ওবায়দুল কাদেরের নির্বাচনী প্রচারণায় সরকারি গাড়ি

নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জে ওবায়দুল কাদেরের নির্বাচনী প্রচারণার গাড়িবহরে থাকা সরকারি চারটি গাড়ি। গতকাল বিকেলে উপজেলার মুছাপুর বাংলাবাজারে। ছবি: প্রথম আলো
নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জে ওবায়দুল কাদেরের নির্বাচনী প্রচারণার গাড়িবহরে থাকা সরকারি চারটি গাড়ি। গতকাল বিকেলে উপজেলার মুছাপুর বাংলাবাজারে।  ছবি: প্রথম আলো
>

• নোয়াখালী–৫ আসন
• আট দিন পর প্রচারণায় নামেন মওদুদ আহমদ
• আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে হামলা ও হুমকির অভিযোগ তাঁর

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের নির্বাচনী প্রচারণায় সরকারি গাড়ি ব্যবহার করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার নোয়াখালী-৫ আসনে প্রচারণার সময় তাঁর বহরের চারটি গাড়িই ছিল সড়ক ও জনপথ বিভাগ এবং পদ্মা সেতু প্রকল্পের।

কোম্পানীগঞ্জ ও কবিরহাট উপজেলা নিয়ে গঠিত নোয়াখালী-৫ আসনের বর্তমান সাংসদ ওবায়দুল কাদের। তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির মওদুদ আহমদ অধিকাংশ সময় তাঁর কোম্পানীগঞ্জের বাড়িতেই থাকছেন। আট দিন পর গতকাল তিনি ঘণ্টা তিনেকের জন্য প্রচারণা চালান। তিনি বলেন, ‘রক্তপাত ঠেকাতেই আমি চুপচাপ বসে আছি।’

ওবায়দুল কাদের গতকাল গণসংযোগ করেন কোম্পানীগঞ্জের কদমতলা, বটতলী, ১৬ নং বেড়ী, ভূমিহীন বাজার, গুচ্ছগ্রাম, মৌলভীবাজার, চৌধুরীবাজার, মুছাপুর ছোটধলী, যোগিদিয়া, মিরের পোল, সিরাজ মিয়ার বাজার ও হাবীবপুরে। তিনি যখন বেলা দেড়টার দিকে চৌধুরী বাজারে পৌঁছান, তখন তাঁর গাড়িবহরে নিজের ব্যক্তিগত গাড়ি ছাড়াও নয়টি গাড়ি ছিল।

চৌধুরীবাজারে গণসংযোগ চালানোর সময় ওবায়দুল কাদের তাঁর গাড়িতে দাঁড়িয়ে স্থানীয় ভাষায় বলেন, ‘দে-ন, আঁর গাড়িত পতাকা আছেনি?’ লোকজন সমস্বরে বলেন, ‘না।’ কাদের বলেন, ‘হে মিয়া (মওদুদ) কয়, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নাই। আঁই সরকারি সুযোগ-সুবিধা নিচ্ছি? এই ড্রাইভার, কাগজপত্র দেখাও গাড়ি ইয়ান সরকারি কি না? আঁই থাই (থাকি) বেসরকারি বাড়িতে। সরকারি বাড়িতে থাকি না। লেভের প্লেয়িং ফিল্ড কাকে বলে? এডাই তো।’

নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জে ওবায়দুল কাদেরের নির্বাচনী প্রচারণার গাড়িবহরে থাকা সরকারি চারটি গাড়ি। গতকাল বিকেলে উপজেলার মুছাপুর বাংলাবাজারে। ছবি: প্রথম আলো

ওবায়দুল কাদের যখন এই বক্তব্য দিচ্ছিলেন, তখন তাঁর গাড়ির পেছনে ছিল বিকন বাতি লাগানো একটি ডাবল কেবিন পিকআপ (ঢাকা মেট্রো ঠ ১৩-৩০৫৪)। নম্বরটি দিয়ে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) ঢাকার মিরপুরের কার্যালয়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এটি সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীর নামে নিবন্ধন করা। ঠিকানা সড়ক ভবন, তেজগাঁও। বহরে থাকা ঢাকা মেট্রো ঠ ১৩-২৯৮৭, ঢাকা মেট্রো ঘ ১৭-১১০১ এবং ঢাকা মেট্রো ঠ ১৩-২৯২৭ গাড়ি তিনটি প্রজেক্ট ডিরেক্টর (প্রকল্প পরিচালক) নামে নিবন্ধন করা এবং এগুলো পদ্মা মাল্টিপারপাস ব্রিজ প্রজেক্টের।

নির্বাচনী আচরণবিধির ১৪ (২) ধারায় বলা হয়েছে, ‘সরকারি সুবিধাভোগী অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি তাঁহার নিজের বা অন্যের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণায় সরকারি যানবাহন ব্যবহার করিতে পারিবেন না।’

ওবায়দুল কাদেরের নির্বাচনী প্রচারণায় সরকারি প্রকল্পের গাড়ি ব্যবহারের বিষয়ে জানার জন্য পদ্মা সেতু প্রকল্পের পরিচালক শফিকুল ইসলামকে ফোন করলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘একটি পারিবারিক ঝামেলায় ব্যস্ত আছি। এখন কথা বলতে পারব না।’

তবে নোয়াখালীর রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক তন্ময় দাস বলেন, বিষয়গুলো তাঁদের নজরে পড়েনি। তাঁরা খতিয়ে দেখবেন।

নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জে ওবায়দুল কাদেরের নির্বাচনী প্রচারণার গাড়িবহরে থাকা সরকারি চারটি গাড়ি। গতকাল বিকেলে উপজেলার মুছাপুর বাংলাবাজারে। ছবি: প্রথম আলো


মওদুদের প্রচারণা
সকাল সাড়ে ১০টায় কোম্পানীগঞ্জের সিরাজপুর ইউনিয়নের মানিকপুরের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, আঙিনায় মওদুদ আহমদ দাঁড়িয়ে আছেন; তাঁকে ঘিরে ২০ জনের মতো নেতা-কর্মী। সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে কথা বললে মওদুদ অভিযোগ করেন, আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের হামলা ও হুমকির কারণে আট দিন ধরে তিনি বাড়ি থেকে বের হননি। গতকাল সকাল ১০টায় বেরোবেন বলে পুলিশকে জানানো হয়। কিন্তু চৌধুরীর হাট এলাকা থেকে কর্মীরা তাঁকে জানিয়েছেন, আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা সেখানে জড়ো হয়েছেন, তিনি গেলে ঝামেলা হবে।

মওদুদ বলেন, বিষয়টি থানাকে জানালে পুলিশ সদস্যরা সেখানে পৌঁছানোর পর তাঁকে যাওয়ার পরামর্শ দেন। তিনিও অপেক্ষা করছিলেন। এমন সময় খবর আসে বাড়ির পেছনে তাঁর ব্যক্তিগত সহকারীর ছোট ভাই ও সিরাজপুর ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতি আরিফুর রহমানকে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা মাথা ফাটিয়ে দিয়েছেন।

নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জে ওবায়দুল কাদেরের নির্বাচনী প্রচারণার গাড়িবহরে থাকা সরকারি চারটি গাড়ি। গতকাল বিকেলে উপজেলার মুছাপুর বাংলাবাজারে। ছবি: প্রথম আলো

একটু পরই রক্তাক্ত আরিফুরকে গাড়িতে করে নিয়ে আসা হয়। পরে মওদুদ আহমদের বাড়িতেই আরিফের মাথায় সেলাই ও ব্যান্ডেজ করে দেন স্থানীয় এক চিকিৎসক।

মওদুদ বলেন, তিনি চাইলে এক ঘণ্টার মধ্যেই আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের তাড়িয়ে দিতে পারবেন। শুধু রক্তপাত এড়ানোর জন্যই চুপ করে আছেন।

পুলিশ পৌঁছালে বেলা ১১টার দিকে মওদুদ বের হন এবং হাজিপাড়া, দাসের হাট, চৌধুরীর হাট, মৌলভীবাজার ও কদমতলা এলাকায় প্রচারণা চালান।