বিস্তীর্ণ জলাশয়। সবুজের মধ্যে সাদা, হালকা গোলাপি আর বেগুনির মিশেলে ফুটে আছে রাশি রাশি ফুল। দেখে মনে হচ্ছে শিল্পীর তুলিতে আঁকা কোনো ছবি।
পাবনা জেলা শহরের জামালপুর এলাকায় পাবনা-ঢাকা মহাসড়কের দুই পাশে অপরূপ এই ছবি তৈরি করেছে কচুরিপানার ফুল। ফুলটি কোনো সুবাস না ছড়ালেও এর নান্দনিক রূপে মুগ্ধ পাবনা শহরবাসী।
স্থানীয় লোকজন জানান, মহাসড়কের দুপাশের দীর্ঘ জলাশয় বছর তিনেক আগেও পরিষ্কার ছিল। স্বচ্ছ পানিতে মাছ চাষ করা হতো। দিনে দিনে বিস্তীর্ণ এ জলাশয় কচুরিপানায় ভরে ওঠে। এরপর ফুল ফুটতে শুরু করে। তবে গত বছরও একসঙ্গে এত ফুল দেখা যায়নি। এবার চৈত্রের প্রথম সপ্তাহে বৃষ্টি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কচুরিপানার ফুল ফুটতে শুরু করে। কয়েক দিনের মধ্যে পুরো জলাশয় ফুলে ফুলে ছেয়ে যায়। মনোরম হয়ে ওঠে পুরো এলাকা। ফুলের শোভা দেখতে কিংবা অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সঙ্গে ছবি তুলতে জলাশয়ের কাছে ভিড় জমাতে থাকে শহরের লোকজন।
১৩ এপ্রিল বিকেলে সরেজমিনে দেখা যায়, যেন ফুলের চাদরে ঢেকে আছে পাবনা-ঢাকা মহাসড়কের দুপাশ। কেউ কেউ মহাসড়ক দিয়ে যাওয়ার সময় গাড়ি থামিয়ে জলাশয়ের পাশে দাঁড়িয়ে একটু উপভোগ করে নিচ্ছেন এ সৌন্দর্য। অনেক শৌখিন আলোকচিত্রী ক্যামেরা বন্দী করছেন এ মনোরম দৃশ্য। যাঁর ক্যামেরা নেই, তিনি মুঠোফোনেই ধরে রাখছেন এ ভালো লাগা।
পাবনার প্রকৃতি ও বন্য প্রাণিবিষয়ক আলোকচিত্রী সুপ্রতাপ চাকী জানান, তিনি দীর্ঘদিন ধরে ছবি তোলেন। বহু রকম ফুলেরও ছবি তুলেছেন। কিন্তু একসঙ্গে কখনো কচুরিপানার এত ফুল দেখেননি। তাই খবর পেয়ে ছুটে এসেছেন ছবি তুলতে।
শহরের কাচারিপাড়া মহল্লার উম্মে রজনী বলেন, ‘কচুরিপানাকে এত দিন আগাছা বলেই জানতাম। সেই কচুরিপানার ফুলে যে এত মনোমুগ্ধকর পরিবেশ তৈরি হতে পারে, তা এখানে না এলে বুঝতাম না।’
সরকারি এডওয়ার্ড কলেজের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শাহনাজ পারভীন বলেন, কচুরিপানা খুব দ্রুত বংশবিস্তার করতে পারে। এটি প্রচুর পরিমাণে বীজ তৈরি করে, যা ৩০ বছর পরও অঙ্কুরোদ্গম হতে পারে। পানি পেলে কচুরিপানার ফুল প্রায় সারা বছরই ফোটে। তবে বেশি দিন স্থায়ী হয় না। নাজুক এ ফুল কাণ্ড থেকে আলাদা করলে খুব দ্রুতই নুয়ে পড়ে। তাই এ ফুল জলাশয়ে যতক্ষণ থাকে, ততক্ষণই মুগ্ধতা ছড়ায়।
গ্রামাঞ্চলে এই কচুরিপানা ফুলটিকে অনেকে ‘হেনা’ বলে ডাকেন। কিছু এলাকায় এটি ‘কস্তুরি’ ফুল নামেও পরিচিত। এর আদি নিবাস দক্ষিণ আমেরিকায়। এরা মূলত স্রোতহীন স্বাদু পানিতে জন্মায়। মুক্তভাবে ভাসমান বহুবর্ষজীবী জলজ উদ্ভিদের মধ্যে এই কচুরিপানা অন্যতম। সবুজ পাতাবিশিষ্ট এই কচুরিপানা পানির ওপরে এক মিটার পর্যন্ত বড় হতে পারে।