরা তাঁদের কথাবার্তায় অনেক সংযত হয়েছেন। করোনাভাইরাস আক্রমণের প্রথম দিকে যেসব মন্ত্রী-সাংসদ বা নেতারা লাগামহীন কথা বলে মানুষের কাছে সমালোচিত হয়েছেন, তাঁরাও এখন কথা বলার ক্ষেত্রে অনেক পরিমিতিবোধের স্বাক্ষর রাখছেন। বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের অতিরঞ্জিত কথা না বলে সরকারকে সহযোগিতা হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। করোনাভাইরাস প্রতিরোধ বিষয়ে ডাক্তার, ক্রীড়াবিদ, সাংবাদিক, লেখক, শিল্পপতিদের বিভিন্ন পদক্ষেপ নিতে দেখা যাচ্ছে। শিল্পী, অভিনেতা-অভিনেত্রীদের জনসচেতনতামূলক কর্মকাণ্ডে স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ করতে দেখা যাচ্ছে। অভিনেত্রী ভাবনাসহ অনেক বাড়িওয়ালা বাড়িভাড়া মওকুফ করেছেন। বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের একটা অংশ তাঁদের বেতনের ৫০ শতাংশ করোনাভাইরাস প্রতিরোধে দান করেছে। উল্লেখ্য, শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট বোর্ড তাদের সরকারকে স্থানীয় অর্থে ১৫ মিলিয়ন দান করেছে করোনা বিরুদ্ধে পদক্ষেপের অংশ হিসেবে। বিখ্যাত ফুটবলার লিওনেল মেসির স্পেনের হাসপাতালে ১০ লাখ ইউরো দান করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের চিকিৎসার জন্য। রোনালদোও অনেক টাকা দান করেছেন। পাকিস্তানের শহীদ আফ্রিদি মাঠে নেমেছে করোনা–সচেতনতা ও প্রতিরোধে। সবাইকে অবাক করে, ইতালির ৭২ বছর বয়সী খ্রিষ্টান ধর্মযাজক জুজাপো বিআরদালি নিজের জীবন দিয়ে মৃত্যু হাত থেকের থেকে বাঁচালেন এক কম বয়সী রোগীকে। তিনি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিলেন। তাঁকে দেওয়া হয়েছিল লাইফ সাপোর্ট। কিন্তু তা খুলে অচেনা এক কম বয়সী রোগীকে দেওয়ার নির্দেশ দেন। এগুলো মানুষ প্রচণ্ডভাবে আশাবাদী করে তুলেছে।
ছয়.
করোনাভাইরাসের সংক্রমণের হাত রক্ষা পেতে সরকারি আদেশ মোতাবেক বাসায় বন্দী থাকাতে জনগণের মধ্যে সঞ্চয়ী মনোভারের বিকাশ ঘটেছে। বাংলাদেশে করোনা প্রতিরোধে সরকারের নানা বিধিনিষেধ আরোপ করার কারণে অনেক শ্রেণি-পেশার মানুষ তাদের কর্ম করতে পারছে না। যারা দিন আনে দিন খায়, তাদের কার্যত কোনো আয় নেই। তাই দিনমজুরসহ যারা কোনো দিন সঞ্চয়ের কথা তাগিদ দিয়ে ভাবেনি, তারাও ভবিষ্যতে সঞ্চয় করার পরিকল্পনা করছে, যা দেশের উন্নয়নে দারুণ কাজে দেবে। নিউইয়র্কের মতো শহরের মানুষের যেখানে কাজ ও খাবারের সমস্যা হয় না, তারাও খাবার সংকটে ভোগার আশঙ্কা করছে। তাদেরও মনোভাব এমন পরিস্থিতি সামাল দিতে সঞ্চয়ের কোনো বিকল্প নেই। এই মনোভাব দেশের জনগণকে করোনাভাইরাসের প্রকোপ কমলে তাদের আপন শক্তিতে ঘুরে দাঁড়ানোর সাহস জোগাবে। বাইপ্রোডাক্ট হিসেবে করোনা আমাদের সামনে সম্ভাবনা তৈরি করবে এটা ঠিক। আবার এটাও ঠিক কারও কারও ভেতর স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ক্ষেত্রে শৈথিল্য পরিলক্ষিত হচ্ছে। এত আশঙ্কার ভেতর মানুষ ১০ দিনের সরকারি ছুটি পেয়ে ঈদের আনন্দের মতো বাড়ি ছুটতে দেখা গেছে। এর কারণে সেনাবাহিনীর নামানো, পুলিশ-বিজিবি আইনের কড়াকড়ি করার মতো ঘটনা ঘটেছে। একটা কথা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, সরকার হাজারো পদক্ষেপ নেওয়ার পরও যদি জনগণ সচেতন না হয়, তবে সব আয়োজন ব্যর্থ হবে। তবে এর জন্য সরকার ও সেবাপ্রদানকারী সংস্থাকে হতাশ হলে চলবে না। সভ্যতার সূচনালগ্ন থেকেই ভালো মানুষের সঙ্গে খারাপ মানুষ, ভালো কিছুর জন্য খারাপ কিছু অবশ্যম্ভাবীভাবে চলে আসছে। তাই বলব, এসব দিকে নজর না দিয়ে নতুন করে গড়তে হবে দেশ।
সাত.
করোনার উৎপত্তিস্থল চীনের হুবেই প্রদেশ। সেখানে সরকারের বলিষ্ঠ উদ্যোগের কারণে করোনা মুক্ত হয়েছে। তারা এই বিষয়টা আতশবাজি ফুটিয়ে আনন্দের সঙ্গে উদ্যাপন করেছে। এটা দেখে কোনো কোনো বিশ্লেষক বলছে, করোনাভাইরাস চীনের সৃষ্টি। তা না হলে তাদের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ইউরোপ-আমেরিকায় কেন এত মানুষ মারা যাবে। তারা এই ভাইরাসের মাধ্যমে জীবাণু অস্ত্রের তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু করেছে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব জাহির করতে। এসব পরিষ্কার হতে সময় লাগবে। তবে আমাদের এসব বিষয়ে মনোযোগ না দিয়ে, এই মুহূর্তে করণীয় করোনাভাইরাসের অসুবিধাকে সুবিধায় রূপান্তর করা। এটাকে জাতীয় দুর্যোগ হিসেবে গ্রহণ করে মনুষ্যত্ব ও নৈতিকতার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া। এ ভাইরাসের কারণে মানুষের চিন্তা-চেতনা ও দৃষ্টিভঙ্গিতে আন্তর্জাতিক পরিবর্তন হবে বলে অনেকের বিশ্বাস। নোবেলজয়ী রসায়নবিদ মাইকেল লেভিট ভবিষ্যদ্বাণী করে বলেছেন, করোনাভাইরাস মহামারির সমাপ্তি নিকটবর্তী। চীনে এর প্রকোপ উল্লেখযোগ্য হারে কমে এসেছে। ইউরোপ-আমেরিকানসহ অনেক দেশ সন্তোষজনকভাবে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা কমিয়ে এনেছে। অন্যান্য দেশ এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। বাংলাদেশের ভূমিকা প্রশংসনীয় পর্যায়ে উন্নীত হচ্ছে। করোনায় আক্রান্ত হয়ে ২৫ মার্চ পর্যন্ত পাঁচজন মারা গেলেও সাতজন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন।
আট.
পরিস্থিতির টেকসই সমাধানের জন্য টাইফয়েড, হেপাটাইটিসসহ বিভিন্ন ভাইরাসের টিকা বা প্রতিষেধকের মতো করোনাভাইরাসের বাণিজ্যিক ওষুধ আবিষ্কার অত্যন্ত জরুরি। ইতিমধ্যে এই ভাইরাসের প্রতিষেধক আবিষ্কারের সুসংবাদ পাওয়া গেছে। যার ফলাফল পেতে আমাদের আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে।
শেষে বলব, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ মোকাবিলার সূত্র ধরে স্বাস্থ্য সচেতনতা, দূরত্ব মেনে চলা, মাস্ক ব্যবহার, কোয়ারেন্টিন, আইনশৃঙ্খলার প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়াসহ বিশ্বভ্রাতৃত্ব এবং মানবতাবোধে বলীয়ান হওয়ার অবারিত সুযোগ এসেছে, তা হাতছাড়া করা যাবে না। এই সুযোগ হাতছাড়া করা আত্মহত্যার মতো দেশহত্যার শামিল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে বলেছে, সরকারের পক্ষ থেকে ঢাকা মহানগরীসহ দেশের ৬৪ জেলায় অতি দরিদ্রদের ৬ হাজার ৫০০ শত মেট্রিক টন চাল ও নগদ ৫ কোটি ৫০ লাখ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। নিঃসন্দেহে ভালো উদ্যোগ। তবে এই করোনা পরিস্থিতি যদি দীর্ঘায়িত হয়, তবে সরকারিভাবে নিম্নবিত্তের পাশাপাশি মধ্যবিত্ত পরিবারের সহায়তার বিষয়টিতে নজর দিতে হবে।
যা হোক, এমতাবস্থায় বাংলাদেশ সরকারসহ সবার উচিত হবে সব বিভেদ ভুলে যেমন করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে সবাই সোচ্চার, তেমন দারিদ্র্য, দুর্নীতি, কার্বন, রাজনৈতিক অস্থিতিশীল, আইনকানুন মানার প্রতি অনীহা, প্রশাসনিক অব্যবস্থার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে নতুন বাংলাদেশ রচনা করি। যে বাংলাদেশে একটি মানুষ না খেয়ে মরবে না, স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হবে না, সুবিচার থেকে বঞ্চিত হবে না, গণতন্ত্রের সুফল পৌঁছে যাবে আপামর জনসাধারণের দোরগোড়ায়। সবার প্রত্যাশা, করোনাভাইরাস মোকাবিলার পথ ধরে নতুন যুগে প্রবেশ করবে বাংলাদেশ। আসুন, আমরা সবাই মিলে একটা সুন্দর, সমৃদ্ধ বাংলাদেশ ও শান্তি-সম্প্রীতির বিশ্ব গড়ি।
লেখক: এমফিল গবেষক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষক, গাজীপুর ক্যান্টনমেন্ট কলেজ।