করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের মধ্যে গত দু সপ্তাহে (১৩-২৬ এপ্রিল) ১৪টি ফ্লাইটে দেশে ফিরেছেন প্রায় দুই হাজার বাংলাদেশি। এঁদের মধ্যে ওমান থেকে ২৯১ জন শ্রমিক ২৪ এপ্রিল রাতে ঢাকায় আসেন। এঁদের সবাই সেখানে কারাবন্দী ছিলেন। ওমান স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কোয়ারেন্টিনে থাকার একটি মাত্র সনদের ভিত্তিতে ঢাকায় আসার পর এঁদের হোম কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে অসন্তুষ্ট বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)। তাদের মতে, এঁদের সবাইকে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে পাঠানো উচিত ছিল। তাই ভবিষ্যতে বিদেশফেরত বাংলাদেশিরা স্বাস্থ্য পরীক্ষার সনদ না আনলে তাঁদের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে পাঠানো বাধ্যতামূলক বলে জানান বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মফিদুর রহমান।
আজ রোববার তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘ওমান থেকে ফিরে আসা শ্রমিকেরা দেশটির স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একটি গণ সনদ নিয়ে এসেছে। এর ভিত্তিতে এসব শ্রমিককে হোম কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হয়েছে। তাদের সবারই ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য পরীক্ষার সনদ দিয়ে পাঠানো উচিত ছিল। এভাবে গণ সনদ আনা হলে ভবিষ্যতে সবাইকে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হবে। অসন্তোষ জানিয়ে আমরা (বেবিচক) এ ব্যাপারে একটি চিঠি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে দিয়েছি।’
বেবিচক চেয়ারম্যান বলেন, ‘চলতি মাসে বিদেশফেরত আরও অনেক বাংলাদেশি মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশ থেকে ফিরবেন। এঁদের বড় একটি অংশ শ্রমিক। আমরা জানি না, তাঁরা বিদেশে কী অবস্থায় ছিলেন। তাই শ্রমিক বা অন্য যাঁরাই হোন না কেন, বিদেশফেরত বাংলাদেশিদের স্বাস্থ্য সনদ আনতে হবে। না হলে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে তাঁদের থাকতে হবে। বিদেশি পাসপোর্টধারীদের স্বাস্থ্য সনদ না থাকলে বিমানবন্দর থেকে সরাসরি ফেরত পাঠানো হবে।’
২৪ এপ্রিল ওমান ফেরত বাংলাদেশিরা সবাই দেশটিতে কারাবন্দী ছিলেন বলে জানান বিমানবন্দরের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ শাহারিয়ার সাজ্জাদ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘২৯১ জনের সবাই ভিসার মেয়াদ শেষ বা অবৈধভাবে থাকার কারণে ওমানের বিভিন্ন কারাগারে বন্দী ছিলেন। এমন অনেকে ছিলেন, যাঁরা সাত থেকে আট বছর কারাগারে ছিলেন। তবে ওমান স্বাস্থ্য অধিদপ্তর একটি চিঠিতে আমাদের জানিয়েছে, তাঁরা ১৪ দিন ওমানে কোয়ারেন্টিনে ছিলেন। কোয়ারেন্টিনে মেয়াদ শেষে এসব বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠানো হয়েছে। তাই তাঁদের দেশে আসার পর হোম কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হয়েছে। তাঁদের সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য আইইডিসিআরের মাধ্যমে স্থানীয় প্রশাসনের কাছে পাঠানো হয়েছে।’
বেবিচক ও বিমানবন্দর স্বাস্থ্য কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, চলতি এপ্রিল মাসের ১ থেকে ২৬ এপ্রিল বিকেল পর্যন্ত বিভিন্ন দেশ থেকে ২২৯০ জন বাংলাদেশি ঢাকায় এসেছেন। এঁদের মধ্যে ১৫টি বিশেষ ফ্লাইটে ২১১২ জন বাংলাদেশি রয়েছেন। এঁদের অর্ধেকের বেশি শ্রমিক। বিশেষ ফ্লাইটে আসা ১৯৭৪ যাত্রীর মধ্যে ৪২৬ জনকে আশকোনা হজ ক্যাম্প ও ব্র্যাক ট্রেনিং সেন্টারে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে। তবে তাঁদের কারও শরীরে আজ পর্যন্ত করোনাভাইরাসের উপসর্গ দেখা যায়নি।