কারাগারে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়ছেই। গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত দেশের ছয়টি কারাগারে বন্দী ও কারারক্ষী মিলে ৪৬ জন আক্রান্ত হয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে পবিত্র ঈদুল ফিতরে কারাগারে বন্দীদের সঙ্গে তাঁদের স্বজনদের সাক্ষাৎ বন্ধ থাকছে।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে গত এপ্রিলে সারা দেশের ৬৮ কারাগারে বন্দীদের সঙ্গে স্বজনদের সাক্ষাৎ বন্ধ করে দেয় কারা কর্তৃপক্ষ।
কারা অধিদপ্তর সূত্র জানায়, এখন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার, সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগার, নারায়ণগঞ্জ, বগুড়া, পঞ্চগড় ও রংপুর—এই ছয় কারাগারে বন্দী ও কারারক্ষী মিলে ৪৬ জন করোনায় আক্রান্ত আছেন। আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের ২ জন বন্দী ও ২০ জন কারারক্ষী, সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে ৩ জন কারারক্ষী, নারায়ণগঞ্জ জেলা কারাগারে ১২ জন কারারক্ষী, পঞ্চগড় জেলা কারাগারের ১ জন বন্দী ও রংপুর কারাগারের ১ জন কারারক্ষী, বগুড়া কারাগারে ৭ জন কারারক্ষী আছেন। এর মধ্যে সাতজন সুস্থ হয়েছেন। সুস্থ ব্যক্তিদের মধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা কারাগারের চিকিৎসক ইনজামাম উল হক রয়েছেন। আর একজন কারাবন্দী মারা গেছেন। কারা অধিদপ্তর জানায়, গতকাল পর্যন্ত সারা দেশের কারাগারগুলোতে বন্দী ও কারারক্ষী মিলে ২৭৯ জন কোয়ারেন্টিনে ছিলেন।
এপ্রিলে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের এক বন্দীর শরীরে প্রথম করোনা শনাক্ত হয়। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর পাহারায় থাকা ১১ কারারক্ষীর করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। পরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আরেকজন বন্দী ও নয়জন কারারক্ষীর শরীরে সংক্রমণ ছড়ায়। এরপর পঞ্চগড় ও রংপুর কারাগারে একজন করে বন্দী করোনায় আক্রান্ত হন।
কারা অধিদপ্তরের মুখপাত্র ও সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি, প্রিজনস) মুহাম্মদ মনজুর হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, দেশে করোনা–পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত বন্দীদের সঙ্গে তাঁদের স্বজনদের সাক্ষাৎ বন্ধ থাকবে। তবে দেশের ৬৮ কারাগারে আটক বন্দীদের সঙ্গে তাঁদের স্বজনেরা ঈদের সময় যাতে মুঠোফোনে কথা বলতে পারেন, সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ঈদুল ফিতরের দিনে এত বন্দীর সঙ্গে তাঁদের স্বজনদের কথা বলিয়ে দেওয়া দুরূহ। তাই ঈদের আগের দিন, ঈদের দিন ও ঈদের পরের দিন বন্দীরা যাতে পালা করে কথা বলতে পারেন, সেই ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে কারা মহাপরিদর্শক (আইজি, প্রিজনস) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম মুস্তাফা কামাল পাশার সঙ্গে আলোচনা করে সবকিছু ঠিক করা হবে।
কারা অধিদপ্তর সূত্র জানায়, সাধারণত প্রতি সপ্তাহে একজন বন্দী তাঁর পরিবারের সঙ্গে সর্বোচ্চ পাঁচ মিনিট কথা বলার সুযোগ পান। প্রতিটি কারাগারে প্রতিদিন প্রায় ১ হাজার ৩০০ বন্দী থাকেন এবং ২৫০ বন্দীর জন্য একটি মুঠোফোনে কথা বলার ব্যবস্থা আছে। সে ক্ষেত্রে বন্দীদের সঙ্গে তাঁর স্বজনদের কথা বলার জন্য একেকটি কারাগারে পাঁচ থেকে ছয়টি মুঠোফোন আছে।