করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে বগুড়া জেলা কারাগার থেকে আরও ৮৮ জন বন্দীকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে।কারাগারের চাপ কমাতে গতকাল শুক্রবার তৃতীয়ধাপে এই ৮৮ জন বন্দীকে মুক্তি দেওয়া হয়। এর আগে ২ ও ৩ মে দুই ধাপে মুক্তি পান ১১ জন।
করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে এই কারাগারের ১৬৯ জন বন্দীকে মুক্তির সুপারিশ করা হয়েছে। গতকাল পর্যন্ত ৯৯ জনকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। সরকারের অনুমতি পেলে, অন্যরা ঈদের আগেই মুক্তি পেতে পারেন।
বগুড়া জেলা কারাগারের তত্ত্বাবধায়কের অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো.তাজ উদ্দিন প্রথম আলোকে এসব বিষয় নিশ্চিত করে বলেন, যাঁদের মুক্তি দেওয়া হয়েছে, তাঁরা সবাই লঘু দণ্ডে দণ্ডিত। সর্বোচ্চ এক বছর যাঁদের সাজা, তাঁরাই এই তালিকায় রয়েছেন। ছয় মাস থেকে এক বছর, তিন মাস থেকে ছয় মাস এবং শূন্য থেকে তিন মাস—এই তিনটি ভাগে ভাগ করে ১৬৯ বন্দীকে মুক্তির সুপারিশ করা হয়েছে। এর মধ্যে গতকাল ৮৮ জনসহ তিন ধাপে ৯৯ জন মুক্তি পেলেন।
ভারপ্রাপ্ত তত্ববধায়ক বলেন, করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে কারাগারে বন্দীদের চাপ কমাতে সরকারের নির্দেশেই এই মুক্তির প্রক্রিয়া চলছে।
৯৯ জন মুক্তি পাওয়ার পর আর কাউকে মুক্তি দেওয়ার পরিকল্পনা আছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে কারা তত্ববধায়ক বলেন, সরকার যেভাবে নির্দেশনা দেবে, তাঁরা সেভাবেই কাজ করবেন।
বগুড়া জেলা কারাগারের জেলার মো. শরিফুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, বগুড়া কারাগারে বন্দী ধারণক্ষমতা পুরুষ ৬৮৫ । আর নারী ৩৫ জন । বর্তমানে ধারনক্ষমতার তিন গুণ বেশি বন্দী রয়েছেন। গতকাল পর্যন্ত কারাগারে বন্দী সংখ্যা ২ হাজার ২৩৪ জন।
জেলার আরও বলেন, যাঁরা মুক্তি পাচ্ছেন, তাঁরা সবাই সাজাপ্রাপ্ত। বিচার শেষে তাঁদের সাজা সর্বোচ্চ এক বছর পযর্ন্ত নির্ধারণ করা হয়েছিল। বেশির ভাগই মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের মামলার আসামি। কেউ ভ্রাম্যমান আদালতে দন্ডপ্রাপ্ত, কেউ বিচারিক আদালতে।কেউ হয়তো এক মাস জেল খেটেছেন, কেউ ছয় মাস। শিশু অপহরণ, ধর্ষণ বা হত্যার মতো গুরুতর অপরাধে সাজাপ্রাপ্ত কোনো আসামিকে মুক্তি দেওয়া হচ্ছে না। বিচারাধীন কোনো মামলার আসামিও মুক্তি পাচ্ছেন না।
কারাগার থেকে মুক্ত হওয়া সুমন, নুরুল ইসলাম, সুজনসহ বেশ কয়েকজন বন্দীর স্বজনেরা বাইরে অপেক্ষা করছিলেন। কারাগার থেকে মুক্তির আনন্দে বন্দীদের সঙ্গে স্বজনদেরও চোখে মুখে ছিল খুশির উচ্ছাস ।
নুরুল ইসলাম বলেন, করোনাভাইরাস আক্রান্তের ভয়ে কারাগারে আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কেটেছে তাঁর। বলেন 'অনেক দিন পর মুক্ত আকাশের নিচে প্রাণ ভরে শ্বাস নিতে পারছি। আর কখনও অপরাধে জড়াবো না।'