এ বছর হজে যেতে খরচ বাড়ছে লাখ টাকার বেশি

পবিত্র মক্কার মসজিদুল হারাম (কাবা শরিফ)
পবিত্র মক্কার মসজিদুল হারাম (কাবা শরিফ)

দুই বছর পর অনেকটা স্বাভাবিক পরিবেশে পবিত্র হজ পালনের সুযোগ তৈরি হলেও এবার বাংলাদেশিদের হজে যেতে খরচ বাড়ছে এক লাখ টাকার বেশি। এর মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় দুটি প্যাকেজের একটিতে মোট খরচ হবে সোয়া ৫ লাখ টাকার বেশি। আরেকটি প্যাকেজে খরচ হবে সাড়ে ৪ লাখ টাকার বেশি। আর বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় একেকজন হজযাত্রীর জন্য মোট খরচ নির্ধারণ করা হয়েছে সাড়ে ৪ লাখের বেশি টাকা।

আজ বুধবার সচিবালয়ে হজ ব্যবস্থাপনাসংক্রান্ত নির্বাহী কমিটির সভায় এই হজ প্যাকেজ নির্ধারণ করা হয়েছে। পরে সংবাদ ব্রিফিংয়ে হজ প্যাকেজসহ অন্যান্য তথ্য তুলে ধরেন ধর্ম প্রতিমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান।

চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ৮ জুলাই (৯ জিলহজ মোতাবেক) পবিত্র হজ পালিত হবে। এ বছর বাংলাদেশ থেকে মোট ৫৭ হাজার ৫৮৫ জন পবিত্র হজ পালনের সুযোগ পাচ্ছেন। এর মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ৪ হাজার জন এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ৫৩ হাজার ৫৮৫ জন মানুষ পবিত্র হজে যেতে পারবেন।

সংবাদ ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, সরকারি ব্যবস্থাপনায় প্যাকেজ-১ এ মোট খরচ ধরা হয়েছে ৫ লাখ ২৭ হাজার ৩৪০ টাকা, যা ২০২০ সালের তুলনায় ১ লাখ ২ হাজার ৩৪০ টাকা বেশি। সরকারি ব্যবস্থাপনায় প্যাকেজ-২–এ মোট খরচ ধরা হয়েছে ৪ লাখ ৬২ হাজার ১৫০ টাকা, যা ২০২০ সালের তুলনায় ১ লাখ ২ হাজার ১৫০ টাকা বেশি। ওই সময় ৩ লাখ ১৫ হাজার টাকায় তৃতীয় একটি প্যাকেজ থাকলেও এ বছর তা নেই। ২০২০ সালের তিনটি প্যাকেজের যেকোনো একটিতে নিবন্ধিত হজযাত্রীকে এ বছরের ঘোষিত প্যাকেজ-১ বা প্যাকেজ-২–এর যেকোনো একটি বাছাই করে নিবন্ধন করতে হবে। এ ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলো ধর্ম মন্ত্রণালয়ের ই-হজ সিস্টেমে প্যাকেজ স্থানান্তরের ওই টাকা প্রাপ্তি তাৎক্ষণিকভাবে নিশ্চিত করবে। ২০২০ সালে যেসব নিবন্ধিত হজযাত্রী প্যাকেজ স্থানান্তরের মাধ্যমে এ বছরের নিবন্ধন চূড়ান্ত করবেন না বা হজে যেতে পারবেন না, তাঁদের হজ নিবন্ধন বাতিল হবে। এ ক্ষেত্রে তাঁরা বিধি মোতাবেক টাকা ফেরত পাবেন।

ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান বলেন, সরকারি ব্যবস্থাপনার প্যাকেজ-১–এর হজযাত্রীরা পবিত্র মসজিদুল হারাম চত্বরের সীমানা থেকে সর্বোচ্চ ১ হাজার মিটারের মধ্যে এবং প্যাকেজ-২–এর হজযাত্রীরা সর্বোচ্চ দেড় হাজার মিটারের মধ্যে অবস্থান করবেন।

সংবাদ ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় একেকজন হজযাত্রীর জন্য খরচ নির্ধারণ করা হয়েছে ৪ লাখ ৫৬ হাজার ৫৩০ টাকা। তবে বেসরকারি ব্যবস্থাপনার হজ এজেন্সিগুলো সরকারি ব্যবস্থাপনার প্যাকেজ-১ ও প্যাকেজ-২–এর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে একাধিক প্যাকেজ ঘোষণা করতে পারবে।

এর আগে সর্বশেষ ২০২০ সালে বেসরকারি প্যাকেজে হজের খরচ নির্ধারণ করা হয়েছিল ৩ লাখ ৫৮ হাজার টাকা।

হজ ব্যবস্থাপনাসংক্রান্ত নির্বাহী কমিটির সভায় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন হজ এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব) সভাপতি শাহাদাত হোসেন তসলিম। তিনি সাংবাদিকদের জানান, আগামীকাল বৃহস্পতিবার তাঁরা তাঁদের পূর্ণাঙ্গ হজ প্যাকেজ ঘোষণা করবেন।

এবার খরচ বৃদ্ধির কারণ জানতে চাইলে শাহাদাত হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, সৌদিতে বিভিন্ন খরচ বেড়েছে। বাড়িভাড়া বেড়েছে, সৌদি রিয়ালের মূল্য বেড়েছে। সব মিলিয়ে খরচ বৃদ্ধি পেয়েছে।

এর আগে সংবাদ ব্রিফিংয়ে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক বলেন ২০২০ সালে সৌদি রিয়ালের বিনিময় হার ছিল ২৩ টাকা, আজকে এই হারের পরিমাণ ২৪ টাকার বেশি। এটিও খরচ বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। এ ছাড়া সৌদি আরবে সব খাতের ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট, সার্ভিস চার্জ, কর অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। মোয়াচ্ছাছার খরচ দ্বিগুণ হয়েছে এবং বাড়িভাড়াও বেড়েছে।

সংবাদ ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, প্রতিটি হজ এজেন্সি কমপক্ষে ১০০ জন এবং সর্বোচ্চ ৩০০ জন হজযাত্রী পাঠাতে পারবে। কোনো হজ এজেন্সিকে কোনোভাবেই ৩০০–এর বেশি বিমানের টিকিট দেওয়া যাবে না। পবিত্র হজ পালনের জন্য হজযাত্রীদের পাসপোর্টের মেয়াদ আগামী বছরের ৪ জানুয়ারি পর্যন্ত থাকতে হবে।

ধর্ম প্রতিমন্ত্রী বলেন, হজযাত্রীদের কোরবানি বাবদ ব্যয়ের টাকা সৌদি ইসলামি ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক বা সৌদি সরকার অনুমোদিত অন্য ব্যাংকের মাধ্যমে পরিশোধ করার জন্য সৌদি সরকারের পক্ষ থেকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এ জন্য হজযাত্রীকে হজ প্যাকেজ মূল্যের অতিরিক্ত ১৯ হাজার ৬৮৩ টাকা (৮১০ সৌদি রিয়ালের সমপরিমাণ) সঙ্গে নিতে হবে।