করোনারও চিকিৎসা দেবে মিটফোর্ড

মিটফোর্ড হাসপাতাল। ছবি: আসাদুজ্জামান
মিটফোর্ড হাসপাতাল। ছবি: আসাদুজ্জামান

করোনা রোগীদের ভর্তি রেখে চিকিৎসাসেবা দেবে পুরান ঢাকার স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ মিটফোর্ড হাসপাতাল। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, করোনা রোগীদের চিকিৎসাসেবা দেওয়ার জন্য ৮০টি শয্যা প্রস্তুত রাখা হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কাছে প্রয়োজনীয় জনবলও চাওয়া হয়েছে।

মিটফোর্ড হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল কাজী রশিদ উন নবী প্রথম আলোকে বলেন, ‘করোনা রোগীদের ভর্তি রেখে চিকিৎসাসেবা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে ৮০টি শয্যা প্রস্তুত রাখা হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কাছে চিকিৎসকসহ প্রয়োজনীয় জনবল চাওয়া হয়েছে। চিকিৎসকদের রাখার জন্য জায়গা বরাদ্দ দেওয়ার জন্য আবেদন করা হয়েছে। প্রয়োজনীয় জনবল পাওয়ার পর যত দ্রুত সম্ভব করোনা রোগী ভর্তি রেখে চিকিৎসা দেওয়া শুরু হবে। হাসপাতালের সব পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের স্পষ্ট নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে যে কোনো রোগীকে ফেরত পাঠানো যাবে না।’

একজন ছাড়া সবাই ভর্তি

গাজীপুরের বাসিন্দা ষাটোর্ধ্ব হুমায়ুন কবীরের রক্তচাপ দুই দিন ধরে অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায়। এর সঙ্গে শরীরে জ্বরও ছিল। ওষুধ খাওয়ানোর পরও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে না আসায় তাঁকে মিটফোর্ড হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাঁকে ভর্তি করে নেয়।

হুমায়ুন কবীরের ছেলে সোহেল কবির প্রথম আলোকে বলেন, ‘আগেই আমি জানতাম, ঢাকার মধ্যে মিটফোর্ড হাসপাতালে এখনো কোভিড হাসপাতাল নয়। রোগী আনলে তারা ফেরত দিচ্ছে না। যে কারণে বাবাকে আমি সরাসরি মিটফোর্ড হাসপাতালে নিয়ে এসেছি। কোনো প্রকারের বিড়ম্বনায় না পড়ে আমার বাবাকে ভর্তি করাতে পেরেছি।’

শনিবার বেলা ১১টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত মিটফোর্ড হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে অবস্থান করে দেখা গেল, যেকোনো রোগীকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ভর্তি করাচ্ছে। বেলা ২টা পর্যন্ত হাসপাতালটিতে মোট ৪০ জন রোগী ভর্তি হয়। সব রোগীকে ভর্তি করালেও শরীয়তপুর থেকে আসা একজন রোগীকে ফেরত পাঠাতে দেখা যায়। রোগীর নাম মিনহাজুল মোল্লা। বয়স তাঁর ৫৫ বছর। মিনহাজুলের মাথায় ব্যন্ডেজ। দুই চোখ ফোলা।

মাথায় আঘাত পাওয়া মিনহাজুল মোল্লা শনিবার সকালে শরীয়তপুর থেকে মিটফোর্ড হাসপাতালে আসেন। তাঁকে ভর্তি না করে ঢাকা মেডিকেলে যোগাযোগ করতে বলে মিটফোর্ড হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ছবি: আসাদুজ্জামান

মিনহাজুলের আত্মীয় আজগর আলী প্রথম আলোকে বলেন, তিন দিন আগে স্থানীয় লোকজন মিনহাজুলের মাথা ফাটিয়ে দেয়। তখন স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। দুদিন ধরে চিকিৎসা দেওয়ার পরও তাঁর অবস্থা ভালো হচ্ছিল না। স্থানীয় চিকিৎসকেরা মিনহাজুলকে ঢাকার হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে বলেন। তাই তাঁকে মিটফোর্ড হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাঁকে ভর্তি করাবে না। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলেছে।

এ ব্যাপারে মিটফোর্ড হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল কাজী রশিদ উন নবী বলেন, ভর্তি রেখে চিকিৎসা করানো প্রয়োজন, এমন রোগীকে ফেরত দেওয়া হয় না। শরীয়তপুর থেকে আসা রোগীকে কেন ফেরত পাঠানো হলো, বিষয়টি তিনি খতিয়ে দেখবেন।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দেওয়া তথ্য বলছে, শনিবার পর্যন্ত হাসপাতালে সর্বমোট ৪০৩ জন রোগী ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। গড়ে প্রতিদিন থেকে ১০০ থেকে ১২০ জন রোগী ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। আর ৮০ থেকে ৯০ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে যান। প্রতিদিন ৭ থেকে ১০ জন রোগী মারা যান।

করোনা পরীক্ষার ভিড় কমেছে

দুই সপ্তাহ আগেও মিটফোর্ড হাসপাতালের করোনার নমুনা দেওয়া কক্ষের সামনে উপচে পড়া ভিড় থাকত। কোনো রকম স্বাস্থ্যবিধি না মেনে লোকজন নমুনা দেওয়ার জন্য সেখানে ভিড় করতেন। কিন্তু সম্প্রতি করোনার নমুনা দেওয়া লোকের সংখ্যা কমেছে।

গাজীপুর থেকে আসা ষাটোর্ধ্ব হুমায়ুন কবির উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন। দুদিন ধরে তাঁর রক্তচাপ বেড়েই চলেছে। শনিবার তাঁকে মিটফোর্ড হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। ছবি: আসাদুজ্জামান

করোনার নমুনা দেওয়া লোকের সংখ্যা কেন কমেছে, জানতে চাইলে হাসপাতালটির করোনা–সংক্রান্ত বিষয় দেখভালকারী চিকিৎসক শাহ আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আগে আমাদের হাসপাতালে পুলিশ, র‌্যাব, ফায়ার সার্ভিসের বহু সদস্য প্রতিদিন করোনার নমুনা পরীক্ষা করানোর জন্য আসতেন। কিন্তু এসব লোকজন এখন আর আসছেন না। আবার অন্যান্য সময় যেমন ভিড় থাকত, সেই ভিড়ও এখন দেখা যাচ্ছে না। কয়েক দিন ধরে করোনার নমুনা দিতে আসা লোকের সংখ্যা কমেছে। শনিবার দুপুর ১২টার দিকে সেখানে দেখা গেল, করোনার নমুনা দেওয়ার জন্য একজন লোকও সেখানে উপস্থিত নেই। অথচ বেলা ২টা পর্যন্ত হাসপাতালে করোনার নমুনা দেওয়ার শেষ সময়।’

৮৭ কর্মকর্তা-কর্মচারীর করোনা জয়

দেশে করোনা শনাক্তের পর এখন পর্যন্ত মিটফোর্ড হাসপাতালের ৬৬ জন চিকিৎসকসহ মোট ২২০ কর্মকর্তা–কর্মচারী করোনায় আক্রান্ত হন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, আক্রান্তদের মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ১৯৩ জন।