আত্মশুদ্ধির মাধ্যমে মহান আল্লাহর ক্ষমা ও অনুগ্রহ লাভের আশায় ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা মাসব্যাপী সিয়াম সাধনা পালন করেছেন। সোমবার ৩০ রোজা পূর্ণ হয়েছে। মঙ্গলবার পবিত্র ঈদুল ফিতর। যথাযথ ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য এবং উৎসাহ, আনন্দ ও উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে সারা দেশে মুসলমানরা এদিন তাঁদের বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর উদ্যাপন করবেন। এরই মধ্যে রেডিও-টিভিতে-পাড়া-মহল্লায় বেজে উঠেছে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের সেই অতিচেনা গানের প্রিয় সুর, ‘ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এল খুশীর ঈদ...।’
রাজধানীসহ সারা দেশে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে ঈদ জামাতের প্রস্তুতিও ইতিমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। করোনা মহামারির কারণে গত দুই বছর হাইকোর্ট–সংলগ্ন জাতীয় ঈদগাহে ঈদের জামাত হয়নি। এবার এখানে আগামীকাল সকাল সাড়ে আটটায় ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হবে। রাষ্ট্রপতি, বিচারপতি, মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, মুসলিম বিশ্বের কূটনীতিকেরা জাতীয় ঈদগাহে ঈদের নামাজ আদায় করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
জাতীয় ঈদগাহে নারীদের জন্যও আলাদা নামাজের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সেখানে প্রায় ৩৫ হাজার মানুষ ঈদের নামাজ আদায় করতে পারবেন। তবে আবহাওয়া প্রতিকূল বা অন্য কোনো অনিবার্য কারণে এ জামাত সম্ভব না হলে ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হবে সকাল নয়টায় জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে। শত বছরের ঐতিহ্য কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ময়দানেও এবার ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হবে।
বাসস জানায়, পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। বাণীতে তাঁরা দেশবাসীকে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়ে দেশ, জাতি ও মুসলিম উম্মাহর কল্যাণ কামনা করেছেন। পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে এক বাণীতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেন, ধনী-দরিদ্র নির্বিশেষে সবাই যাতে ঈদের আনন্দ সমানভাবে উপভোগ করতে পারে, সেই জন্য মানবতার মুক্তির দিশারি হিসেবে ইসলামের মর্মার্থ ও অন্তর্নিহিত তাৎপর্য দিকে দিকে ছড়িয়ে পড়ুক, বিশ্ব ভরে উঠুক শান্তি আর সৌহার্দ্যে—পবিত্র ঈদুল ফিতরে এটাই তাঁর প্রত্যাশা।
দেশবাসী ও বিশ্বের সব মুসলমানকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও ঈদ মোবারক জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক বাণীতে বলেন, ‘ঈদ শান্তি, সহমর্মিতা ও ভ্রাতৃত্ববোধের অনুপম শিক্ষা দেয়। হিংসা-বিদ্বেষ ও হানাহানি ভুলে মানুষ সাম্য, মৈত্রী ও সম্প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ হয়। ঈদ ধনী-গরিব নির্বিশেষে সকলের জীবনে আনন্দের বার্তা বয়ে নিয়ে আসে। ঈদের আনন্দ আমাদের সবার।’
ঈদ উদ্যাপন উপলক্ষে দেশের সব হাসপাতাল, কারাগার, সরকারি শিশুসদন, প্রবীণনিবাস, ছোটমণি নিবাস, সামাজিক প্রতিবন্ধী কেন্দ্র, আশ্রয়কেন্দ্র, সেফহোমস, ভবঘুরে কল্যাণকেন্দ্র, দুস্থ কল্যাণ ও মাদকাসক্তি নিরাময়কেন্দ্রে উন্নতমানের খাবার পরিবেশনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস ও মিশন যথাযথভাবে পবিত্র ঈদুল ফিতর উদ্যাপন করবে।
ঈদের দিন সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের বিনা টিকিটে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ও উত্তর সিটি করপোরেশনের আওতাধীন সব শিশুপার্কে প্রবেশ এবং বিনোদনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের বিনা টিকিটে জাদুঘর, আহসান মঞ্জিল, লালবাগের কেল্লা ইত্যাদি দর্শনীয় স্থানে প্রবেশ এবং তা প্রদর্শনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ ছাড়া বাংলাদেশ শিশু একাডেমিতে শিশুদের ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। ঈদ উপলক্ষে সারা দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
এদিকে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে প্রতিবছরের মতো এবারও ঈদের পাঁচটি জামাত অনুষ্ঠিত হবে। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে প্রথম জামাত অনুষ্ঠিত হবে সকাল ৭টায়, এরপর পর্যায়ক্রমে ৮টা, ৯টা, ১০টা ও বেলা পৌনে ১১টায় অনুষ্ঠিত হবে ঈদ জামাত।
বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের সিনিয়র পেশ ইমাম হাফেজ মুফতি মাওলানা মিজানুর রহমানের ইমামতিতে প্রথম জামাত সকাল ৭টায় অনুষ্ঠিত হবে। মুকাব্বির থাকবেন জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের মুয়াজ্জিন হাফেজ মো. ইসহাক।
জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের পেশ ইমাম হাফেজ মুফতি মুহিবুল্লাহিল বাকী নদভী’র ইমামতিতে দ্বিতীয় জামাত সকাল ৮টায় অনুষ্ঠিত হবে। মুকাব্বির থাকবেন জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের সাবেক মুয়াজ্জিন হাফেজ মো. আতাউর রহমান।
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মুফাসসির ড. মাওলানা আবু সালেহ পাটোয়ারীর ইমামতিতে তৃতীয় জামাত সকাল ৯টায় অনুষ্ঠিত হবে। মুকাব্বির থাকবেন জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের খাদেম হাফেজ মো. নাছির উল্লাহ।
জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের পেশ ইমাম হাফেজ মাওলানা এহসানুল হকের ইমামতিতে চতুর্থ জামাত সকাল ১০টায় অনুষ্ঠিত হবে। মুকাব্বির থাকবেন জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের খাদেম মো. শহিদ উল্লাহ।
জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের পেশ ইমাম মাওলানা মুহিউদ্দিন কাসেমের ইমামতিতে পঞ্চম ও সর্বশেষ জামাত অনুষ্ঠিত হবে বেলা পৌনে ১১টায়। মুকাব্বির থাকবেন জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের খাদেম মো. রুহুল আমিন।
পাঁচ জামাতে কোনো ইমাম অনুপস্থিত থাকলে বিকল্প ইমাম হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মুফতি মাওলানা মো. আব্দুল্লাহ।
উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান সমাজকল্যাণ কর্মকর্তা মোহাম্মদ মামুন-উল-হাসান বাসসকে জানান, সিটি করপোরেশনের প্রতিটি ওয়ার্ডে ৫টি করে মোট ২৭০টি ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হবে।
পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে সরকারি, আধা সরকারি ভবন, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, বেসরকারি ভবন ও সশস্ত্র বাহিনীর সব স্থাপনায় জাতীয় পতাকা উত্তোলন এবং জাতীয় পতাকা ও ‘ঈদ মোবারক’ খচিত ব্যানার মহানগরীর গুরুত্বপূর্ণ ট্রাফিক আইল্যান্ড ও লাইট পোস্টে প্রদর্শন করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে সরকারি ভবনসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় আলোকসজ্জা করা হয়েছে।