গত ২৭ আগস্ট রাজধানীর মতিঝিল এজিবি কলোনি এলাকা থেকে চার আসামিকে অস্ত্র এবং ৩০০ টি ইয়াবাসহ গ্রেপ্তার করা হয় বলে দাবি করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। এরপর অস্ত্র ও মাদক মামলায় বাবা-ছেলেসহ চারজনকে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালত হাজির করে পুলিশ। গত শুক্রবার তাঁদের দুই মামলায় ১০ দিন করে মোট ২০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। আসামিরা এখন ডিবি হেফাজতে রয়েছেন।
এই চার আসামি হলেন, গোলাম মোস্তফা আদর (৩০), তাঁর বাবা গোলাম মোহাম্মদ (৬০), গাড়ি চালক দুলাল মিয়া (৩৩) এবং শাকিল (২৬)।
গত ১২ আগস্ট এই চার আসামির একজন গোলাম মোস্তফা আদর রাজশাহী রেঞ্জের পুলিশ সুপার (এসপি) মো. বেলায়েত হোসেনর বিরুদ্ধে ঢাকার সিএমএম আদালতে একটি নালিশি মামলা করেন। মামলায় মোস্তফা অভিযোগ করেন ওই এসপি তুলে নিয়ে তাঁকে মারধর করেছে এবং ক্রসফায়ারের হুমকি নিয়ে সাড়ে তিন লাখ টাকা আদায় করেছেন।
এসপির বিরুদ্ধে মামলার পর গত ২৭ আগস্ট রাজধানীর মতিঝিল এজিবি কলোনি এলাকা থেকে চার আসামিকে অস্ত্র এবং ৩শ পিচ ইয়াবাসহ গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। মামলার বাদী ডিবির ধানমন্ডি জোনাল টিমের উপপরিদর্শক(এসআই) মমিনুল হক বলেন, গত ২৭ আগস্ট রাতে জানতে পারেন, আসামিরা একটি কালো রঙের প্রাইভেটকারে মতিঝিল এজিবি কলোনি এলাকায় ঘোরাফেরা করছে। গাড়িটিকে থামানোর চেষ্টা করা হলে গাড়িটি না থামিয়ে দ্রুত গতিতে এজিবি কলোনির দিকে যেতে থাকে। পরে থানার টহল পুলিশের সহায়তায় প্রাইভেটকার থামানো হয়। তখন গাড়ি থেকে গোলাম মোস্তফা, তাঁরা বাবা গোলাম মোহাম্মদসহ অন্যদের আটক করা হয়। আসামি গোলাম মোস্তফার প্যান্টের পকেট থেকে একটি পিস্তল জব্দ করা হয়।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের গুলশান বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মশিউর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, আসামি গোলাম মোস্তফা আদর খুনের মামলার অভিযোগপত্রভুক্ত আসামি। গোলাম মোস্তফা এবং তাঁর বাবা গোলাম মোহাম্মদের বিরুদ্ধে খুন, প্রতারণাসহ নানা ধরনের গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। এখন পর্যন্ত আমরা জানতে পেরেছি, গোলাম মোস্তফার বিরুদ্ধে খুনসহ নানা অভিযোগে পাঁচটি মামলা রয়েছে। বহুদিন থেকে বাবা-ছেলে নানা ধরনের প্রতারণামূলক কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছিলেন।
অবশ্য গোলাম মোস্তফার আইনজীবী মো. আনোয়ার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, গত ১২ আগস্ট তাঁর মক্কেল গোলাম মোস্তফা রাজশাহী রেঞ্জের একজন এসপির বিরুদ্ধে ঢাকার সিএমএম আদালতে একটি নালিশি মামলা করেন। তাঁর মক্কেলের নামে খুনসহ প্রতারণার অন্য কোনো মামলা থাকার তথ্য তাঁর জানা নেই। গত কয়েক দিন ধরে তাঁর মক্কেলের মোবাইল ফোন নম্বর বন্ধ পাচ্ছেন।
আসিফ ইমরান নামের এক তরুণকে হত্যার অভিযোগে গত বছরের ২৮ অক্টোবর গোলাম মোস্তফা এবং তাঁর বাবা গোলাম মোহাম্মদসহ আটজনের বিরুদ্ধে ঢাকার সিএমএম আদালতে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশের অপরাধ ও তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। অভিযোগপত্রে বলা হয়, ২০১৫ সালের ৭ অক্টোবর আসিফ ইমরান নামের এক তরুণকে অপহরণ করে ৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে আসামিরা। মুক্তিপণের টাকা না দেওয়ায় সেদিন রাতে ভুক্তভোগী আসিফ ইমরানকে জবাই ও গুলি করে হত্যা করে আসামিরা। পরে তাঁর লাশ বুড়িগঙ্গায় ফেলে দেয়। এই হত্যা মামলায় গোলাম মোস্তফা ঢাকার সিএমএম আদালতে খুনে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দেন। পরে জামিন পান মোস্তফা।