ওয়াসার পর এবার রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ তথা রাজউকের ওপর চটেছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস। রাজউক একটি হাউজিং কোম্পানি হয়ে গেছে—এমন মন্তব্য করে এই সংস্থাকে মুক্ত করার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে ‘আধুনিক ও জনকল্যাণমূলক মহানগরী বিনির্মাণে বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা চিহ্নিত করে কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ণ’–সংক্রান্ত সভায় মেয়র এসব কথা বলেন। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের ক্রিস্টাল বল রুমে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়।
এর আগে নগররে জলাবদ্ধতার জন্য মেয়র তাপস এবং উত্তরের মেয়র আতিকও ওয়াসার কর্মকাণ্ডে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। ওয়াসার খালের দায়িত্ব তাঁরা নিজেরা চান।
আজকের অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম। এতে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র জাহাঙ্গীর আলম, স্থপতি নগর পরিকল্পনাবিদ ইকবাল হাবিব, বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, বাংলাদেশ ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউটের সভাপতি মো. আবদুস সবুর, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিল, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক আকতার মাহমুদ প্রমুখ বক্তব্য দেন।
রাজউককে উদ্দেশ করে শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, ‘তাদের রাজধানী উন্নয়ন করার জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। হাউজিং কোম্পানি করার জন্য নয়। শুধু জমি বিক্রি করবেন, আর কে কয়টা প্লট নেবেন আর কোথায় টাকা পাঠাবেন, সেই চিন্তা বাদ দেন। কীভাবে রাজধানীকে গড়ে তুলতে হবে, সেই পরিকল্পনা দেন।’
ক্ষোভ প্রকাশ করে ডিএসসিসির মেয়র বলেন, ‘ডিটেইল এরিয়া প্ল্যান (ড্যাপ) করেছেন, আজ পর্যন্ত বাস্তবায়ন করতে পারেননি। নগরীর মধ্যে পয়োনিষ্কাশন প্ল্যান্টের পরিকল্পনা করে বসে আছেন। এটা আমি হতে দেব না। দাসেরকান্দিতে করা হচ্ছে, এটার পরিণতি কী হবে, সেটা দেখা যাবে।’
তাপস বলেন, ‘আমি আগেও বলেছি, কোনো ব্যক্তির প্রতি আমার বিষোদগার নেই। ঢাকা শহরের সব জলাশয়, সব পুকুর, সব খাল আমরা সিটি করপোরেশন নিয়ন্ত্রণে নিতে চাই। আমরা পরিচালনা করতে চাই, আমাদের সুযোগ দেন। আমরা দেখাব এটা সম্ভব।’
এদিকে ঢাকায় কার্যরত সব সংস্থাকে ১ অক্টোবরের আগেই করপোরেশনের কাছে প্রকল্প–সংশ্লিষ্ট তথ্য জমা দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন শেখ ফজলে নূর তাপস। তিনি বলেন, ‘ঢাকায় কার্যরত সব সংস্থা, যারা ঢাকার ওপর নির্যাতন করে থাকে, তাদের সবিনয় নিবেদন করব, আগামী ১ অক্টোবরের আগেই ঢাকাকেন্দ্রিক আপনাদের সব প্রকল্প আমাদের কাছে পেশ করুন। ১ অক্টোবরের মধ্যে আমরা সমন্বয় করব। কারণ ঢাকাকে নিয়ে আমাদের যে পরিকল্পনা, সেই পরিকল্পনার সঙ্গে যাতে সাংঘর্ষিক কিছু না হয়।’
সব সংস্থার উদ্দেশে মেয়র বলেন, ‘অবশ্যই আপনারা আপনাদের প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে পারবেন কিন্তু এক জায়গায় তিনবার কাটতে পারবেন না। আমাদের অনুমতি নিয়ে এক জায়গায় একবারই কাটতে পারবেন।’
‘আমরা আমাদের প্রকল্পগুলো সমন্বয় করে একসঙ্গে বাস্তবায়ন করব। যাতে ঢাকাবাসী বিড়ম্বনার শিকার না হয়। ১ অক্টোবরের পর আমি যদি আপনাদের সুযোগ না দিই, তখন কিন্তু আপনারা দয়া করে তদবির করবেন না। তাহলে পরবর্তী বছরের ১ অক্টোবর পর্যন্ত আপনাদের অপেক্ষা করতে হবে,’ বলেন তিনি।
সিটি করপোরেশনের অনুমোদন ছাড়া ঢাকা শহরে কেউ কিছু করতে পারবে না, এমন হুশিয়ারি দিয়ে তাপস বলেন, ‘সেটা সরকারি সংস্থা হোক, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান হোক—ঢাকা সিটি করপোরেশনের অনুমোদন নিতে হবে। সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার আওতায় প্রতিটি বিষয় আসতে হবে। তাহলেই আমি আমার আকাশ দেখতে পারব, খেলার মাঠ পাব, জলাবদ্ধতা নিরসন হবে। তা ছাড়া সম্ভব নয়।’
ডিএসসিসি মেয়র মনে করেন, ওয়ান স্টপ সেন্টার তথা একটি জায়গায় আসতে হবে। সেটা সিটি করপোরেশন। এক জায়গায় না আসতে পারলে সমস্যার সমাধান হবে না।