এবারের বাজেটে শ্রম খাতে বরাদ্দ বাড়বে কি

বাজেটে বরাদ্দকে যদি জাতীয় অগ্রাধিকারের মানদণ্ড হিসেবে দেখা হয়, তাহলে সহজেই বোঝা যায় শ্রম খাত সেই তালিকায় নেই।

দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণে বেতন-ভাতা বাড়ানোর দাবিতে বিভিন্ন পোশাক কারখানার শ্রমিকদের বিক্ষোভ। গত রোববার দুপুরে মিরপুর ১০ নম্বর গোলচত্বরে

শ্রমজীবীরা বাংলাদেশে পেশার বৈশিষ্ট্যে সবচেয়ে বড় জনগোষ্ঠী। দেশের অর্থনীতিরও চালিকা শক্তি তাঁরা।

সর্বশেষ শ্রম জরিপের (২০১৬-১৭) তথ্য এবং বছরে ১৫ থেকে ২০ লাখ নতুন মুখ শ্রমবাজারে যুক্ত হওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় নিলে দেখা যাবে, এখন বাংলাদেশের শ্রমশক্তির আকার ৭ কোটি ছুঁয়েছে। সরকারিভাবে এই মানুষদের ভালো-মন্দ দেখে থাকে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। তবে বাজেটকালে অতি কম বরাদ্দ পায় এ দুই মন্ত্রণালয়। দাবি উঠেছে এ অবস্থা বদলের।

২০২১-২২ অর্থবছরে শ্রম খাতের দুটি মন্ত্রণালয়ে বরাদ্দ ছিল মোট ১ হাজার ৬৭ কোটি টাকা, যা বাজেটের আকারের শূন্য দশমিক ১৭ শতাংশ। পুরো ১ ভাগও নয়! বছর বছর এই হিস্যা কমছে, সেটাও লক্ষ করার ব্যাপার।

বাজেট বরাদ্দকে যদি জাতীয় অগ্রাধিকারের মানদণ্ড হিসেবে দেখা হয়, তাহলে সহজেই বোঝা যায় শ্রম খাতের উন্নয়ন আপাতত সেই তালিকায় নেই।

একটি দেশের উন্নয়নে বিভিন্ন খাত বিভিন্ন সময় অগ্রাধিকার পাবে, এটা স্বাভাবিক। কিন্তু মূল্যস্ফীতি আর মন্দার শঙ্কায় থাকা সময়ে দেশে সবচেয়ে বড় জনগোষ্ঠী এবং তাঁদের স্বার্থ নিশ্চয়ই এখন বাড়তি মনোযোগ পাওয়ার দাবি রাখে। শ্রমিক সংগঠনগুলো ঠিক তা-ই বলছে।

দেশের সবচেয়ে বড় জনগোষ্ঠী শ্রমজীবীদের বড় উপদল অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের কর্মীরা। ‘শ্রমিক’ হিসেবে তাঁদের আইনগত স্বীকৃতি নেই। ফলে ন্যূনতম মজুরির সুরক্ষাও নেই। এ অবস্থার একটা ভালো সমাধান হতে পারে জাতীয় ন্যূনতম মজুরি। ‘জাতীয় ন্যূনতম মজুরি’র বিষয়ে সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি ইতিবাচক বলেই দেখা গেছে। ২০০১ সালে একবার এ বিষয়ে ঘোষণা এসেছিল, যা তখন মালিকগোষ্ঠীর আপত্তিতে স্থগিত হয়ে যায়।

বাংলাদেশে সরকারের দারিদ্র্য দূর করার কাজ সফল করতে হলে এবং শ্রমিকদের জীবনমান বাড়াতে হলে শ্রমের ন্যূনতম দর ঠিক করা দরকার। ভালো দর না পেলে ভালো পণ্য মেলে না। শ্রমের বেলায়ও সে কথা খাটে। আবার শ্রমের সর্বনিম্ন দাম ধরা না থাকায় এবং অনেক এলাকায় উদ্বৃত্ত শ্রমিক থাকায় অনেক মৌসুমে সেসব জায়গায় সারা দিন কাজ করেও সংসার চালানো যায় না। এটা সরকারের জন্যও বিরাট সমস্যা। সরকার একদিকে জাতীয় সম্পদের বড় অংশ খরচ করে হলেও দারিদ্র্য কমাতে চাইছে, অন্যদিকে শ্রমিকেরা এমন মজুরি পাচ্ছেন, যা ‘দারিদ্র্য’কে প্রতিনিয়ত নবজন্ম দিচ্ছে।

দারিদ্র্য ও হতদরিদ্র অবস্থা কমিয়ে আনতে বিশ্বে কয়েক ডজন দেশে ইতিমধ্যে জাতীয় ন্যূনতম মজুরির বিধান করা হয়েছে। ন্যূনতম মজুরির ন্যূনতম ঘোষণা ছাড়া অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের কোটি কোটি কর্মজীবী পরিবারকে দরিদ্র অবস্থা থেকে চূড়ান্তভাবে উদ্ধার কঠিন হয়ে যাচ্ছে ক্রমে। শ্রমিক সংগঠনগুলো মাসে ২০ হাজার টাকা ন্যূনতম মজুরি চাইছে। এটা অবশ্যই আলোচনাসাপেক্ষ।

এর বিজ্ঞানসম্মত সমাধান দিতে পারেন জাতীয় উৎপাদনশীলতার সঙ্গে সমন্বয়মূলক চিন্তা করে অর্থনীতিবিদ ও পুষ্টিবিদেরা। রাষ্ট্রীয় খরচপাতি ছাড়াই জাতীয় ন্যূনতম মজুরি হতে পারে দেশের সবচেয়ে বড় সামাজিক নিরাপত্তা উদ্যোগ। বাজেটের আগেই কিংবা বাজেটের ঘোষণায়ও জাতীয় নিম্নতম মজুরি ঠিক করার উদ্যোগ আসতে পারে। শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদ (স্কপ) ও গণতান্ত্রিক বাজেট আন্দোলনসহ অনেক সংগঠন সে রকম দাবি তুলেছে। তারা দাবির সপক্ষে সংবিধানের কথাও বলছে।

‘প্রকৃত মজুরি’ কমছে

বাংলাদেশের সংবিধানে বলা আছে, ‘রাষ্ট্রের অন্যতম মৌলিক দায়িত্ব হইবে অন্ন, বস্ত্র, আশ্রয়, শিক্ষা, চিকিৎসাসহ জীবনধারণের মৌলিক উপকরণের ব্যবস্থা করা’ (অনুচ্ছেদ ১৫-ক)। শ্রমিকেরা এই অনুচ্ছেদের তৃতীয় বিষয় ‘আশ্রয়’ নিয়ে খুব সোচ্চার এখন। বিশেষ করে শহরাঞ্চলে সপ্তাহ বা মাস শেষে শ্রমিকের যা রোজগার হয়, তার বড় অংশ বাড়িভাড়া ও যাতায়াতে খরচ হয়ে যাচ্ছে।

নিত্যপণ্যের উচ্চ দাম ও বাড়িভাড়ার দৌরাত্ম্য শ্রমিকদের স্থায়ী এক ঋণের জালে বেঁধে ফেলেছে। তিন বছর আগে দ্য ডেইলি স্টার লিখেছিল (১২ এপ্রিল ২০১৯) ২০১০ থেকে পরবর্তী ৯ বছরে পোশাকশ্রমিকদের বেতন বেড়েছে ৫০ শতাংশ। কিন্তু খাবার খরচ বেড়েছে ৬০ শতাংশ। আর বাড়িভাড়াসহ খাদ্যবহির্ভূত খরচ বেড়েছে ১১০ শতাংশ।

প্রায় সব খাতে এভাবে শ্রমিকদের ‘প্রকৃত মজুরি’ কেবল কমছে এখন। ঘরের খরচ বাঁচাতে একটা ভালো সমাধান হলো শ্রমিকদের জন্য কলোনি বানানো। পরিচ্ছন্নতাকর্মী এবং চা–বাগানের বাইরে আর কোনো খাতে শ্রমিক পরিবারগুলোর থাকার বড় আকারের কোনো ব্যবস্থা নেই। অথচ পাকিস্তান আমলে পাটসহ বিভিন্ন খাতে শ্রমিকদের জন্য বিস্তর কলোনি ছিল।

স্বাধীন দেশে সবচেয়ে বড় শ্রম খাত পোশাকশিল্পেও খুব নগণ্য শ্রমিক থাকার জায়গার প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধা পায়। বাংলাদেশ যখন বিভিন্ন দেশের সঙ্গে শ্রমিক প্রেরণে চুক্তি করে, তখন আবাসন সুবিধা চাওয়া হয়। ঠিক একইভাবে নিজ দেশে শ্রমিকদের থাকার বিষয়ে মনোযোগ দেওয়ার দাবি উঠেছে বাজেটপ্রণেতাদের কাছে। এসডিজি নামে পরিচিত ‘টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট’র ১১তম লক্ষ্যেও সবার জন্য আবাসনের কথা রয়েছে। কিন্তু বাস্তবায়ন করবে কে এসব ‘লক্ষ্য’?

বাজেট ও সাধারণ শ্রমিক

বাজেট প্রণয়নকালে সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষের মতামত শোনার যে মৃদু চল আছে, তাতে প্রান্তিক শিল্পাঞ্চলের সাধারণ শ্রমিকেরা কমই পৌঁছাতে পারেন। সাংবাদিক, এনজিও কর্মী বা ট্রেড ইউনিয়ন সংগঠকদের দেখলে আবাসনের পাশাপাশি শ্রমিকেরা আরেক স্থায়ী সমস্যার কথা জানান চিকিৎসা বিষয়ে। খোদ শ্রম আইনে পেশাগত কারণে শ্রমিকদের ৩৩ ধরনের রোগের উল্লেখ রয়েছে।

অথচ শিল্পের বিকাশ যেভাবে ঘটছে, শিল্পাঞ্চলে দূষণের যে ব্যাপকতা এবং দুর্ঘটনা ও ব্যাধি যেভাবে বাড়ছে, সেভাবে নেই শ্রমিকদের জন্য বিশেষায়িত হাসপাতাল। ২০১৫ সালে শ্রম মন্ত্রণালয় গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জে দুটি শ্রম হাসপাতাল করতে গিয়েও সফল হয়নি ‘টাকার অভাবে’। এই উদ্যোগে ‘সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্ব’ প্রক্রিয়ায় কোনো উদ্যোক্তা পাওয়া যায়নি। সরাসরি বাজেট বরাদ্দ ছাড়া জেলা পর্যায়ে দ্রুত এ রকম হাসপাতাল গড়া সম্ভব নয়। অথচ এটা জরুরি।

কল্যাণ তহবিল

চিকিৎসার প্রয়োজনে শ্রমিকদের একটা বড় সহায় হতে পারত ‘শ্রমিক কল্যাণ তহবিল’। কিন্তু এই ‘তহবিল’ নিয়ে শ্রমিক সংগঠকদের ক্ষোভের অন্ত নেই। শ্রম আইন অনুযায়ী বাংলাদেশে কয়েক ধরনের শ্রমিক কল্যাণ তহবিল আছে। এর মধ্যে বহুল আলোচিত হলো শ্রম মন্ত্রণালয়ের শ্রমিককল্যাণ তহবিল। কারখানার মালিকদের নিট মুনাফার ৫ শতাংশের অন্তত ১০ ভাগ শ্রমিককল্যাণ তহবিলে জমা হওয়ার কথা। এ ছাড়া বিশেষ খাত হিসেবে পোশাক খাতের শ্রমিকদের জন্য আরেকটা কল্যাণ তহবিল আছে। তারও ‘পরিচালন কর্তৃপক্ষ’ শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। এ তহবিলে পোশাক খাতের রপ্তানি আয় থেকে নির্দিষ্ট হারে (শূন্য দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ) অর্থ কেটে রাখা হয়। এ রকম সব তহবিলের অর্থকে যথাযথভাবে কাজে লাগিয়ে দেশের অভাবী শ্রমিকদের কল্যাণে, তাঁদের পরিবারের বিবিধ অসহায়ত্ব লাঘবে সরকার বিনা বিনিয়োগে অনেক কাজ করতে পারে।

শিল্প মুনাফার ৫ শতাংশ শ্রম আইন অনুযায়ী নির্দিষ্ট ‘তহবিল’গুলোতে জমা হচ্ছে কি না এবং সেসব জমাকৃত অর্থ আইনমতো শ্রমিকেরা নিয়মিত পাচ্ছেন কি না বা প্রকৃত বিপদে পড়া শ্রমিকদের কল্যাণে খরচ হচ্ছে কি না, তার জন্য স্থায়ী তদন্তকাঠামো প্রয়োজন। বিশেষ করে এসব তহবিলের সুবিধা যাতে কোনো কোনো জেলায় বেশি এবং কোনো কোনো জেলায় দৃষ্টিকটুভাবে কম বণ্টিত না হয়, সে বিষয়ে নজরদারি প্রয়োজন। তহবিলগুলোর দক্ষ ব্যবস্থাপনার দিকনির্দেশনা বাজেটে আসা দরকার। অর্থ মন্ত্রণালয় বাজেট প্রণয়নকালে শ্রমিকস্বার্থে এ বিষয়ে মনোযোগী হবে বলে শ্রমিকদের প্রত্যাশা।

রেশন কার্ড

এ রকম প্রত্যাশাগুলোর মধ্যে মাঠপর্যায়ে সবচেয়ে বড় প্রত্যাশা এখন রেশন কার্ড। খাদ্যপণ্যের লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধিতে শ্রমিকেরা কষ্টে আছেন। পেট ভরে তৃপ্তি করে খেতে পারা কেবল বেঁচে থাকার জন্য নয়, শ্রম উৎপাদনশীলতার জন্যও জরুরি। সংকটের সময় শ্রমিকদের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের জোগান পাওয়াকে ভারতে ‘মৌলিক অধিকার’ হিসেবে দেখা হয়। কেবল শ্রমিক অধিকারের জায়গা থেকে নয়, পুঁজিতন্ত্রে উৎপাদন প্রক্রিয়া সচল রাখতেও সেটা দরকার।

সে জন্যই চলতি বাজার পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে প্রত্যেক শ্রমিকের ন্যায্যমূল্যে রেশন কার্ড দরকার এখনই। প্রতিটি কার্ডের বিপরীতে পরিবারের চারজন সদস্যকে হিসাবে নিয়ে প্রতি মাসে প্রয়োজনীয় চাল, ডাল, তেলসহ নিত্যদিনের দরকারি জিনিস বরাদ্দ চান শ্রমিকেরা। সব খাতের শ্রমিকদের তাঁদের কর্মস্থলের মাধ্যমে নাম নথিভুক্ত করে এই কার্ড দেওয়া যায়। রেশন কার্ড ব্যবস্থা এবং তার আওতায় খাদ্য বিতরণব্যবস্থার জন্য বাজেটে পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দের জোরালো দাবি আছে শ্রমিকপাড়াগুলোতে।

সর্বজনীন পেনশন

এসব আশা ও দাবির কতটুকু বাস্তবায়িত হবে, সেটা এক সপ্তাহ পরে বিস্তারিত জানা যাবে। তবে ইতিমধ্যে ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে সরকার বাজেটে ‘সবার জন্য পেনশন’-এর কর্মসূচির কথা জানাতে চায়। এটাও শ্রমিকদের একটা চাওয়া।

বাংলাদেশে পেনশন পাওয়া না–পাওয়া নিয়ে বৈষম্য আছে। খুব অল্পসংখ্যক মানুষ এখানে পেনশন পান। সেই পেনশন আবার দেওয়া হয় জনগণের করের অর্থ থেকে। জিডিপির (মোট দেশজ উৎপাদন) প্রায় ১ ভাগ চলে যাচ্ছে এভাবে। যেসব কর্মজীবী-শ্রমজীবী পেনশন পান না, তাঁরা দুভাবে বৈষম্যের শিকার। তাঁরা যে কেবল পেনশন পান না তা-ই নয়, অন্য অল্পসংখ্যক মানুষের পেনশন দেওয়ার জন্য সম্পদের জোগান দিতে হচ্ছে তাঁদের। সরকার নিজেই এখন এই অন্যায্য অবস্থায় ভারসাম্য আনতে চাইছে সর্বজনীন পেনশনব্যবস্থা কায়েম করে। এটা প্রয়োজনীয় উদ্যোগ এবং এর দরকার বহু কারণে। প্রথমত, অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমজীবীদের জন্য; দ্বিতীয়ত, বিপুল প্রবীণের স্বার্থে।

বাংলাদেশে ৬০-এর বেশি বয়সী মানুষের সংখ্যা প্রায় এক কোটি। সরকারি চাকরি করে প্রবীণ হয়েছেন এমন মানুষের সংখ্যা ওই এক কোটিতে অতি নগণ্য। এর মধ্যে ৬৫ ঊর্ধ্ব আরও কিছু মানুষ ১৯৯৮ সাল থেকে বয়স্ক ভাতা (মাসে ৫০০ টাকা) পান এবং কিছু মানুষ বেসরকারি কাজ শেষে ভবিষ্য তহবিলের (প্রভিডেন্ট ফান্ড) সুবিধা পান। এসবের বাইরে প্রবীণদের বড় অংশ সারা জীবন কাজ করেও বার্ধক্যে আর্থিকভাবে সুরক্ষাহীন থাকেন।

এ অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে সরকার সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থার বিধিবিধান তৈরি করছে। কিন্তু এপ্রিলে ঘোষিত পেনশন কর্তৃপক্ষের খসড়া আইনে একাধিক স্তরের যে পরিচালনা কাঠামোর রূপরেখা তুলে ধরা হয়েছে, তাতে শ্রমিক সমাজ বা নাগরিক সমাজের কোনো প্রতিনিধি থাকবে কি না, সেটা নিশ্চিত নয়। এ রকম ‘কর্তৃপক্ষে’র কাজের কঠোর জবাবদিহির ব্যবস্থাও দরকার।

বলা হচ্ছে সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচিতে যুক্ত হতে হলে সবাইকে নির্দিষ্ট হারে অর্থ দিয়ে যেতে হবে। কিন্তু যেসব শ্রমজীবী নিয়মিত এ রকম নির্দিষ্ট হারে কিস্তি দিতে পারবেন না, তাঁদেরও পেনশন কর্মসূচিতে যুক্ত রাখার জন্য সরকারের বিশেষ সহায়তা থাকা দরকার মনে করছে শ্রমিক সংগঠনগুলো। ভারতে এ রকম কিছু কর্মসূচিতে কিস্তি ১০০ রুপি পর্যন্ত নমনীয় হারে রাখা আছে। বাংলাদেশের কর্মসূচিতেও সুনির্দিষ্টভাবে শ্রমিকদের জন্য খুব অল্প কিস্তি দিয়ে স্কিমে যুক্ত হওয়ার সুযোগ রাখার মতামত আসছে। এই কর্মসূচিতে প্রবাসী শ্রমিকদের অংশগ্রহণের সুযোগও যেন সহজ হয়।

প্রবাসী শ্রমিকদের ভোটাধিকার ও বাজেট

এই সময়ে প্রবাসে কাজ করতে যাওয়া বাংলাদেশিদের আরেক জনপ্রিয় দাবি ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ। যেহেতু লাখ লাখ প্রবাসী দেশের বাইরে থাকেন, সে কারণে বাংলাদেশের জনপ্রতিনিধি বাছাইয়ে এই দাবির বিশেষ যৌক্তিকতা আছে।

তবে বিদেশে থাকা বাংলাদেশিদের ভোট গ্রহণের ব্যবস্থা করতেও একটা কাঠামো গড়তে হবে এবং তার জন্যও বাজেটে অর্থমন্ত্রীর সুদৃষ্টি লাগবে। ডলার–সংকটের এই সময়ে হয়তো এ রকম একটা ঘোষণা প্রবাসী শ্রমজীবীদের দেশের অর্থনীতিকে মদদ দেওয়ার বাড়তি প্রেরণা জোগাবে।

লেখক গবেষক