করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়ে আরেক চিকিৎসক মারা গেছেন। মারা যাওয়া চিকিৎসকের নাম রফিকুল হায়দার (৫৪)। তিনি গতকাল বুধবার রাত সোয়া ১০টার দিকে সাভারের এনাম মেডিকেল হাসপাতালে মারা যান। তাঁর বয়স হয়েছিল ৫৪ বছর। তিনি ওই হাসপাতালেই কর্মরত ছিলেন।
বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) তথ্য অনুযায়ী, করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়ে ও উপসর্গ নিয়ে দেশে ৪০ জনের বেশি চিকিৎসকের মৃত্যু হয়েছে।
বিএমএর তথ্য অনুযায়ী, গতকাল পর্যন্ত ৩ হাজার ২৭৪ চিকিৎসক, নার্স ও অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মী করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে চিকিৎসক ১ হাজার ৩৫, নার্স ৮৮৫ এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মী ১ হাজার ৩৫৪ জন।
রফিকুল হায়দারের ছোট ভাই ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদালয়ের অফিসার্স সমিতির সভাপতি রশিদুল হায়দার জাবেদ প্রথম আলোকে জানান, চার-পাঁচ দিন ধরে তাঁর মেজ ভাই (রফিকুল হায়দার) জ্বরে ভুগছিলেন। তিনি ঢাকার মিরপুরের বাসায় চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। সোমবার তাঁর করোনা শনাক্ত হয়। পরে শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটলে তাঁকে মিরপুরের বাসা থেকে এনাম মেডিকেলে নেওয়া হয়। তখনো তিনি সাড়া দিচ্ছিলেন। নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে ঢোকানোর পর তাঁর পালস পাওয়া যাচ্ছিল না। সেখানে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
রফিকুল হায়দারের গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের সন্দ্বীপে। আওয়ামী লীগের প্রয়াত সাংসদ ওবাইদুল হকের ভাতিজা ছিলেন তিনি। রফিকুল হায়দারের প্রয়াত বাবা মোহাম্মদ সুফিয়ান চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পট্রোলার অব অ্যাকাউন্টস ছিলেন।
চট্টগ্রামের চিকিৎসক আ ম ম মিনহাজুর রহমান প্রথম আলোকে জানান, রফিকুল হায়দার সিলেট মেডিকেল কলেজের ২৩তম ব্যাচের ছাত্র ছিলেন। মেডিকেলের ছাত্র হিসেবে তিনি তাঁর পাশের কক্ষে থাকতেন। ছাত্র জীবনে রফিকুল হায়দার প্রগতিশীল রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। তিনি এরশাদ ও বিভিন্ন সাম্প্রদায়িক-বিরোধী আন্দোলনে যুক্ত ছিলেন।
রফিকুল হায়দারকে আজ বৃহস্পতিবার ভোরে মিরপুর বুদ্ধিজীবী-সংলগ্ন কবরস্থানে দাফন করা হয় বলে জানান তাঁর ছোট ভাই রশিদুল হায়দার। রফিকুল হায়দারের একমাত্র ছেলে আমেরিকায় পড়াশোনা করছেন। তাঁর মা, এক ভাই ও এক বোন চট্টগ্রামে থাকেন। দুই বোন ঢাকায় বসবাস করেন।
করোনাভাইরাসে সংক্রমিত রোগীদের চিকিৎসার ক্ষেত্রে একেবারে সম্মুখযোদ্ধার দায়িত্বে রয়েছেন চিকিৎসকেরা। অন্যের জীবন বাঁচাতে নিজের সর্বোচ্চটা দেওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছেন তাঁরা। করোনা রোগীদের চিকিৎসাসেবা দিতে গিয়ে তাঁরাও সংক্রমিত হচ্ছেন, মৃত্যুর ঘটনাও বাড়ছে। একের পর এক চিকিৎসকের মৃত্যুর ঘটনায় সাধারণ মানুষের মধ্যেও উদ্বেগ বাড়ছে।