ফেনীর সোনাগাজী থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোয়াজ্জেম হোসেন ও উপপরিদর্শক (এসআই) ইকবাল হোসেনকে সাময়িক বরখাস্ত ও তাঁদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করেছে পুলিশ সদর দপ্তরের তদন্ত কমিটি। কমিটি বলছে, মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহানকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় গাফিলতি ছিল পুলিশ সুপার (এসপি) জাহাঙ্গীর আলম সরকারেরও।
গতকাল কমিটির প্রতিবেদন পুলিশের মহাপরিদর্শক মো. জাবেদ পাটোয়ারীর কাছে জমা পড়েছে। পুলিশ সদর দপ্তরের মুখপাত্র এবং সহকারী মহাপরিদর্শক (মিডিয়া) সোহেল রানা এ খবর নিশ্চিত করেছেন।
তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ফেনীর সোনাগাজী থানার তৎকালীন ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন ও এসআই ইকবাল হোসেন নুসরাত জাহানকে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনাকে আত্মহত্যা বলে প্রচারের চেষ্টা চালান। এ কাজে তাঁরা একে অন্যকে সহযোগিতা করেছেন। আর পুলিশ সুপার জাহাঙ্গীর আলম সরকার সকাল ১০টায় নুসরাতকে পুড়িয়ে হত্যাচেষ্টার খবর পেয়েও ঘটনাস্থলে যাননি। তিনি পার্বত্য চট্টগ্রামের দিকে রওনা দেন। পরে চট্টগ্রাম রেঞ্জের উপমহাপরিদর্শকের নির্দেশে মাঝপথ থেকে ফিরে আসেন।
পুলিশ সদর দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, পুলিশ সুপারের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়েছে। তা ছাড়া পুলিশের এসআই মো. ইউসুফের বিরুদ্ধেও গাফিলতির অভিযোগ আনা হয়েছে।
ফেনীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক পি কে এনামুল কবীর তাঁর দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করেননি বলেও মন্তব্য করেছে কমিটি। তাঁর ব্যাপারে কমিটির পর্যবেক্ষণ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে জানানোর কথা রয়েছে।
গত ৬ এপ্রিল নুসরাত জাহানকে মাদ্রাসার ছাদে ডেকে নিয়ে পুড়িয়ে হত্যা করেন মাদ্রাসার একদল ছাত্রছাত্রী। মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলার বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগ তুলে নিতে রাজি না হওয়ায় তাঁরা নুসরাতের গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন দেন। এ ঘটনাকে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেওয়া ও মামলাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার অভিযোগ উঠেছিল পুলিশের বিরুদ্ধে।
নুসরাতের পরিবারের অনাস্থার কারণে প্রথমে সোনাগাজী থানার ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনকে বদলি করা হয়। ১৩ এপ্রিল পুলিশের দায়দায়িত্ব খতিয়ে দেখতে কমিটি গঠন করে পুলিশ সদর দপ্তর। ৩০ এপ্রিল প্রতিবদেনটি চূড়ান্ত করা হয়।
এদিকে কমিটির প্রধান মিডিয়া ও জনসংযোগ বিভাগের উপমহাপরিদর্শক এস এম রুহুল আমিনকে সদর দপ্তরের মানবসম্পদ বিভাগে বদলি করা হয়েছে। তবে পুলিশ সদর দপ্তর খুদে বার্তায় জানায়, এস এম রুহুল আমিনের বদলি নিয়ে বিভ্রান্তির কোনো অবকাশ নেই।