>*২০১৮ সালে ওফাজের দুই বছরের কারাদণ্ড
*রায় ঘোষণার সময় ওফাজ পলাতক ছিলেন
*ওফাজ সেজে আত্মসমর্পণ করেন জাহাঙ্গীর
*জাহাঙ্গীরকে ৩ লাখ টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি
*দ্রুত জামিন করিয়ে দেওয়ারও প্রতিশ্রুতি
বনের জায়গা দখলের মামলায় দুই বছরের কারাদণ্ড হয়েছে গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার বিশ্বাসপাড়া এলাকার ওফাজ উদ্দিনের। কিন্তু তাঁর পরিবর্তে দুই মাস ধরে কারাভোগ করছেন জাহাঙ্গীর আলম নামের এক যুবক।
অভিযোগ উঠেছে, ৩ লাখ টাকার বিনিময়ে এবং দ্রুত জামিন করিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে জাহাঙ্গীরকে আদালতে আত্মসমর্পণের পর জেলহাজতে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন ওফাজ উদ্দিন।
কারাভোগ করা জাহাঙ্গীর আলম (৩০) কালিয়াকৈর উপজেলার খোলাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। তিনি বর্তমানে কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে বন্দী। গতকাল রোববার সকালে হাইসিকিউরিটি কারাগারে গিয়ে ওফাজ উদ্দিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে চাইলে খানিক পরে আসেন জাহাঙ্গীর আলম। এ সময় তাঁর কাছে বিস্তারিত জানতে চাইলে প্রথমে তিনি কিছুই বলতে চাননি। পরে ঘটনা খুলে বলেন।
জাহাঙ্গীর পেশায় গাড়িচালক। আগে প্রাইভেট কার চালাতেন। মধ্যখানে মাদকাসক্ত হয়ে পড়েন। তখন চাকরিও চলে যায়। সাড়ে তিন মাস আগে ওফাজ উদ্দিনসহ কয়েকজন তাঁকে ডেকে নিয়ে বলেন, ওফাজ উদ্দিনের জেল হয়েছে। আদালতের বিচারক তো আর তাঁকে চেনেন না। তাই তাঁর পরিবর্তে জাহাঙ্গীর আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন চাইবেন। জামিন হলে তিনি ওই দিনই বাড়িতে চলে আসবেন। কিন্তু জাহাঙ্গীর আত্মসমর্পণ করার পর আদালত জামিন না দিয়ে তাঁকে কারাগারে পাঠিয়ে দেন। গত ২৬ জানুয়ারি থেকে তিনি জেলে আছেন। এখনো তাঁর জামিন হয়নি।
বন বিভাগের কর্মকর্তারা বলেন, কালিয়াকৈর উপজেলার বিশ্বাসপাড়া এলাকায় বহু বছর ধরে থাকেন ওফাজ উদ্দিন। তিনি ওই এলাকায় বন বিভাগের জমি দখল করে ঘর তুলে নিজে থাকেন। এমনকি অন্যদের কাছে বনের জমি বিক্রি করেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। বনের ক্ষতি করায় তাঁর বিরুদ্ধে ২০০৬ সালে মামলা করে বন বিভাগ। ওই মামলায় গাজীপুরের বন আদালত ২০১৮ সালের ৭ জুলাই তাঁকে দুই বছরের কারাদণ্ড দেন। রায় ঘোষণার সময় আসামি পলাতক ছিলেন।
বিশ্বাসপাড়া এলাকার লোকজন জানান, সাজা থেকে পরিত্রাণের উপায় না পেয়ে ওফাজ উদ্দিন স্থানীয় প্রভাবশালী কয়েকজনের পরামর্শে জাহাঙ্গীরের সঙ্গে কথা বলেন। ওফাজ উদ্দিনের পরিবর্তে সাজা খাটার বিনিময়ে জাহাঙ্গীরকে ৩ লাখ টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। তাঁকে দ্রুত জামিন করিয়ে নেওয়ার প্রতিশ্রুতিও দেওয়া হয়। এই কথায় রাজি হয়ে আদালতে ওফাজ উদ্দিন সেজে আত্মসমর্পণ করেন জাহাঙ্গীর। আদালত তাঁকে কারাগারে পাঠান।
গাজীপুর আদালতের বন মামলার আইনজীবী রেজাউল করিম প্রথম আলোকে বলেন, এ ধরনের মামলা পরিচালনা করেন গাজীপুর আদালতের বন মামলার পরিচালক ও ফরেস্টার আবদুল মোমেন খান। তবে বিষয়টি জাহাঙ্গীরের আইডি কার্ড নিয়ে গাজীপুর আদালতে আপিল করলে তা যাচাই–বাছাই করে ভুল আসামি প্রমাণিত হলে তাঁকে মুক্তি দেওয়া হবে।
গতকাল জাহাঙ্গীরের বাড়িতে গেলে তাঁর মা জাহানারা বেগম বলেন, ‘দুই মাস ছেলে বাড়িতে আসে না। যাওয়ার সময় কিছু বলেও যায়নি। তবে বিভিন্নজনের কাছে খবর পেয়েছি আমার ছেলে জেলখানায় আছে। কেন, কী কারণে আছে জানি না।’
খোলাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা সুলতান মিয়া সমঝোতার সময় ছিলেন। তিনি জানান, ওফাজ উদ্দিনের পরামর্শে ৩ লাখ টাকা দেওয়ার কথা বলে জাহাঙ্গীরকে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।
এ ব্যাপারে কথা বলতে ওফাজ উদ্দিনের মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলে তাঁর ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। তাঁর ছেলে রফিকুল ইসলাম বলেন, তাঁর বাবা পলাতক। জেলখানায় নেই। তাঁর বাবার পরিবর্তে জাহাঙ্গীরের জেলে যাওয়ার বিষয়ে তাঁরা জানেন না।
গাজীপুর আদালতের পরিদর্শক রবিউল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘কেউ না বলে দিলে আদালতের বোঝার উপায় নেই কোনটা জাহাঙ্গীর আর কোনটা ওফাজ উদ্দিন। সে এমনিতেই সাজাপ্রাপ্ত আবার আদালতের সঙ্গে প্রতারণা করে আরও বড় অপরাধ করেছে।’