জেনারেল মঞ্জুর হত্যা

এরশাদকে অব্যাহতি, তিনজনের বিরুদ্ধে সম্পূরক অভিযোগপত্র

মেজর জেনারেল এম এ মঞ্জুর
মেজর জেনারেল এম এ মঞ্জুর

মেজর জেনারেল এম এ মঞ্জুর হত্যা মামলায় জাতীয় পার্টির সাবেক চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ ও ডিজিএফআইয়ের সাবেক প্রধান মেজর জেনারেল (অব.) আবদুল লতিফের অব্যাহতি চেয়ে আবেদন করেছে পুলিশের অপরাধ ও তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। একই সঙ্গে এই মামলায় মেজর (অব.) কাজী এমদাদুল হক, লে. কর্নেল (অব.) শামসুর রহমান শামস ও লে. কর্নেল (অব.) মোস্তফা কামাল উদ্দিনের নামে সম্পূরক অভিযোগপত্র জমা দিয়েছে সিআইডি। সম্প্রতি ঢাকার প্রথম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে এই সম্পূরক অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হয়।

প্রথম আলোকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন রাষ্ট্রপক্ষে মামলাটি পরিচালনাকারী সরকারি কৌঁসুলি আসাদুজ্জামান খান। তিনি বলেন, জেনারেল মঞ্জুর হত্যা মামলায় জাতীয় পার্টির সাবেক চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ ও ডিজিএফআইয়ের সাবেক প্রধান মেজর জেনারেল (অব.) আবদুল লতিফকে অব্যাহতি দেওয়ার আবেদন করেছে সিআইডি। দুজনই মারা গেছেন। অপর তিনজনের বিরুদ্ধে সম্পূরক অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে। ২৫ জানুয়ারি মামলার শুনানির দিন ধার্য রয়েছে।

সাবেক রাষ্ট্রপতি এইচ এম এরশাদ ২০১৯ সালের ১৫ জুলাই মারা যান।
ছয় বছর আগে ২০১৪ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মামলাটি অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দেন আদালত।

সরকারি কৌঁসুলি আসাদুজ্জামান খান সেদিন আদালতে অধিকতর তদন্ত চেয়ে আবেদন করেন। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, মামলার সাক্ষ্য-প্রমাণ ও অভিযোগপত্র পর্যালোচনায় দেখা যাচ্ছে, তদন্তে ত্রুটি রয়েছে। তা ছাড়া গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষীদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। তিনি বলেন, এখন বিভিন্ন গণমাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। তদন্তকারী কর্মকর্তার তদন্তে অসম্পূর্ণতা রয়েছে। তাই ন্যায়বিচারের স্বার্থে ঘটনার অধিকতর তদন্ত হওয়া প্রয়োজন।

মঞ্জুর হত্যা মামলায় সাবেক রাষ্ট্রপতি এইচ এম এরশাদসহ মোট পাঁচজনের বিচার চলছিল। এর মধ্যে এরশাদ ছিলেন অভিযোগপত্রভুক্ত প্রধান আসামি। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ হলো, ১৯৮১ সালের ৩০ মে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে হত্যার ঘটনা ভিন্ন খাতে নিতে এরশাদের নির্দেশে কিছু সামরিক কর্মকর্তা জেনারেল মঞ্জুরকে পুলিশ হেফাজত থেকে নিয়ে গুলি করে হত্যা করেছেন। এ বিষয়ে এরশাদের বিরুদ্ধে বিমানবাহিনীর তৎকালীন প্রধান এয়ার ভাইস মার্শাল সদরউদ্দীনসহ সশস্ত্র বাহিনীর সংশ্লিষ্ট কয়েকজন কর্মকর্তা ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬১ ও ১৬৪ ধারায় তদন্ত কর্মকর্তা ও আদালতে জবানবন্দি দেন। ১৯৮১ সালের ৩০ মে চট্টগ্রামে এক সেনা অভ্যুত্থানে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান নিহত হন। তখন চট্টগ্রামে অবস্থিত সেনাবাহিনীর ২৪তম পদাতিক ডিভিশনের জেনারেল অফিসার স্টাফ (জিওসি) ছিলেন মোহাম্মদ আবুল মঞ্জুর। জিয়াউর রহমান নিহত হওয়ার পর আত্মগোপনে যাওয়ার পথে তাঁকে পুলিশ আটক করে। এরপর ২ জুন মেজর জেনারেল মঞ্জুরকে হাটহাজারী থানার পুলিশ হেফাজত থেকে চট্টগ্রাম সেনানিবাসে নিয়ে গুলি করে হত্যা করা হয়। ঘটনার ১৪ বছর পর ১৯৯৫ সালে ২৮ ফেব্রুয়ারি মঞ্জুরের ভাই আইনজীবী আবুল মনসুর আহমেদ চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ থানায় মামলা করেন।

তাতে অভিযোগ করা হয়, জেনারেল মঞ্জুরকে পুলিশের কাছ থেকে মেজর কাজী এমদাদুল হক সেনা হেফাজতে নেন। পরে তাঁকে ঠান্ডা মাথায় গুলি করে হত্যা করা হয়।

১৯৯৫ সালের ২৭ জুন এরশাদসহ পাঁচজনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় সিআইডি। অভিযোগপত্রভুক্ত অপর চারজন ছিলেন মেজর জেনারেল (অব.) আবদুল লতিফ (ডিজিএফআইয়ের সাবেক প্রধান), মেজর কাজী এমদাদুল হক, লে. কর্নেল শামসুর রহমান শামস ও লে. কর্নেল মোস্তফা কামাল উদ্দিন। এ ছাড়া তদন্তে ব্রিগেডিয়ার এ কে এম আজিজুল ইসলাম ও নায়েক সুবেদার আবদুল মালেকের বিরুদ্ধেও হত্যায় জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া যায়। এ কে এম আজিজুল ইসলাম ১৯৯২ সালে ও আবদুল মালেক ১৯৯১ সালে মারা যান। তাই তাঁদের আসামি করা হয়নি। অভিযোগপত্রে বলা হয়, এরশাদের নির্দেশে আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে মঞ্জুরকে হত্যা করে এবং লাশ গোপন করার চেষ্টা করেন।