বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসে যুক্ত হচ্ছে আরও দুটি ড্রিমলাইনার ৭৮৭–৯ মডেলের উড়োজাহাজ। বিশ্বের সর্বাধুনিক এই উড়োজাহাজ এনে লাভবানই হচ্ছে বিমান। কারণ, বর্তমান বাজারমূল্যের চেয়ে খানিকটা কম দামে ড্রিমলাইনার দুটি বাংলাদেশের কাছে বিক্রি করছে নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বোয়িং কোম্পানি। কম দামে উড়োজাহাজ পেলেও আরও কিছুটা দর–কষাকষি করতে চায় বিমান কর্তৃপক্ষ। বনিবনা হলে চলতি বছরের ডিসেম্বর মাসের মধ্যে ড্রিমলাইনার দুটি দেশে চলে আসার সম্ভাবনা রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের বোয়িং কোম্পানি তিনটি মডেলের ড্রিমলাইনার তৈরি করছে। ড্রিমলাইনার ৭৮৭-৯ মডেলের উড়োজাহাজ এর মধ্যে একটি। এর দৈর্ঘ্য ২০৬ ফুট। এই মডেলের একটি উড়োজাহাজের মূল্য প্রায় ২ হাজার ৪৭১ কোটি টাকা। এটি ৩০০ যাত্রী বহন করতে পারে। এটি টানা প্রায় ১৪ হাজার কিলোমিটার উড়তে পারে।
এই মডেলের দুটি উড়োজাহান বাজারমূল্যের চেয়ে খানিকটা কমে কিনতে পারবে বাংলাদেশ।
বোয়িংয়ের সুপরিসর দুটি উড়োজাহাজ কেনার বিষয়টি আলোচনায় আসে ১৭ সেপ্টেম্বর। এদিন হজরত শাহজালাল বিমানবন্দরে বিমানের সর্বশেষ সংযোজন হওয়া ড্রিমলাইনার বোয়িং ৭৮৭–৮ মডেলের ‘রাজহংস’ উদ্বোধনের সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ দুটি উড়োজাহাজ কেনার কথা জানান। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের সময় বোয়িং কোম্পানির প্রতিনিধিরাও উপস্থিত ছিলেন। তখন প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা খবর পেয়েছি, বোয়িং আরও দুটি উড়োজাহাজ বিক্রি করবে। এখন পর্যন্ত কেউ এর অর্ডার দেয়নি। সুযোগটা আমরা নেব।’
প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে সবুজসংকেত পাওয়ার পর দ্রুত ড্রিমলাইনার কেনার প্রক্রিয়া শুরু হয়। এ জন্য বেশ কয়েক দফা বোয়িং কোম্পানির সঙ্গে বিমান কর্তৃপক্ষের আলোচনা হয়। আলোচনার অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে গতকাল শনিবার বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মহিবুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘যে দুটি ড্রিমলাইনার ৭৮৭–৯ আমরা কিনতে যাচ্ছি, সেগুলো তৈরি হয়ে আছে। চীনের একটি বিমান পরিবহন সংস্থার এগুলো কেনার কথা ছিল। তারা এখন উড়োজাহাজগুলো কিনছে না। বোয়িং কোম্পানিও আমাদের কাছে বাজারমূল্যের চেয়ে কিছুটা কম দামে বিক্রি করতে চাইছে। তবে আমরা দষ–কষাকষি করছি। আগামী অক্টোবর মাসের প্রথম সপ্তাহে বোয়িং কোম্পানির সঙ্গে আমাদের আলোচনা হবে। আশা করছি, উড়োজাহাজ দুটি ডিসেম্বর মাসের দিকে দেশে আসবে।’
নতুন দুটি ৭৮৭–৯ মডেলের ড্রিমলাইনার এলে বিমানের নিজস্ব উড়োজাহাজের সংখ্যা হবে ১২। এর মধ্যে ড্রিমলাইনার ৭৮৭–৮ উড়োজাহাজ রয়েছে চারটি। এ ছাড়া লিজে নেওয়া আছে আরও ছয়টি উড়োজাহাজ। সব মিলিয়ে বিমানবহরে উড়োজাহাজের সংখ্যা চলতি বছরের শেষে দাঁড়াতে পারে ১৮টি। তবে বর্তমান ক্রুসহ লোকবল দিয়ে নতুন দুটি উড়োজাহাজ পরিচালনা করা সম্ভব হবে কি না, এ নিয়ে আলোচনা করেছে বিমান কর্তৃপক্ষ। বিমান সূত্রে জানা গেছে, ৭৮৭–৯ ড্রিমলাইনার পরিচালনার বিষয়ে গত ২৬ আগস্ট বিমানের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যানের কাছে একটি প্রেজেন্টেশন দেখানো হয়। এরপর বিমানের পক্ষ থেকে একটি ইতিবাচক নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
ড্রিমলাইনার চালানোর অভিজ্ঞতা রয়েছে, বিমানের এমন কয়েকজন পাইলট জানান, ড্রিমলাইনার ৭৮৭–৮ মডেলের সঙ্গে ৭৮৭–৯ মডেলের উড়োজাহাজের পার্থক্য কেবল আকৃতিতে। এর ককপিট একই পদ্ধতিতে পরিচালিত হয়। বাংলাদেশের চারটি ড্রিমলাইনার ৭৮৭–৮ আনার আগে যুক্তরাষ্ট্রে ড্রিমলাইনার ৭৮৭–৯ মডেলের উড়োজাহাজ দিয়েই তাঁরা প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন। তাই নতুন মডেলের দুটি ড্রিমলাইনার চালাতের বিমানের পাইলটদের কোনো অসুবিধা হবে না।
বিমান সূত্র জানায়, যে দুটি ড্রিমলাইনার কেনার আলোচনা চলছে, সেগুলোর ক্রেতা ছিল চীনের হেইনান এয়ারলাইনস। বোয়িং কোম্পানিকে নতুন করে আরও ৭৬টি উড়োজাহাজ কেনার অর্ডার দিয়েছে তারা। এর ২৮টি ড্রিমলাইনার বোয়িং ৭৮৭-৯ মডেলের উড়োজাহাজ ছিল। কিন্তু মার্কিনদের সঙ্গে বাণিজ্যযুদ্ধের কারণে হেইনান এয়ারলাইনস বোয়িংয়ের কাছ থেকে উড়োজাহাজ কেনা বন্ধ করেছে। আর এ কারণেই বোয়িং কোম্পানির কাছে রয়েছে বেশ কয়েকটি ড্রিমলাইনার।
কোম্পানির ওয়েবসাইট থেকে জানা যায়, একটি হলো ৭৮৭-৮। এই মডেলের উড়োজাহাজে ২৭১ জন যাত্রী ভ্রমণ করতে পারে। এর দৈর্ঘ্য ১৮১ ফুট। এর মূল্য প্রায় ২ হাজার ১০০ কোটি টাকা। একটানা সাড়ে ১৩ হাজার কিলোমিটার দূরত্ব পাড়ি দিতে পারে এটি। ড্রিমলাইনারের সর্বাধুনিক মডেল হলো ৭৮৭-১০। এর দাম প্রায় ২ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। এটি সাড়ে তিন শ যাত্রী বহন করতে পারে। একটানা এটি উড়তে পারে প্রায় ১২ হাজার কিলোমিটার।