করোনাকালে বাংলাদেশ বিমানে আন্তর্জাতিক ভ্রমণের অভিজ্ঞতা

নমপেন বিমানবন্দরে চেকইন লাইনে।
নমপেন বিমানবন্দরে চেকইন লাইনে।

বর্তমান সময়টা যে নিঃসন্দেহে বিশ্ববাসীর জন্য এক চরম স্বাস্থ্যনিরাপত্তার ঝুঁকিতে চলছে, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। মহামারি কোভিড-১৯–এর প্রাদুর্ভাবের কারণে সৃষ্ট ব্যক্তিগত, সামাজিক, রাষ্ট্রীয় এবং বিশ্বাব্যাপী যে অবর্ণনীয় সামগ্রিক অনিশ্চয়তা এবং সংকট সৃষ্টি হয়েছে এর শেষ কোথায় বা কবে, তা কেউ জানে না। সাধারণ মানুষ এখন দ্বিমুখী বিপদে। ঘরের বাইরে গেলে করোনায় সংক্রমণের ঝুঁকি আর দীর্ঘদিন ঘরে বসে থাকলে অনেকের পেটের ক্ষুধা নিবারণেরও উপায় নেই।

অনেক রাষ্ট্র কোভিড-১৯–এর মরণঘাতী সংক্রমণ থেকে তাদের জনগণ ও দেশকে বাঁচাতে উপদ্রুত এলাকার জনগোষ্ঠীকে এই সংকটকালের জন্য বিনা মূল্যে চিকিৎসাসেবা এবং প্রয়োজন অনুযায়ী ক্ষুধা নিবারণের ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব নিয়েছে। কোভিড-১৯–এর সঙ্গে দীর্ঘায়িত হতে পারে আমাদের জীবন চলা এমন একটা অপ্রিয় বিষয়কে মাথায় রেখে জীবন ও জীবিকাকে স্বাভাবিক পর্যায়ে ফেরানোর এবং তাকে সচল রাখার তাগিদে এই সংকটকালে একটা নিরাপদ ও যৌক্তিক সমাধান খুঁজে বের করা অতি জরুরি হয়ে পড়েছে। কী সে সমাধান, তা নিয়ে আশা করি আমাদের দেশের যথাযথ কর্তৃপক্ষ এবং দায়িত্বপ্রাপ্ত বিশেষজ্ঞ গুণীজনেরা নিশ্চয়ই ভাবছেন। কোভিড-১৯–কে প্রতিরোধ সম্পর্কে কম্বোডিয়া ও অন্যান্য দেশ কী কী কার্যকর ব্যবস্থা নিয়েছে, সুযোগ হলে পরের লেখায় তা তুলে ধরার বাসনা রইল। আজ এই লেখায় কেবল করোনাকালে আন্তর্জাতিক ভ্রমণব্যবস্থা কতটা সমস্যা–সংকুল এবং তা থেকে উত্তরণের উপায়গুলো কেমন হয়, তা নিয়েই আলোচনা সীমাবদ্ধ রাখছি।

স্বাভাবিক সময়ে, অর্থাৎ করোনার প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার আগে বাংলাদেশ থেকে কম্বোডিয়াতে সরাসরি যাওয়ার কোনো ফ্লাইট ছিল না বা নেই। ঢাকা থেকে ব্যাংকক, কুয়ালালামপুর, সিঙ্গাপুর, হ্যানয়, গুয়াংজু বা অন্য কোনো ট্রানজিট পয়েন্ট ব্যবহার করে নমপেন, তথা কম্বোডিয়াতে যাওয়া যায়। তবে ভ্রমণের সময় ও সুবিধা বিবেচনায় বাংলাদেশিদের জন্য ঢাকা-ব্যাংকক-নমপেন পথটি অনুসরণ করা সহজ। ঢাকা ব্যাংকক ফ্লাইং টাইম আনুমানিক ২ ঘণ্টা ১৫ মিনিট এবং ব্যাংকক-নমপেন ১ ঘণ্টা হলেও ট্রানজিট সময়কে হিসাব করে কিছু কিছু এয়ারলাইনসে ফ্লাইট, যেমন থাই এয়ারওয়েজ, ব্যাংকক এয়ারওয়েজে দুপুরে ঢাকা ত্যাগ করে রাত ৮টায় এবং ১১টার মধ্যে নমপেন পৌঁছা যায়।
ফিরতি পথে স্থানীয় সময় বিকেল ৫টায় নমপেন ত্যাগ করে আনুমানিক রাত ১টায় বা রাত ৯টায় নমপেন ত্যাগ করলে পরদিন দুপুর সাড়ে ১২টায় ঢাকায় পৌঁছা যায়। এ ছাড়া বিকল্প রুটে আসা যায়। এগুলো সবই স্বাভাবিক সময়ের কথা। আমরা জানি, করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে এ বছরের ২৬ মার্চ থেকে আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের এই রুটগুলোসহ আরও অনেক দেশের সঙ্গে আকাশ, স্থল এবং সমুদ্রপথের যোগাযোগ অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়। ইতিমধ্যে বিভিন্ন দেশে আটকে পড়া বাংলাদেশিরা নানা দিক থেকে গভীর সমস্যার মুখোমুখি হতে থাকেন। কম্বোডিয়াতে আটকে পড়া বাংলাদেশিদের ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম হয়নি।

যাঁরা ব্যবসায়িক কাজে এবং বেড়াতে এসেছিলেন অল্প সময়ের জন্য বা যাঁরা বিভিন্ন নির্মাণ কোম্পানিতে অস্থায়ী চাকরি করতেন, তাঁদের অনেকে কম্বোডিয়াতে আটকে পড়ে গিয়েছিলেন, তাঁরাই মূলত বেশি কষ্টে পড়ে যান এই করোনাকালে আটকা পড়ার কারণে। থাকা–খাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ হাতে না থাকায় অনেককে মানবেতর জীবন কাটাতে হয় দিনের পর দিন। এ পরিস্থিতিতে কম্বোডিয়াতে আটকে পড়া বাংলাদেশিরা দারুণ মানবিক বিপর্যয়, দেশে ফেরার অনিশ্চয়তা ও দুশ্চিন্তার মুখোমুখি হয়ে পড়েন। পরিস্থিতির অনিশ্চয়তার পাশাপাশি অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য সেখানে অবস্থানের জন্য বেশির ভাগ লোকেরই আর্থিক অনটন দেখা দেয়। এই সংকটময় সময়ে আমরা দীর্ঘদিন ধরে যাঁরা কম্বোডিয়াতে কর্মরত ছিলাম, তাঁরা সাধ্যমতো সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেওয়াতে সাময়িকভাবে কষ্টের কিছুটা লাঘব হলেও স্থায়ী সমাধানের পথ খুঁজে পেতে যথেষ্ট বেগ পেতে হয়। উল্লেখ্য, কোভিড-১৯–এর কারণে আমিও অন্যদের মতো ঘটনাচক্রে আটকা পড়ে যাই । প্রায় দুই দশক ধরে আমি কম্বোডিয়াতে এশিয়ান উন্নয়ন ব্যাংক এবং বিশ্বব্যাংকের সাহায্যপুষ্ট কম্বোডিয়ার জাতীয় মহাসড়ক ও প্রাদেশিক সড়ক নির্মাণ ও উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের সঙ্গে ইন্টারন্যাশনাল ম্যাটেরিয়াল ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে বিভিন্ন প্রকল্পে কর্মরত ছিলাম। এই দফায় খণ্ডকালীন চাকরির শর্তানুসারে অর্পিত দায়িত্ব পালন শেষে ৪ এপ্রিল আমার স্বাভাবিক ছুটিতে দেশে ফেরার পূর্বপরিকল্পনা ছিল, কিন্তু পরিবর্তিত পরিস্থিতির কারণে তা সম্ভব হয়নি এবং আমিও আটকে পড়াদের অংশ হয়ে পড়ি। অত্যাবশ্যক হয়ে পড়ে দেশে ফেরা।

নমপেন বিমানবন্দরে লাল–সবুজের পতাকাবাহী বাংলাদেশ বিমানে ওঠার আগে।

কোভিড-১৯–এর সংক্রমণ ঠেকাতে বাংলাদেশসহ বিশ্বের অনেক দেশ ইতিমধ্যে তাদের আন্তর্জাতিক সব ফ্লাইট অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত ঘোষণা করে। দেশে ফেরার সব পথ যখন বন্ধ, তখন কম্বোডিয়াতে আটকে পড়া বাংলাদেশিদের দুর্দশার কথা গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নেয় বাংলাদেশ দূতাবাস, ব্যাংকক। দেশের নাগরিকদের বিদেশে বিপদ থেকে উদ্ধার করার জন্য একটি দেশের দূতাবাসের যা কিছু করণীয়, তার সবটুকুই তারা নিঃসন্দেহে অন্তর দিয়ে করেছে আমাদের দেশে ফেরার ব্যবস্থা করার জন্য। আমরা তাদের কাছে চিরকৃতজ্ঞ এবং ফলপ্রসূ ভূমিকা নেওয়ার জন্য দূতাবাসের ভূয়সী প্রশংসা করতে আমাদের কোনোই কার্পণ্য নেই। বাংলাদেশ বিমানের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিশেষ ফ্লাইটের ব্যবস্থা করার ক্ষেত্রে তাদের নিরলস প্রচেষ্টা ও সার্বক্ষণিক সহযোগিতার বিষয়টি আমাদের মনে দূতাবাসের কার্যক্রম সম্পর্কে আশা পূরণের দারুণ সহায়ক হয়েছে। বাংলাদেশি নাগরিকদের বিপদ থেকে মুক্ত করার প্রয়োজনে তাদের মূল্যবান অভিভাবকত্ব ও পদক্ষেপ বিরল ইতিহাস হয়ে থাকবে। এ ক্ষেত্রে অন্যান্য দেশে বাংলাদেশ দূতাবাস/ কূটনৈতিক মিশনগুলো, বাংলাদেশ দূতাবাস ব্যংককের মতো পদক্ষেপ অনুসরণ করলে ত্বরিত যেকোনো সমস্যার সমাধান আশা করা যেতে পারে। আমরা যাঁরা ওই ফ্লাইটে দেশে ফিরতে পেরেছি, তাঁরা নিজেদের এবং পরিবারের পক্ষ থেকে দূতাবাসের সংশ্লিষ্ট সব কর্মকর্তার প্রতি সবিনয়ে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি। দুঃসময়ে তাঁদের মূল্যবান সহযোগিতা আমাদের মনে গভীর আনন্দের রেখাপাত করেছে। এখানে উল্লেখ্য যে বাংলাদেশ দূতাবাস ব্যাংকক, কম্বোডিয়ার জন্যও অনাবাসিক দূতাবাসের দায়িত্বে আছে। উল্লেখ না করলেই নয়, কম্বোডিয়ায় অবস্থানরত কয়েকজন বাংলাদেশি ভাই, যাঁরা এ প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করার জন্য নিজ নিজ অবস্থান থেকে সাধ্যমতো চেষ্টা করেছেন, স্বদেশিদের প্রতি তাঁদের অকৃত্রিম টান, বিপদমুক্ত করার আগ্রহ এবং ভালোবাসার বন্ধন দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে ভবিষ্যতের জন্য ।

আমিসহ মোট ৫৭ জন বাংলাদেশী যাত্রী ৭ জুলাই কম্বোডিয়া থেকে বাংলাদেশ বিমানের চার্টার্ড ফ্লাইট বিজি-৪১৬২–তে স্থানীয় সময় বেলা ৩টায় নমপেন ত্যাগ করি। সরাসরি হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে আমরা পৌঁছাই বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৬টার কিছু পরে। বাংলাদেশের ইতিহাসে এই বিশেষ ফ্লাইটটিই ছিল কম্বোডিয়ার আকাশে প্রথম বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের সাধারণ যাত্রীবাহী ফ্লাইট, সুতরাং এটি একটি মাইলফলকও বটে।

ভ্রমণদিনের অভিজ্ঞতা
এবার একটু পেছন ফিরে তাকানো যাক। দীর্ঘদিন প্রচেষ্টার পর জাতীয় পতাকাবাহী বাংলাদেশ বিমান নমপেন টু ঢাকা রুটে একটি বিশেষ ফ্লাইটের অনুমোদন দেওয়ার পর আমরা প্রস্তুতি নিতে শুরু করলাম দেশে ফেরার জন্য। সমস্যা দেখা দিল অনেকের কাছে টিকিট ক্রয়ের টাকা ছিল না এবং কীভাবে টিকিটের টাকা পরিশোধ করা যাবে তা নিয়ে। তবে বাংলাদেশ বিমান দেরি না করে এর একটা সহজ উপায় নির্ধারণ করে দিল, সুযোগ দেওয়া হলে যাত্রীরা তাঁদের আত্মীয়স্বজনের মাধ্যমে বাংলাদেশেই বিমানের নির্ধারিত ব্যাংক হিসাবে টিকিটের জন্য ধার্যকৃত টাকা জমা দিতে পারবেন। এই ব্যবস্থা হওয়ায় সবার জন্য দেশে ফেরা সহজ হয়ে গেল। এরপর সবাই স্বাস্থ্যসংক্রান্ত সনদ স্থানীয় চিকিৎসাকেন্দ্র থেকে সংগ্রহ করে যাত্রার জন্য তৈরি হয়ে গেলাম।

লাল-সবুজের পতাকাবাহী বাংলাদেশ বিমান প্রথমবার নমপেন থেকে ঢাকায় আসে।

৭ জুলাই যাত্রার নির্ধারিত সময় ছিল স্থানীয় সময় বেলা আড়াইটা। আমরা নমপেন ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টে (স্থানীয়ভাবে যার নাম পচেনতং ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট) টিকিটে দেওয়া নির্দেশমত যাত্রা শুরুর তিন ঘণ্টা আগে পৌঁছালাম। এই এয়ারপোর্টে বহুবার এসেছি অতীতে, কিন্তু করোনাকালে এবার প্রথম আসা। অন্য সময়ের আলোকোজ্জ্বল–ঝলমলে জীবন্ত বিমানবন্দরটি এবার দেখা গেল একেবারে নির্জীব। বিশেষ ফ্লাইট ছাড়া ওই দিন দুপুরে সম্ভবত আর কোনো ফ্লাইট ছিল না বলেই মনে হয়েছে। আমাদের জন্য যে প্রবেশপথটি খোলা হয়েছিল এর বাইরে আমরা সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়ালাম। ভেতর থেকে একজন একজন করে ডাকা শুরু হলো। প্রথম পরীক্ষা শরীরের তাপমাত্রা চেক করার। শরীরে তাপমাত্রা মাপার জন্য স্ক্রিনিং চলছিল। পর্দার সামনে দাঁড়িয়ে পড়ার পর বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দুটি শব্দ বারবার কানে আসতে থাকলো আর তা হল ওয়েট ওয়েট, অর্থাৎ অপেক্ষা করো অপেক্ষা করো । টেনশন এর কারণেই হোক বা অন্য কোনো কারণে হোক অনেকেরই শরীরের তাপমাত্রা নির্ধারিত লিমিট অতিক্রম করায় বেশি করে পানি পান করে অপেক্ষা করে আবার পরীক্ষা, কারও কারও ক্ষেত্রে তিন–চারবার চেষ্টার পর শেষে সবাই এ পরীক্ষায় পাস করলেন এবং চেকইন ও ইমিগ্রেশন এলাকায় যাওয়ার সুযোগ পেলাম। নমপেন বিমানবন্দরটি খুব বড় না হলেও একেবারে ছোট নয়। অস্বাভাবিক অবস্থার কারণে বিমানবন্দরের রক্ষণাবেক্ষণ খরচ বাঁচানোর জন্য কর্তৃপক্ষ কেন্দ্রীয় শীতাতপ মেশিনসহ অনেক কিছুই বন্ধ রেখেছেন, আলোর স্বল্পতাও লক্ষ করা গেছে। সুতরাং চেকইন ও বহির্গমন এলাকাগুলো ছিল অস্বস্তিকর গরম ও অপ্রতুল আলোর সমস্যায় আচ্ছাদিত। বহির্গমন লাউঞ্জের বাথরুমটিতে লাইট ছিল না । পানীয় জলের কলে লেখা আছে সাময়িকভাবে ব্যবহারযোগ্য নয়। সবকিছু মিলিয়ে এ ছিল এক ভুতুড়ে পরিবেশ, নতুন অভিজ্ঞতা।

স্থানীয় সময় বেলা ২টা ৪০ মিনিটে আমাদের বাসে করে প্লেনের কাছে নেওয়া হলো। বাস থেকে নেমে বাংলাদেশ এয়ারলাইনস লেখা বিমানটি দেখে মুহূর্তেই অফুরন্ত আশা মনে ভিড় জমাল, বিশ্বাস সঞ্চিত হলো মনে এই ভেবে যে এবার তাহলে সত্যিই প্রাণপ্রিয় নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার পথ একেবার হাতের মুঠোয় এসে ধরা দিয়েছে। পরিবার–পরিজন, আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব সবার সঙ্গে আবার দেখা হওয়ার সুপ্ত আশাটা আর একবার মাথাচাড়া দিয়ে হৃদয়ের গভীর থেকে একেবার মুখাবয়বে হাজির হলো। একসময় বিমানে উঠে গেলাম, আসন গ্রহণ করার পর দেখা গেল, পেছনের দিকের কিছু আসন খালি থাকলেও সামনের প্রতিটি সিটেই যাত্রী, অর্থাৎ সামাজিক দূরত্ব মানা সম্ভব হয়নি। এর পেছনে একটি যুক্তি থাকতে পারে, তা হলো বর্তমানে কম্বোডিয়াতে কোভিড-১৯ সংক্রমিত রোগী নেই বললেই হয় এবং এ পর্যন্ত সে দেশে কেউ এ রোগে মারা যাননি। সংগত কারণেই হয়তোবা ধরে নেওয়া হয়েছিল এই যাত্রীরা কম ঝুঁকিপূর্ণ, বাস্তবেও সেটা অনেকটাই সত্য ঘটনা বটে।

বেলা ৩টা ১০ মিনিটের দিকে আমাদের প্লেন নমপেন ত্যাগ করে ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা শুরু করে। দেশে ফেরার প্রথম পর্ব পেরিয়ে এবার আমার দেশের অনেক পরিচিত হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্রবেশ করলাম। অনেকদিন পর এসে এয়ারপোর্টকে প্রকৃতপক্ষেই অনেকটা ভিন্ন ধরনের লাগছিল এই করোনার সময়ে, বিশেষত অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থাপনার দিকটা। বিমানবন্দরের আগমনী এলাকায় নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও ইমিগ্রেশনের দায়িত্বে নিয়োজিত সবাইকে পিপিই ব্যবহার করতে দেখা গেছে এবং সবাই বেশ সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছেন যাত্রীদের দুর্ভোগ কমাতে, যা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। বিমানে আরোহণ-নির্গমনের ক্ষেত্রে ততটা নিয়ম মানতে দেখা না গেলেও আগমনী এলাকায় যাত্রীদের লাইনে দাঁড়ানোর বা সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার ব্যবস্থা খুব ভালো লেগেছে।

আমাদের ফ্লাইটটি যেহেতু একটি বিশেষ ফ্লাইট ছিল, যে দেশ থেকে এসেছে সে দেশের করোনা পরিস্থিতি আগেই বলেছি, এ পর্যন্ত সেখানে একজন লোকও এ রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রাণ হারাননি, তা ছাড়া প্রত্যেক যাত্রী স্বাস্থ্যসংক্রান্ত সনদ জমা দেন আগমনী ডেস্কে, সে কারণে হয়তো যাত্রীদের শরীরের তাপমাত্রা পরীক্ষা করার পর ইমিগ্রেশনের দিকে যেতে অনুমতি দেওয়া হয়। এভাবেই টান টান উত্তেজনা আর উৎকণ্ঠার অবসান ঘটিয়ে করোনাকালের আন্তর্জাতিক ভ্রমণের পরিসমাপ্তি ঘটে প্রিয় দেশের মাটিতে পা রাখার মাধ্যমে। বাড়িতে পৌঁছে এখন স্বেচ্ছায় ১৪ দিনের হোম কোয়ারেন্টিনে আছি নিজের, আপনজনদের ও দেশের বৃহত্তর স্বাস্থ্য সুরক্ষার স্বার্থে। এক বছর ১০ মাস বয়সের আমার একটি নাতি আছে, সে দূর থেকে বারবার ইচ্ছা প্রকাশ করছে আমার কাছে আসার জন্য, তাকে আদর করার জন্য কিন্তু অনেক কষ্ট হলেও নিজেকে ওর কাছ থেকে দূরে রাখতে হচ্ছে। এ ছাড়া বিকল্প কোনো সমাধান নেই কোয়ারেন্টিনের দিনগুলো শেষ না হওয়া পর্যন্ত।


*প্রকৌশলী, ক্যান্টরোড, ধাপ, রংপুর