দৈনিক পত্রিকা আর টেলিভিশনের পর্দা ছাড়া নারায়ণগঞ্জের ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীদের সরাসরি দেখতে পাননি স্থানীয়রা। নারায়ণগঞ্জের পাঁচটি আসনের ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীরা চূড়ান্ত মনোনয়ন পাওয়ার পর থেকে হামলা, মামলা, গ্রেপ্তার সামাল দিতেই ব্যস্ত। আর নির্বাচনের মুখেই অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন নারায়ণগঞ্জ -৪ আসনের ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী মুফতি মনির হোসাইন কাসেমী।
ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীরা নির্বাচনে শঙ্কা দেখছেন। আর মহাজোটের একজন প্রার্থী ও স্থানীয় প্রশাসন নির্বাচনে কোনো শঙ্কা দেখছেন না। যদিও দু’দিন আগে মহাজোটের প্রার্থী শামীম ওসমান নির্বাচন ঘিরে পাকিস্তানি সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই এর ষড়যন্ত্র ও নাশকতার গন্ধ পাচ্ছেন বলে সংবাদ সম্মেলন করেছিলেন।
ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীদের তেমন প্রচারণা ছাড়াই শেষ হয়েছে ভোটের প্রচারণা। এক পক্ষ মাঠে না থাকায় নারায়ণগঞ্জে তেমন সহিংসতা হয়নি। তবু শঙ্কিত মানুষ। তবে তরুণদের নাড়া দিচ্ছে ডিজিটাল প্রচারণা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মহাজোট ও ঐক্যফ্রন্টের ভিডিওগুলো দেখেছেন তরুণেরা।
শুক্রবার জুম্মার নামাজের পর নারায়ণগঞ্জ নগরের সেন্ট্রাল খেয়াঘাট এলাকায় শীতলক্ষ্যার পাড়ে দাঁড়িয়ে নির্বাচন কথা বলছিলেন বেশ কয়েকজন মাঝবয়সী লোক। ভোটের দিন পরিবেশ কেমন হবে, কোনো ঝামেলা হবে কি না এসব নানা শঙ্কার বিষয়ে কথা বলছিলেন তাঁরা। ভুঁইঘর এলাকার একটি চায়ের টঙে এক টেম্পো চালক বলছিলেন, তাঁর বাড়ি রাজবাড়ী, ভোটও সেখানে। ভোট দিতে যাবেন কি না তা নিয়ে দ্বিধায় আছেন। তাঁর বিশ্বাস ভোট ‘কাইটা নিব’। তিনি বলেন, ‘এত টাকা খরচ কইরে গিয়া যদি ভোটখান দিবার না পারি, তাইলে তো সবই লস।’
নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের এসএম আকরাম এখন নগরে নিজের বাড়িতেই রয়েছেন। নির্বাচনের ভোটের পরিবেশ নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, তাঁর দলের নেতা-কর্মীদের মিথ্যা সাজানো মামলায় গ্রেপ্তার ও হয়রানি করা হচ্ছে। বাড়ি বাড়ি গিয়ে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। অপরদিকে নারায়ণগঞ্জ-১ (রূপগঞ্জ) আসনের ধানের শীষের প্রার্থী কাজী মনিরুজ্জামানও মামলা-হামলায় বিপর্যস্ত। শঙ্কা প্রকাশ করে তিনি বলেন, প্রতি রাতে তার দলের নেতা-কর্মীদের বাড়ি বাড়ি সাদা পোশাকে ডিবি পুলিশ ও পোশাকধারী লোকজন হানা দিচ্ছে। তাঁরা প্রতিনিয়ত ভয়ভীতি ও হুমকি দিচ্ছেন। ভোটের আগে আরও নেতা-কর্মী গ্রেপ্তার হওয়ার আশঙ্কা করছেন তিনি।
তবে নারায়ণগঞ্জ- ৫ আসনের মহাজোট প্রার্থী সেলিম ওসমান বৃহস্পতিবার বলেন, ‘নির্বাচন সুষ্ঠু হবে। কোথাও কিছু হবে না। জনগণ যাকে পছন্দ করে, তাঁকেই ভোট দেবেন।’
জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তা রাব্বী মিয়াও বলছেন শঙ্কার কিছু নেই। গতকাল তিনি প্রথম আলোকে বলেন, অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের সকল প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। নির্বাচনে কোনো শঙ্কা নেই। সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের জন্য সেনাবাহিনীসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন রয়েছে। কাউকে কোনো নাশকতা ও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড করার সুযোগ দেওয়া হবে না।
এদিকে নগরের চাষাড়াসহ বিভিন্ন স্থানে গতকাল সেনাবাহিনীর সদস্যদের যানবাহন তল্লাশি করতে দেখা গেছে। সেনাবাহিনীর একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘কেউ যাতে নাশকতা করতে না পারে সে জন্য সেনাবাহিনীর টহল ও তল্লাশি অব্যাহত থাকবে।’