এসএসসি ও সমমানে প্রতিবছরই বাড়ছে নিবন্ধিত শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া। পাঁচ বছরের ব্যবধানে এ সংখ্যা বেড়ে দ্বিগুণের বেশি হয়েছে। নবম শ্রেণিতে নিবন্ধন করেও ২০১৪ সালে পরীক্ষা না দেওয়া শিক্ষার্থী ছিল প্রায় পৌনে দুই লাখ। এ বছর এমন শিক্ষার্থী হয়েছে পৌনে চার লাখ।
অবশ্য প্রতিবছর মোট পরীক্ষার্থীও বাড়ছে। সারা দেশে আজ বৃহস্পতিবার শুরু হচ্ছে এসএসসি ও সমমানের এই পরীক্ষা। শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে পাওয়া পরীক্ষাসংক্রান্ত তথ্য-উপাত্ত তুলনামূলক বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, সংখ্যার দিক দিয়ে প্রতিবছরই নিবন্ধিত শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া বাড়ছে।
নিবন্ধন করেও পরীক্ষা না দেওয়ার কারণ কী? জানতে চাইলে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রাথমিক ও গণশিক্ষাবিষয়ক উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধূরী প্রথম আলোকে বলেন, তাঁদের অভিজ্ঞতা হলো এত পরীক্ষার চাপ শিক্ষার্থীরা নিতে পারছে না। এ জন্য হিমশিম খায় শিক্ষার্থীরা। দ্বিতীয়ত, শিক্ষার্থীরা যত ওপরে উঠছে, শিক্ষার ব্যয় তত বাড়ছে। অনেক অভিভাবকের পক্ষে এই ব্যয় সামাল দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এগুলো ঝরে পড়ার বড় কারণ। এখান থেকে উত্তরণের জন্য বিদ্যমান পরীক্ষা পদ্ধতির সংস্কার করতে হবে। এইচএসসি পর্যন্ত চারটি পাবলিক পরীক্ষার দরকার আছে কি না, তা ভেবে দেখতে হবে। সর্বোপরি শিক্ষায় বিনিয়োগ বাড়াতে হবে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দেওয়া তথ্য বলছে, এ বছর এসএসসি, দাখিল ও এসএসসি ভোকেশনাল পরীক্ষাদেওয়ার লক্ষ্যে দুই বছর আগে (২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষ) নিয়মিত শিক্ষার্থী হিসেবে নিবন্ধন করেছিল ২১ লাখ ১৪ হাজার ২২২ জন। নিয়মিত এসব শিক্ষার্থীর মধ্যে এ বছর পরীক্ষা দিচ্ছে ১৭ লাখ ৩৯ হাজার ৫৭৩ জন শিক্ষার্থী। অবশ্য অনিয়মিত (আগে অনুত্তীর্ণ) ও মানোন্নয়ন পরীক্ষার্থী মিলিয়ে ১০ শিক্ষা বোর্ডে মোট পরীক্ষার্থী ২০ লাখ ৩১ হাজার ৮৯৯ জন।
শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ গতকাল মন্ত্রণালয়ে এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, উপবৃত্তি দেওয়াসহ নানা উদ্যোগের ফলে শিক্ষার্থী বাড়ছে। তবে ঝরে পড়াও একটি বিষয়। এটা কমাতেও বিভিন্ন উদ্যোগ নিচ্ছেন। আশা করছেন, ভবিষ্যতে এটা কমে যাবে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের একাধিক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, ঝরে পড়ার সংখ্যাটি বেশি হচ্ছে। কারণ, পরীক্ষার্থীও এখন বেশি। যেমন পাঁচ বছর আগে নিয়মিত ও অনিয়মিত মিলিয়ে মোট পরীক্ষার্থী ছিল ১৪ লাখ ৩২ হাজার ৭২৭ জন। অথচ এবার পরীক্ষা দিচ্ছে ২০ লাখ ৩১ হাজারের বেশি।
জানতে চাইলে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক তপন কুমার সরকার গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, নবম শ্রেণিতে নিবন্ধন করার পরও কয়েকটি কারণে অনেকে এসএসসি পর্যন্ত আসতে পারে না। প্রথমত, নবম শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণিতে ওঠার সময় উত্তীর্ণ না হওয়ায় বড় একটি অংশ বাদ পড়ে যায়। দ্বিতীয়ত, নির্বাচিত (টেস্ট) পরীক্ষায়ও অনেকে পাস করতে পারে না। এ ছাড়া সামাজিকসহ আরও কিছু কারণে অনেকে পরীক্ষা দিতে পারে না। এখন যেহেতু পরীক্ষার্থী বাড়ছে, তাই আনুপাতিক হারে ওই সংখ্যাও বাড়ছে। তবে তিনি এদের ঝরে পড়া বলতে নারাজ। কারণ, ওই সব শিক্ষার্থী পরে পরীক্ষা দিতে পারে।
ফেসবুক বন্ধে অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা
এসএসসি পরীক্ষা উপলক্ষে গতকাল সচিবালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, তাঁরা ফেসবুক বন্ধ করতে পারবেন না। এ বিষয়ে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের চেয়ারম্যানসহ অন্যদের সঙ্গে কথা হয়েছে। তাঁদের সমস্যাটি বলা হয়েছে। তাঁরা বলেছেন, এটা প্রতিহত (ফেসবুকের মাধ্যমে প্রশ্নপত্র ছড়ানো) করতে কার্যকর পদক্ষেপ নেবেন। সীমিত সময়ের জন্য ফেসবুক বন্ধ রাখবেন কি না, সেটাও তাঁরা অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা নেবেন। তাঁরা সাহায্য করার বিষয়ে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করেছেন।
পরীক্ষার সময় কোচিং সেন্টার বন্ধ রাখার বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, এ বিষয়ে পুলিশকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া স্থায়ীভাবে কোচিং বন্ধে আইন হচ্ছে।
এবার পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষা শুরুর আধা ঘণ্টা আগেই কেন্দ্রে প্রবেশ করে নিজ নিজ আসনে বাধ্যতামূলকভাবে বসতে হবে। এ জন্য যানজট ও পরীক্ষাকেন্দ্রের দূরত্ব বিবেচনা করে বাসা থেকে রওনা দিতে পরীক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের প্রতি অনুরোধ জানান শিক্ষামন্ত্রী।
এবার কেন্দ্র থেকে প্রশ্নপত্র ফাঁসরোধে পরীক্ষা শুরুর মাত্র আধা ঘণ্টা আগে প্রশ্নের মোড়ক খুলতে হবে। কেন্দ্রসচিব একটি সাধারণ মানের ফোন ব্যবহার করতে পারবেন। কেন্দ্রে আর কেউ মোবাইল ফোন নিতে পারবেন না। কেউ এর ব্যত্যয় করলে শাস্তি পেতে হবে। প্রশ্নপত্র ফাঁসরোধে যা যা করা সম্ভব, তা করা হয়েছে বলে জানান শিক্ষামন্ত্রী।
সারা দেশে এসএসসি পরীক্ষা হবে অভিন্ন প্রশ্নপত্রে। মোট ৩ হাজার ৪১২টি কেন্দ্রে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। আজ লিখিত পরীক্ষা শুরু হয়ে ২৫ ফেব্রুয়ারি শেষ হবে।