করোনাভাইরাস মহামারিতে বিশ্বব্যাপী যে প্রাণহানির ঘটনা ঘটছে, তাতে আতঙ্কিত না হয়ে উপায় নেই। তাই ভয় না পেয়ে থাকতে পারেননি মৌলভীবাজারের মেডিকেল টেকনোলজিস্ট মো. শামসুল হকও (৫০)। তবে সেই ভয়কে তিনি জয় করেছেন। আর এ ক্ষেত্রে তিনি সাহস সঞ্চয় করেছেন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ থেকে।
শামসুল হক বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের সময় দেশের মানুষ যদি জীবন বাজি রেখে শত্রুর মোকাবিলা করতে পারেন, তাহলে আমি কেন জীবাণুর বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারব না! এখনকার সময়টা একরকম যুদ্ধেরই। দেশ ও মানুষকে কিছু দেওয়ার। এই যুদ্ধ সাময়িক। এই দুঃসময় একদিন কেটে যাবে। মুক্তিযুদ্ধ আমাকে এই সাহস ও শক্তি দিয়েছে। পরিবারের লোকজন পাশে দাঁড়িয়েছে। সাহস জুগিয়েছেন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও।’ করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থাকতে পারে, এমন ব্যক্তিদের পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহ করেন তিনি। এখন পর্যন্ত তিনি ২৫৪ জনের নমুনা সংগ্রহ করেছেন বলে জানালেন।
মৌলভীবাজার সদর উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শামসুল হক মেডিকেল টেকনোলজিস্ট পদে কাজ করেন মৌলভীবাজার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। মার্চ মাসের শেষের দিকে অনলাইনে প্রশিক্ষণ নিলেন করোনার উপসর্গ ও উপসর্গহীন সম্ভাব্য রোগীর নমুনা সংগ্রহের। তখন তাঁর কর্মস্থলে নমুনা সংগ্রহের বুথ ছিল না। পরে এখানে নমুনা সংগ্রহের ব্যবস্থা করা হয়।’ তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘নিজের ভয় ছিল। পরিবারের সবার ভয় ছিল। তবু একটা সময় মনে হলো, দেশের ক্রান্তিলগ্নে কিছু করতে হবে। সরকারের টাকা খাই, জনগণের টাকা খাই। এভাবে ভয় পেলে তো হবে না। মুক্তিযুদ্ধে যদি মানুষ দেশের জন্য জীবন দিতে পারে, তাহলে আমি কেন পারব না?’
শামসুল হক বলেন, ২২ মার্চ প্রথম নমুনা সংগ্রহ করেন তিনি। সেই থেকে এখন পর্যন্ত বন্ধের দিন ছাড়া প্রায় প্রতিদিনই তিনি নমুনা সংগ্রহ করছেন। একদিন সর্বোচ্চ ২৮টি নমুনা সংগ্রহ করেছিলেন। এ পর্যন্ত তিনি ২৫৪ জনের নমুনা সংগ্রহ করেছেন। এর মধ্যে করোনা পজিটিভ হয়েছে ৮৫ জনের। মৃত তিনজনের নমুনাও তিনি সংগ্রহ করেছেন। নমুনা সংগ্রহের কাজটি এখন তাঁর কাছে আর ভয়ের নয়। পরিবারের সদস্যদের ভয়ভীতি কেটে গেছে। এ ছাড়া জেলার সিভিল সার্জন, মৌলভীবাজার সদর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্মকর্তারা তাঁকে সাহস ও উৎসাহ দিয়েছেন বলে তিনি জানান। তবে তাঁর একটা আফসোস হলো, সরকার কোভিড হাসপাতালে কর্মরতদের প্রণোদনার ব্যবস্থা করলেও নমুনা সংগ্রহকারীদের জন্য কিছু নেই।
মৌলভীবাজার সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা চিকিৎসক বিনেন্দু ভৌমিক বলেন, ‘নিশ্চিত কোভিড-১৯ জেনে যারা বুক চিতিয়ে দিয়েছেন, তাঁদের একজন শামসুল হক। সদরের নানা প্রান্ত তিনি ছুটে গেছেন নমুনা সংগ্রহ করতে। কেউ তাঁর এই নির্ভীক কাজের মূল্যায়ন করুক আর না করুক, আমি তাঁকে শ্রদ্ধা করে যাব।’