দেশে করোনা সংক্রমণের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছে রাজধানী ঢাকায়। এলাকাভিত্তিক জনসংখ্যার বিপরীতে আক্রান্তের হারও সবচেয়ে বেশি ঢাকা মহানগরীতে। এ ছাড়া বড় শহরগুলো আক্রান্তের সংখ্যা তুলনামূলক বেশি। কিন্তু জনসংখ্যার অনুপাতে ঢাকার বাইরে আক্রান্তের হার সবচেয়ে বেশি ফরিদপুরে।
বাংলাদেশের করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতি নিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সর্বশেষ সাপ্তাহিক পরিস্থিতি প্রতিবেদনে (২০ জুলাই পর্যন্ত হালনাগাদ) এই চিত্র পাওয়া গেছে। সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) তথ্যের ভিত্তিতে এ প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে।
৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনাভাইরাসের সংক্রমণের তথ্য নিশ্চিত করে সরকার। এপ্রিলের শুরুর দিকে পাঁচটি এলাকাকে সংক্রমণের ক্লাস্টার (এক এলাকায় অনেক রোগী) হিসাবে চিহ্নিত করেছিল আইইডিসিআর। এই ক্লাস্টারের দুটি ছিল রাজধানীতে, একটি নারায়ণগঞ্জ, একটি গাইবান্ধার সাদুল্ল্যাপুর ও একটি ছিল ফরিদপুরের সীমান্তবর্তী মাদারীপুরের শিবচর। তবে তখন পর্যন্ত ফরিদপুরে সংক্রমণ ছিল না।
ফরিদপুরে প্রথম ১৩ এপ্রিল ঢাকা ও নারায়ণঞ্জ থেকে যাওয়া দুই ব্যক্তির মধ্যে সংক্রমণ পাওয়া যায়। গত ৯ জুন পর্যন্ত ৫৭ দিনে মোট ৫৫২ জনের দেহে সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছিল। আর গত বুধবার পর্যন্ত মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ১৯১। মূলত পবিত্র ঈদুল ফিতরের পর থেকে এই জেলায় দ্রুত সংক্রমণ ছড়াতে দেখা যায়। অর্থাৎ ঈদের পর ৪২ দিনে সাড়ে সাত গুণের বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছে।
মূলত ঈদের ঠিক দুই সপ্তাহ পর ৭ জুন থেকে এই জেলায় নতুন রোগী শনাক্তের সংখ্যায় লাফ দিতে দেখা যায়। এর আগ পর্যন্ত দৈনিক শনাক্ত ৪০–এর নিচে থাকত। এরপর থেকে সেটা বাড়তে থাকে। কোনো কোনো দিন দৈনিক শনাক্ত শতাধিক দেখা গেছে।
ফরিদপুরের সিভিল সার্জন ছিদ্দীকুর রহমান বলেন, বিশেষ করে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের মতো করোনাপ্রবণ এলাকা থেকে মানুষজনের অবাধ যাতায়াত, স্বাস্থ্যবিধি মেনে না চলা ও জনগণরে উদাসীনতার কারণে সংক্রমণ দ্রুত বেড়েছে। তাঁরা ধারণা করছেন, এখন জেলায় সংক্রমণ চূড়ান্ত পর্যায়ে (পিক) আছে। আরও সপ্তাহ দুয়েক এই পিক স্থায়ী হতে পারে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী, রাজধানী ঢাকায় করোনায় আক্রান্তের হার প্রতি ১০ লাখে ১২ হাজার ৯১৫। অর্থাৎ রাজধানীর প্রতি ১০ লাখ মানুষের মধ্যে প্রায় ১৩ হাজার মানুষ আক্রান্ত। আক্রান্তের হারের দিক থেকে দ্বিতীয় স্থানে থাকা ফরিদপুরে প্রতি ১০ লাখে আক্রান্ত ১ হাজার ৭৫৮।
জেলার জনসংখ্যা বিবেচনায় আক্রান্তের হারের দিক থেকে তৃতীয় স্থানে আছে শুরু থেকে সংক্রমণের অন্যতম কেন্দ্রস্থল নারায়গঞ্জ। এই জেলায় প্রতি ১০ লাখে আক্রান্ত এক হাজার ৬৫১। এরপর আছে মুন্সিগঞ্জ। আক্রান্তের হারের দিক থেকে শীর্ষ পাঁচটি জেলার চারটিই ঢাকা বিভাগের। এই জেলাগুলো ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের সীমান্তবর্তী।
আক্রান্তের হারের দিক থেকে তালিকায় পঞ্চম স্থানে আছে চট্টগ্রাম। ঢাকার পর চট্টগ্রাম জেলাতেই শুধু ১০ হাজারের বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছে। আক্রান্তের সংখ্যা বেশি হলেও জনসংখ্যার অনুপাতে আক্রান্তের হারে চট্টগ্রাম জেলার অবস্থান ৫ নম্বরে। এই জেলায় প্রতি ১০ লাখে ১ হাজার ৪৩৫ জন আক্রান্ত।
তবে জেলাভিত্তিক মোট আক্রান্তের সংখ্যায় ঢাকার পর দ্বিতীয় স্থানে আছে চট্টগ্রাম। এরপরের অবস্থানে নারায়ণগঞ্জ। আইইডিসিআরের ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, আক্রান্তের সংখ্যার দিক থেকে ফরিদপুরের অবস্থান নবম।
(প্রতিবেদন তৈরিতে সহায়তা করেছেন প্রতিনিধি, ফরিদপুর)