>• রোহিঙ্গা সমস্যায় নতুন মাত্রা
• এবার এসেছেন বৌদ্ধধর্মাবলম্বীরা
• সীমান্ত বন্ধের নির্দেশ
• ভারতের সমর্থন চাওয়া হবে
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরুর দিনক্ষণ চূড়ান্ত করেও মিয়ানমার রাখাইনে অনুকূল পরিবেশ নিশ্চিত করতে পারেনি বলে তাদের ফেরত পাঠানো যায়নি। এরই মধ্যে রাখাইন থেকে গত কয়েক দিনে বান্দরবানের সীমান্ত অতিক্রম করে মিয়ানমারের প্রায় দেড় শ নাগরিক বাংলাদেশে এসেছে। এরা বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের বলে জানা গেছে।
জাতিসংঘ মহাসচিবের মিয়ানমারবিষয়ক বিশেষ দূত ক্রিস্টিন শ্রেনার এবং ইউএনএইচসিআরের বিশেষ দূত অ্যাঞ্জেলিনা জোলির বাংলাদেশ সফরের সময় এই অনুপ্রবেশ রোহিঙ্গা সংকটে নতুন মাত্রা যুক্ত করেছে।
বান্দরবান সীমান্ত দিয়ে মিয়ানমারের নাগরিকদের অনুপ্রবেশের প্রতিবাদ জানিয়ে গত মঙ্গলবার ঢাকায় দেশটির রাষ্ট্রদূত লুইন ওকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব করা হয়। রাষ্ট্রদূতকে বলা হয়, রাখাইনে আরাকান আর্মির সঙ্গে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সংঘাতে লোকজন সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে আসছে, যা অত্যন্ত উদ্বেগের। এ নিয়ে রাষ্ট্রদূতকে একটি কূটনৈতিক পত্রও দিয়েছে বাংলাদেশ।
এদিকে মিয়ানমারের নাগরিকদের অনুপ্রবেশ ঠেকাতে সীমান্ত বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সন্ধ্যায় বাংলাদেশ বর্ডার গার্ডের (বিজিবি) দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা প্রথম আলোকে এ তথ্য জানান। এর আগে বিকেলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন তাঁর দপ্তরে সাংবাদিকদের কাছে সীমান্ত বন্ধের বিষয়ে নির্দেশনার বিষয়টি অবহিত করেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বাসসকে বলেছেন, দিল্লি সফরের সময় রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে ভারতের অধিকতর সমর্থন চাইবেন তিনি। তিন দিনের সফরে গতকাল বিকেলে তিনি ঢাকা ছেড়ে গেছেন।
প্রসঙ্গত, গত ডিসেম্বর ও জানুয়ারিতে ভারতে আশ্রয় নেওয়া অন্তত দেড় হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে। ভারত থেকে তাদের জোর করে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হবে—এই ভয়ে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে চলে এসেছে।
শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মো. আবুল কালাম প্রথম আলোকে বলেন, হঠাৎ করে গত ডিসেম্বর মাসের শুরু থেকে ভারতের নয়াদিল্লি, জম্মু ও কাশ্মীর, হায়দরাবাদের বিভিন্ন শিবিরে বসবাস করা ১ হাজার ৪০০–র বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে এসেছে বাংলাদেশে। তাদেরকে উখিয়ার ট্রানজিট পয়েন্টে আশ্রয় শিবিরে আন্তর্জাতিক সংস্থা ইউএনএইচসিআরের তত্ত্বাবধানে রাখা হয়েছে। এর মধ্যে আরও কিছু রোহিঙ্গার সংখ্যা বাড়তে পারে। তবে কিছু কিছু পরিবার নাইক্ষ্যংছড়ি, উখিয়া ও টেকনাফের বিভিন্ন শিবিরে তাদের আত্মীয়স্বজনের কাছে আশ্রয় নিয়েছে বলে শিবিরের দায়িত্বে নিয়োজিত কর্মকর্তাদের কাছ থেকে তথ্য পাওয়া যাচ্ছে।
বান্দরবান থেকে আমাদের প্রতিনিধি বুদ্ধজ্যোতি চাকমা জানান, সেখানকার রুমা উপজেলার দুর্গম সীমান্ত অতিক্রম করে মিয়ানমারের ১৬০ জন নাগরিক চেইক্ষ্যংপাড়ায় আশ্রয় নিয়েছে। রাখাইন বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে দেশটির সেনাবাহিনীর অভিযানের মুখে প্রাণ বাঁচাতে তারা বাংলাদেশে আসে।
৩ ও ৪ ফেব্রুয়ারি তারা সীমান্ত অতিক্রম করে বলে জানা গেছে। এদের মধ্যে সাতটি খুমি ও পাঁচটি খাসিয়া এবং ২৩টি মারমা বা রাখাইন পরিবার। আশ্রয় নেওয়া পরিবারগুলোর অধিকাংশ নারী ও শিশু। পরিবারগুলো চেইক্ষ্যংপাড়ার বম সম্প্রদায়ের বাড়িঘরে আশ্রয় নিয়েছে। বলা হচ্ছে, ৭২ নম্বর সীমান্ত পিলার এলাকা দিয়ে তারা ঢুকেছে।
রুমা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শামসুল আলম বলেন, রেমাক্রি প্রাংসা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের কাছ থেকে তিনি চেইক্ষ্যংপাড়ায় ১৬০ জন মিয়ানমারের নাগরিক আশ্রয় নেওয়ার কথা শুনেছেন।
বিজিবির বান্দরবানের সেক্টর অধিনায়ক কর্নেল জহিরুল হক খান বলেছেন, চেইক্ষ্যংপাড়ার বমপাড়া–সংলগ্ন ৭২ নম্বর সীমান্ত পিলার রুমা উপজেলা সদর থেকে প্রায় ৫৫ কিলোমিটার পূর্ব-দক্ষিণে। সেখান থেকে নিকটতম বিজিবির ধুপপানিছড়া সীমান্তচৌকির দূরত্ব ১৩ কিলোমিটার। দুর্গম ওই এলাকায় পৌঁছাতে সময় লাগবে।
এদিকে কক্সবাজারে ৩৪ বিজিবির ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক মেজর ইকবাল আহমেদ গতকাল সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, নাইক্ষ্যংছড়ি ও উখিয়া সীমান্তবর্তী এলাকা দিয়ে মিয়ানমার থেকে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে রোহিঙ্গাসহ কেউ যাতে বাংলাদেশে আসতে না পারে, সে জন্য উচ্চপর্যায়ের নির্দেশনায় সীমান্ত সিল করে দেওয়া হয়েছে।
টেকনাফ ২ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. আছাদুদ জামান চৌধুরী বলেন, টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে বিজিবি কড়া সতর্ক অবস্থায় রয়েছে। পাশাপাশি বিজিবির টহলও বাড়ানো হয়েছে।
বান্দরবানের জেলা প্রশাসক দাউদুল ইসলামের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন ধরেননি।
গত ৪ জানুয়ারি মিয়ানমারের স্বাধীনতা দিবসে রাখাইনে বৌদ্ধ বিদ্রোহীরা চারটি পুলিশচৌকিতে হামলা চালায়। এ হামলায় দেশটির নিরাপত্তা বাহিনীর সাত সদস্য নিহত হন। এর আগে ২০১৭ সালে রাখাইনে সেনা অভিযানের মুখে ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গা মুসলিম দেশ ছেড়ে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নেয়।