মার্চ আর এপ্রিল। গাছে পান থাকে না। তাই পুঞ্জির লোকজনও হয়ে পড়েন বেকার। এবার আর সেই অবস্থায় পড়তে হচ্ছে না মৌলভীবাজারের পানপুঞ্জিগুলোর বাসিন্দাদের।
জেলার খাসিয়া পানপুঞ্জিতে ‘লবর’ বা নতুন পান উত্তোলন শুরু হয়েছে। আগাম বৃষ্টি হওয়ায় পানগাছে নতুন পানের দেখা পেয়েছেন চাষিরা। আগাম পান আসায় চাষিরা পানের ভালো দামও পাচ্ছেন। পানপুঞ্জিগুলোয় গাছ থেকে পান উত্তোলন, পান গোছানো ও পান বিপণনে ব্যস্ত সময় শুরু হয়েছে খাসিয়া নারী-পুরুষ শ্রমিকদের।
জানতে চাইলে কমলগঞ্জের লাউয়াছড়া পানপুঞ্জির মন্ত্রী (পুঞ্জিপ্রধান) এবং বৃহত্তর সিলেট আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক ফিলা পতমি প্রথম আলোকে বলেন, ‘সাধারণত ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে পানগাছ থেকে সম্পূর্ণ পান উত্তোলন শেষ হয়ে যায়। সময়মতো বৃষ্টি দিলে এপ্রিলের শেষ বা মে মাস থেকে আবার পান উত্তোলন শুরু হয়। এবার আগাম বৃষ্টির কারণে মার্চ মাসেই পান উত্তোলন শুরু হয়েছে। প্রায় এক সপ্তাহ ধরে লবর বা নতুন পান তোলা চলছে। আগাম পান আসায় দামও ভালো পাওয়া যাচ্ছে। যাঁরা পানগাছে সেচ দিয়েছিলেন, তাঁদের পান বেশি এসেছে।’
খাসিয়া পানপুঞ্জি সূত্রে জানা গেছে, মৌলভীবাজার সদর উপজেলা বাদে বাকি ছয়টি উপজেলা রাজনগর, শ্রীমঙ্গল, কমলগঞ্জ, কুলাউড়া, জুড়ী ও বড়লেখার বিভিন্ন পাহাড়ি এলাকায় ছোট–বড় ৬৫টি পানপুঞ্জি রয়েছে। এসব পানপুঞ্জির বাসিন্দাদের অধিকাংশই হচ্ছেন খাসিয়া (খাসি) সম্প্রদায়ের। এর বাইরে কিছু গারো পরিবার আছে। তাদের উৎপাদিত পান স্থানীয়ভাবে ‘খাসিয়া পান’ নামে পরিচিত। পানপুঞ্জির বাসিন্দাদের জীবিকার আয়ের প্রধান উৎসও হচ্ছে এই পান চাষ। প্রথা অনুয়ায়ী সাধারণত ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত পানের ‘লংখং’ বা গাছের সম্পূর্ণ পান তোলা হয়ে থাকে। মার্চ-এপ্রিল এই দুই মাস গাছে পান থাকে না। তাই এ সময়টিতে পানপুঞ্জিতে পান উত্তোলনের কোনো কাজ থাকে না। এই দুই মাস পানশ্রমিকেরা সাধারণত বেকারই থাকেন। তাঁরা এ সময়টি আর্থিক সংকটে পার করেন। এই পানশ্রমিকদের মধ্যে খাসিয়া ছাড়াও অনেক বাঙালি শ্রমিকও আছেন। আবার এপ্রিল মাস থেকে বৃষ্টিপাত শুরু হলে পানগাছগুলোতে নতুন পানপাতা গজিয়ে উঠতে থাকে। তখন এপ্রিলের শেষের দিক বা মে মাস থেকে নতুন পান উত্তোলন শুরু হয়ে যায়।
কিন্তু এবার আগাম বৃষ্টিপাত হওয়ায় পানগাছে আগাম পান চলে এসেছে। এতে পান উত্তোলন বন্ধের সময় বেশি দিন থাকেনি। প্রায় সব পানপুঞ্জিতেই ‘লবর’ বা নতুন পান উত্তোলন শুরু হয়ে গেছে। যেসব পুঞ্জিতে সেচ–সুবিধা আছে, সেচ দেওয়া হয়েছে। সেগুলোতে পানের পরিমাণ বেশি এসেছে। আগাম পান আসায় পানচাষিরা বাজারে পানের ভালো দামও পাচ্ছেন। মৌসুমে যেখানে পানের আকার বড় থাকে। তখন এক বিড়া (১৪৪টি পান) পানের দাম মেলে ২০ থেকে ২৫ টাকা। আর এখন পানের আকার মৌসুমের মতো অতটা বড় না হলেও এক বিড়া পানের দাম মিলছে ১২০ টাকা। এতে চাষিরা লাভবান হচ্ছেন। যে সময়টিতে তাঁদের আর্থিক সংকটে থাকার কথা, সেই সংকটে আর পড়তে হচ্ছে না।
খাসি সোশ্যাল কাউন্সিলের তথ্য কর্মকর্তা সাজু মারচিয়াং গতকাল শুক্রবার প্রথম আলোকে বলেন, এবার আগাম বৃষ্টিপাত হওয়ায় জেলার প্রায় পানপুঞ্জিতে কমবেশি পান উত্তোলন শুরু হয়ে গেছে। পান উত্তোলন বেশি দিন বন্ধ ছিল না। আগাম পান আসায় পুঞ্জি এলাকা কর্মচঞ্চল হয়ে উঠেছে।