ঐতিহ্যবাহী ঘোড়ার হাট

চলছে ঘোড়ার শক্তি পরীক্ষা। গত বৃহস্পতিবার দুপুরে জামালপুরের তুলসীপুর ডিগ্রি কলেজ মাঠে ঘোড়ার হাটে
 ছবি: প্রথম আলো

বাহাদুর, রাজা, তাজিয়া, পারলে ঠেকাও, বিজলি, কিরণমালা, রানি ও রাজ—এগুলো ঘোড়ার নাম। এদের নাম যেমন বাহারি, তেমনি গুণেও। এরা ছুটতে পারে ক্ষিপ্রগতিতে। এ কারণে ওদের কদরও যথেষ্ট। এদের পেতে ক্রেতাদের মধ্যে রীতিমতো কাড়াকাড়ি লেগে যায়।

গত বৃহস্পতিবার জামালপুর সদর উপজেলার ঐতিহ্যবাহী তুলসীপুর ডিগ্রি কলেজ মাঠের ঘোড়ার হাটে গিয়ে দেখা পাওয়া যায় এসব ঘোড়ার।

হাট ব্যবস্থাপনাকারীদের দাবি, দেশের সবচেয়ে বড় ও পুরোনো ঘোড়ার হাট এটি। এ কারণে সারা দেশ থেকে ক্রেতা-বিক্রেতার সমাগম ঘটে এখানে। প্রতি বৃহস্পতিবার বসে এই ঘোড়ার হাট। এখানে ঘোড়ার পাশাপাশি বেচাকেনা হয় ঘোড়ার গাড়ি, লাগামসহ নানা সরঞ্জাম। প্রায় অর্ধশতাব্দী ধরে চলছে এ হাট।

সরেজমিনে দেখা যায়, সারিবদ্ধভাবে ঘোড়া ও ঘোড়ার গাড়ি মাঠে ঢুকছে। অনেক বিক্রেতা ঘোড়া ছুটিয়ে ঢুকছেন হাটে। কিছু সময়ের মধ্যে নানা রঙের ঘোড়ায় মাঠ কানায় কানায় ভরে উঠল হাট। জমে উঠল বেচাকেনা। হঠাৎ চোখে পড়ল, মাঠের এক পাশে কাদামাটি। অনেক বিক্রেতা সেদিকে ঘোড়া ছুটিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। জানা গেল, কাদামাটিতে নামিয়ে ঘোড়ার শক্তি পরীক্ষা করা হচ্ছে। তারপর হাঁকা হচ্ছে ঘোড়ার দাম। পছন্দের ঘোড়া পেতে ক্রেতাদের মধ্যে রীতিমতো কাড়াকাড়ি দেখা গেল।

তুলসীপুর ঘোড়ার হাটের ইজারাদার মো. ফারুক আহম্মেদের দাবি, এটাই দেশের প্রথম ঘোড়ার হাট। প্রায় ৫০ বছর ধরে এই ঘোড়ার হাট চলছে। আরও কিছু জায়গায় হাট থাকলেও, এত বড় হাট কোথাও নেই। তিনি বলেন, এই হাটে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ঘোড়া কেনাবেচার জন্য আসেন লোকজন। প্রতি হাটে ৫০ থেকে ৭০টি ঘোড়া কেনাবেচা হয়ে থাকে। হাটে সর্বোচ্চ ৮০ হাজার টাকা দামের ঘোড়া পাওয়া যায়।

হাট ব্যবস্থাপনাকারীরা জানান, হাটে ক্রেতা-বিক্রেতার থাকা–খাওয়া সুব্যবস্থা আছে। ক্রেতা-বিক্রেতারা যাতে নিরাপদে কেনাবেচা করতে পারেন, সে জন্য নিরাপত্তা প্রহরীর ব্যবস্থাও রেখেছেন তাঁরা।

হাটে দেখা গেল, ঘোড়া কেনার জন্য হাটে ঘুরছেন ঢাকার লালবাগের আবদুল খালেক। সদরঘাট-গুলিস্তান পথে চলে তাঁর ঘোড়ার গাড়ি। সেই গাড়ির জন্য ঘোড়া কিনতে তুলসীপুর হাটে এসেছেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, এই হাটে বহু জাতের ঘোড়া পাওয়া যায়। বড় ও শক্তিশালী ঘোড়া পাওয়া যায় এখানে। দামও কম। তাই তিনি ঘোড়ার জন্য এই হাটে আসেন। এর আগে বহুবার তিনি এই হাট থেকে ঘোড়া কিনেছেন। তিনি জানান, বাহাদুর নামের একটি ঘোড়া কিনতে চাইছেন তিনি। বিক্রেতা দাম হাঁকছেন ৮০ হাজার টাকা। তিনি ৭০ হাজার টাকা পর্যন্ত বলেছেন। কিন্তু বিক্রেতা এই দামে ঘোড়াটি ছাড়তে নারাজ। ‘ঘোড়াটি কিনতে আরও অনেকে আগ্রহী। তাই শেষ পর্যন্ত এটি কিনতে পারব কি না, কে জানে!’ ম্লানমুখে বললেন আবদুল খালেক।