>
- পৃথিবীর মোট ইলিশ উৎপাদনের প্রায় ৬০ শতাংশ হয় বাংলাদেশে।
- দেশের মোট মৎস্য উৎপাদনের প্রায় ১২ শতাংশ আসে ইলিশ থেকে।
- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই অধ্যাপকের নেতৃত্বে পৃথক দুটি গবেষণা দল ইলিশের জীবনরহস্য উন্মোচন করেছেন
ইলিশ মাছের জীবনরহস্য উন্মোচন (জিনোম সিকোয়েন্স) করেছে বাংলাদেশের বিজ্ঞানীদের দুটি দল। তবে তারা পৃথকভাবে গবেষণা করে এই সাফল্য পেয়েছে। এই সফলতা ইলিশ মাছের সংরক্ষণ ও উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা। একই সঙ্গে তা ইলিশ মাছের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জানতেও সহায়ক হবে।
ইলিশের জীবনরহস্য উন্মোচনের কাজটি করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হাসিনা খানের নেতৃত্বে একটি গবেষক দল। এ ছাড়া বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শামসুল আলমের নেতৃত্বে আরেকটি গবেষক দলও ইলিশের জীবনরহস্য উন্মোচন গবেষণায় সাফল্য পেয়েছে।
এর আগে গত বছর বাংলাদেশ সরকার আন্তর্জাতিক মেধাস্বত্ব কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে ইলিশকে বাংলাদেশের ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পায়। এর ফলে ইলিশ শুধু বাংলাদেশেরই হলো তা-ই না, এর জীবনরহস্য উন্মোচনের কৃতিত্বও বাংলাদেশের বিজ্ঞানীরা পেলেন।
আট বছর আগে পাটের দুটি জাতের জীবনরহস্য উন্মোচন করেছিলেন বাংলাদেশের বিজ্ঞানীরা। এ ছাড়া গমের জন্য ক্ষতিকারক ব্লাস্ট রোগের জন্য দায়ী ছত্রাকের জীবনরহস্য উন্মোচন করেন এ দেশের বিজ্ঞানীরা।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, জিনোম হচ্ছে কোনো জীবের পূর্ণাঙ্গ জীবনবিধান। জীবের অঙ্গসংস্থান, জন্ম, বৃদ্ধি, প্রজনন এবং পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাওয়াসহ সব জৈবিক কার্যক্রম পরিচালিত হয় এর জিনোমে সংরক্ষিত নির্দেশনা থেকে। পূর্ণাঙ্গ জিনোম সিকোয়েন্সিং হচ্ছে কোনো জীবের জিনোমে সব নিউক্লিওটাইডসমূহ (জৈবঅনু) কীভাবে বিন্যস্ত রয়েছে তা নিরূপণ করা। একটি জীবের জিনোমে সর্বমোট জিনের সংখ্যা, বৈশিষ্ট্য এবং তাদের কাজ পূর্ণাঙ্গ জিনোম সিকোয়েন্স থেকেই জানা যায়।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক দলটি বলছে, জীবনরহস্য উন্মোচনের ওই তথ্য আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল সেন্টার ফর বায়োটেকনোলজি ইনফরমেশনের (এনসিবিআই) তথ্যভান্ডারে জমা দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রসহ বেশ কয়েকটি দেশের আন্তর্জাতিক জৈবপ্রযুক্তি সম্মেলনে ইলিশের জীবনরহস্য উন্মোচনের প্রাথমিক তথ্য তারা তুলে ধরেছে। মেঘনা ও বঙ্গোপসাগর থেকে ইলিশের নমুনা সংগ্রহ করে এই মাছের জীবনরহস্য উন্মোচনের গবেষণাটি করেছে তারা।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ইয়াহিয়া মাহমুদ প্রথম আলোকে বলেন, জীবনরহস্য উন্মোচনের এই সফলতাকে ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধি ও মান বাড়াতে কাজে লাগাতে হবে। এ জন্য যাঁরাই এ বিষয় নিয়ে কাজ করছেন, তাঁদের সঙ্গে সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাগুলোর যোগাযোগ বাড়াতে হবে। সবাই সম্মিলিতভাবে চেষ্টা করলে ইলিশ বাংলাদেশের মুখ আরও উজ্জ্বল করবে।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, একক প্রজাতি হিসেবে বাংলাদেশে ইলিশের অবদান সর্বোচ্চ। দেশের মোট মৎস্য উৎপাদনের প্রায় ১২ শতাংশ আসে ইলিশ থেকে। অন্যদিকে পৃথিবীর মোট ইলিশ উৎপাদনের প্রায় ৬০ শতাংশ হয় বাংলাদেশে। দেশের প্রায় চার লাখ মানুষ জীবিকার জন্য প্রত্যক্ষভাবে ইলিশ আহরণের সঙ্গে জড়িত।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হাসিনা খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী বাংলাদেশি বিজ্ঞানী ড. মং সেনো মারমা আমাদের কাছে ইলিশের জীবনরহস্য উন্মোচনের গবেষণার প্রস্তাব করেন। পরবর্তী সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আমাদের ল্যাবরেটরিতে (পরীক্ষাগার) এবং যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়ায় গবেষণাটি হয়। এর মধ্য দিয়ে আমরা এখন ইলিশের ডিএনএ বা কৌলিক বৈশিষ্ট্যের সব তথ্য জানতে পরেছি। আশা করি, দেশের ইলিশের জন্য আরও অনেক ইতিবাচক খবর আমরা আমাদের পরবর্তী গবেষণার মধ্য দিয়ে জানাতে পারব।’
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক দলটি বলছে, বাংলাদেশের জলসীমার মধ্যে ইলিশের মজুত কত, কোন ভৌগোলিক এলাকায় এর বিস্তৃতি
কী পরিমাণে, তা জানা জরুরি। এ ছাড়া বাংলাদেশের ইলিশ পৃথিবীর অন্যান্য দেশের (ভারত, মিয়ানমার, পাকিস্তান, মধ্যপ্রাচ্য) ইলিশ থেকে জেনেটিক্যালি (জিনগতভাবে) স্বতন্ত্র কি না, এসব প্রশ্নের উত্তর জানা জরুরি।
এ ব্যাপারে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শামসুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, দেশে ইলিশের গুণগত মান বাড়ানো ও এর উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য ইলিশের জীবনরহস্য উন্মোচনের গবেষণা অনেক কাজে লাগবে।