করোনার অভাবের মধ্যে বন্যার বিপদ

টাঙ্গাইলে বন্যার্তদের মধ্যে প্রথম আলো ট্রাস্টের পক্ষ থেকে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করা হয়। ত্রাণ নিয়ে বাড়ি ফিরছেন বন্যার্তরা। গতকাল ভূঞাপুরের অর্জুনা হাজি ইসমাইল খাঁ বেসরকারি কারিগরি কলেজ প্রাঙ্গণে। ছবি: প্রথম আলো
টাঙ্গাইলে বন্যার্তদের মধ্যে প্রথম আলো ট্রাস্টের পক্ষ থেকে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করা হয়। ত্রাণ নিয়ে বাড়ি ফিরছেন বন্যার্তরা। গতকাল ভূঞাপুরের অর্জুনা হাজি ইসমাইল খাঁ বেসরকারি কারিগরি কলেজ প্রাঙ্গণে।  ছবি: প্রথম আলো

ঢাকার লালবাগে একটি কোম্পানিতে কাজ করতেন নিজাম উদ্দিন। করোনার কারণে চাকরিটা চলে গেলে চার মাস ধরে টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলার অর্জুনা ইউনিয়নে গ্রামের বাড়িতেই থাকছেন। জমানো কিছু টাকা দিয়ে এত দিন ধরে স্ত্রী, তিন ছেলেমেয়ে নিয়ে চলেছেন। এর মধ্যেই বন্যার পানিতে বাড়ি তলিয়েছে। দুর্ভোগ আর খরচ দুটোই বেড়েছে। কিন্তু হাতে কোনো টাকা নেই। বাড়িতে দেখা দিয়েছে খাবারেরও সংকট।

গতকাল বুধবার ভূঞাপুরের অর্জুনা ইউনিয়নের হাজী ইসমাইল খাঁ বেসরকারি কারিগরি কলেজ মাঠে প্রথম আলো ট্রাস্টের পক্ষ থেকে বানভাসিদের মধ্যে ত্রাণ দেওয়া হয়। নিজাম উদ্দিনও এসেছিলেন ত্রাণ নিতে।

করোনাকালের অভাবের মধ্যেই বন্যার বিপদে হতাশ হয়ে পড়া নিজাম উদ্দিন বলেন, ‘চার মাস আগেও ভাবি নাই এ রকম পরিস্থিতিতে পড়তে হবে। তাও ভালো আপনেরা কিছু দিয়া গেলেন, এই দিয়া কয় দিন চলব।’

যমুনা নদীর পাড় দিয়েই নলীন-পিংনা-যোকারচর বাঁধ। নদীতে পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে তিন সপ্তাহ আগে বাঁধের পশ্চিম প্রান্তের গ্রামগুলো তলিয়ে গেছে। ডুবে গেছে বাড়িঘর, রাস্তা, ফসলের খেত। ওই সব গ্রামের বেশির ভাগ মানুষ এখন আশ্রয় নিয়েছে বাঁধের পূর্ব প্রান্তে। এসব মানুষের কাজ নেই। অভাব-অনটনে জীবন যেন আর চলছে না। বুধবার এ এলাকার বন্যাকবলিত চুকাইনগর, অর্জুনা ও কুঠিবয়ড়া গ্রামের ১০০টি বানভাসি পরিবারের মধ্যে প্রথম আলো ট্রাস্টের পক্ষ থেকে ত্রাণ বিতরণ করেন প্রথম আলো বন্ধুসভার সদস্যরা। ত্রাণ হিসেবে দেওয়া ব্যাগে ছিল চাল, ডাল, চিড়া ও গুড়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন গ্রাম পাঠাগার আন্দোলনের সংগঠক আবদুস সাত্তার খান, অর্জুনা অন্বেষা পাঠাগারের সভাপতি সুজন খান, টাঙ্গাইল বন্ধুসভার সাধারণ সম্পাদক শাতীল রহমান প্রমুখ।

চুকাইনগর গ্রামের হাসনা বেগম বলেন, সঞ্চয় যা ছিল, লকডাউনের সময় ভেঙে খেয়েছেন। এখন তাঁর হাতে কোনো টাকাপয়সা নেই। এ এলাকার বেশির ভাগ মানুষেরই অবস্থা তাঁর মতো। হাসনা বেগম বলেন, ‘করোনার কারণে আমাগো কাজকর্ম নাই। এর মধ্যে বন্যা। খুব অভাবে আছি, চারদিকেই বিপদ।’

ত্রাণ নিতে আসা লোকগুলোর সবার গল্প মোটামুটি একই রকমের। কয়েক মাস আগেও তাঁরা কখনো ভাবেননি এ রকম সংকটে পড়তে হতে পারে।

ষাটোর্ধ্ব রশিদ খানের কোনো জমি নেই। অন্যের জমি চাষবাস করে ভালোই চলছিলেন। বন্যার পানি আসায় তাঁকেও তিন ছেলেমেয়ে নিয়ে সংকটে পড়তে হয়েছে। আবদুল খালেক গ্রামে ছোট ক্লাসের ছেলেমেয়েদের প্রাইভেট পড়িয়ে চলতেন। করোনার কারণে কয়েক মাস ধরে পড়ানো বন্ধ রয়েছে। তাঁকেও দাঁড়াতে হয়েছে ত্রাণের সারিতে।

অর্জুনা গ্রামের আলাউদ্দিন মিয়া বলেন, ‘জীবনডাই গেল নদীর সঙ্গে, পানির সঙ্গে যুদ্ধ করতে করতে।’

বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের সহযোগিতায় আপনিও এগিয়ে আসতে পারেন।

হিসাবের নাম: প্রথম আলো ট্রাস্ট/ত্রাণ তহবিল

হিসাব নম্বর: ২০৭ ২০০ ১১১৯৪

ঢাকা ব্যাংক লিমিটেড, কারওয়ান বাজার শাখা, ঢাকা।