দু–একটি কোম্পানি তরল দুধের দাম বাড়িয়েছে। বাকিগুলোর বিক্রয় প্রতিনিধিরা দাম বাড়ানো হবে বলে দোকানিদের জানিয়ে গেছেন।
কোম্পানিভেদে গুঁড়া দুধের দাম গত সপ্তাহেই কেজিতে ৫০ থেকে ৬০ টাকা বেড়েছিল। এবার বাড়ছে তরল দুধের দাম। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার মুদিদোকানে গতকাল শনিবার পাস্তুরিত তরল দুধের আধা লিটারের প্যাকেট আগের চেয়ে ৭ টাকা এবং ১ লিটার ১০ টাকা বেশি দামে বিক্রি করতে দেখা যায়।
দোকানিরা বলছেন, দু–একটি বিপণনকারী কোম্পানি তরল দুধের দাম বাড়িয়েছে। বাকিগুলোর বিক্রয় প্রতিনিধিরাও শিগগিরই দাম বাড়ানো হবে বলে খুচরা বিক্রেতাদের জানিয়ে গেছেন। তাঁরা বলেছে, নানা কারণে দুধ উৎপাদন ও পরিবহনে ব্যয় বেড়েছে। খামারিদের বাড়তি দাম দিতে হচ্ছে। এতে দাম না বাড়িয়ে পারা যাচ্ছে না।
রাজধানীর দিলু রোড এলাকায় মা ভ্যারাইটিজ স্টোর নামের একটি মুদি পণ্য বিক্রির দোকান। গতকাল দোকানটিতে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে আড়ং ডেইরির নতুন ও পুরোনো উভয় দামের আধা লিটার ও এক লিটার পরিমাণের তরল দুধের প্যাকেট ছিল। মোড়কে লেখা উৎপাদনের তারিখ অনুযায়ী, ৭ মে উৎপাদিত আধা লিটারের প্যাকেটে মূল্য লেখা ৩৮ টাকা। আর গত বুধবার উৎপাদিত দুধের মূল্য ৪৫ টাকা। অর্থাৎ আধা লিটারে দাম বাড়ানো হয়েছে ৭ টাকা। একইভাবে গত শুক্রবার (১৩ মে) উৎপাদিত ১ লিটারের মোড়কে দাম ৮০ টাকা উল্লেখ করা আছে। ৮ মে উৎপাদিত দুধের মোড়কে লেখা দাম ছিল ৭০ টাকা।
মা ভ্যারাইটিজ স্টোরের মালিক সোহাগ আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, দাম কেন বাড়ানো হয়েছে, এর সঠিক কারণ বিক্রয় প্রতিনিধিরা জানাতে পারেননি।
অন্যদিকে বাজারে মিল্ক ভিটা ও আকিজ ডেইরির ফার্ম ফ্রেশ তরল দুধের খুচরা বিক্রয় মূল্য আগের মতোই আছে। তবে শিগগিরই কোম্পানিগুলোর দুধের দাম বাড়ানো হবে বলে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে খুচরা দোকানিরা জানান। মোড়কে উল্লিখিত মূল্য না বাড়লেও পাইকারি পর্যায়ে কেনা দাম বাড়ানো হয়েছে বলেও বিক্রেতারা জানান।
রাজধানীর মগবাজারের আউটার সার্কুলার রোড এলাকার সততা জেনারেল স্টোর নামের একটি দোকানের বিক্রয়কর্মী মো. আবদুল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, আগে ফার্ম ফ্রেশের আধা লিটার দুধ পাইকারিতে ৩৫ টাকা আর ১ লিটার দুধ ৬৩ টাকায় কেনা যেত। এখন আধা লিটার ৩৮ টাকা
আর ১ লিটার ৬৫ টাকায় কিনতে হচ্ছে। তাই আধা লিটার দুধ বেচে মাত্র ২ টাকা আর ১ লিটারে ৫ টাকা লাভ হচ্ছে।
এদিকে সয়াবিন তেলের নতুন দাম নির্ধারণ করে দেওয়ার ৯ দিন পরও পাড়ামহল্লার মুদিদোকানগুলোতে তেলের সরবরাহ পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়নি। কোনো দোকানে একটি কোম্পানির বোতলজাত সয়াবিন তেল থাকলেও অন্য কোম্পানির তেল পাওয়া যাচ্ছে না। আবার কোনো দোকানে আধা লিটার কিংবা এক লিটারের তেলের বোতল থাকলেও দুই কিংবা পাঁচ লিটারের তেলের বোতল নেই।
পরিবেশক ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, সয়াবিন তেল উৎপাদনকারী সব কোম্পানির বোতলজাত তেল বাজারে এখনো পাওয়া যাচ্ছে না। এ কারণে কোনো কোনো কোম্পানি স্বাভাবিক পরিমাণে তেল সরবরাহ করলেও ঘাটতি পূরণ হচ্ছে না। অন্যদিকে নতুন দামের তেলের সঙ্গে পণ্য গছিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এ কারণে অনেক খুচরা দোকানি তেল রাখছেন না।
বড় মগবাজার এলাকার কালাম জেনারেল স্টোরের মালিক রেজাউল করিম প্রথম আলোকে বলেন, পরিবেশকদের কাছ থেকেই ১ লিটার সয়াবিন তেল ১৯৪ টাকায় কিনতে হয়। এ ছাড়া ১ লিটারের একটি কার্টনের সঙ্গে ১ কেজি (৫০ গ্রাম ওজনের ২০ প্যাকেট) চা কিনতে হয়। এই হিসাবে এক লিটার তেল বেচলে চার টাকা লাভ হয়। অন্যদিকে চা বিক্রি কম হয়। অনেক সময় অবিক্রীত থেকে যায়।
রাজধানীর মালিবাগ ও মগবাজারের বিভিন্ন এলাকার অন্তত ১৫টি দোকানে গিয়ে গতকাল রূপচাঁদা ব্র্যান্ডের বোতলজাত কোনো সয়াবিন তেল বিক্রি করতে দেখা যায়নি। রাজধানীর কারওয়ান বাজারের ওই ব্র্যান্ডের সয়াবিন তেলের পরিবেশক আমির ট্রেডার্সের মালিক আমির হোসেন জানান, কোম্পানির কাছ থেকে তিনি চাহিদামতো তেল পাচ্ছেন না। আমির হোসেন বলেন, সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার তাঁকে ১, ২ ও ৫ লিটারের ৩১০ কার্টন রূপচাঁদা তেল কোম্পানি থেকে সরবরাহ করা হয়েছে। এর পরে গত দুদিনে (শুক্রবার ও শনিবার) আর কোনো তেল আসেনি। কবে দেবে সেটাও আগে থেকে নির্দিষ্ট করে বলছে না।