প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা বলেছেন, জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) সেবা নির্বাচন কমিশনের (ইসি) কাছ থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের অধীনে নেওয়ার বিষয়ে ইসির সঙ্গে কোনো আলোচনা হয়নি। সম্প্রতি তাঁরা এ–সংক্রান্ত চিঠি পেয়েছেন। তবে তাঁরা মনে করেন এই সেবা ইসির হাতেই থাকা উচিত। না হলে কিছু অসুবিধা হবে।
আজ রোববার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন সিইসি। এর আগে ইসি সচিবালয়ের কর্মকর্তা–কর্মচারীরা সিইসির সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে সাক্ষাৎ করেন। তাঁরা চান, এনআইডির কার্যক্রম এখনকার মতো ইসির অধীনেই রাখা হোক।
সিইসি নূরুল হুদা বলেন, এনআইডি কার্যক্রম সুরক্ষা সেবা বিভাগে স্থানান্তর করা হচ্ছে। এটি নিয়ে কিছুদিন আগে তাঁরা চিঠি পেয়েছেন। তবে এর আগে এটি নিয়ে ইসির সঙ্গে কোনো আলোচনা বা পরামর্শ হয়নি। চিঠি পাওয়ার পর কমিশন বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছে। এইনআইডি অনুবিভাগের মহাপরিচালককে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে একটি প্রতিবেদন তৈরি করার জন্য। ইসির কী কী যুক্তি আছে, সেগুলো তাতে তুলে ধরা হবে। প্রতিবেদনটি ইসি সচিব মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে দেবেন।
সিইসি বলেন, স্থানান্তরের বিষয়টে এখন পর্যন্ত একেবারে প্রাথমিক পর্যায়ে, আলোচনার পর্যায়ে আছে। চিঠি দিলেই সঙ্গে সঙ্গে স্থানান্তর করা যায় না। এটি জটিল কাজ।
সিইসি বলেন, ‘আমরা মনে করি এনআইডি কার্যক্রম ইসির কাছেই থাকা উচিত। কারণ ইসি এটি তৈরি করেছে ভোটার তালিকা তৈরির ভিত্তিতে। সরকারের যে উৎকণ্ঠা বা পরামর্শ সেটা হলো কোনো দেশে নির্বাচন কমিশন এনআইডি কার্ড করে না। এটা ঠিকই, কোনো দেশে এটা নির্বাচন কমিশন করে না।’
সিইসি আরও বলেন, তবে অন্যান্য দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের পরিস্থিতি তুলনা করলে হবে না। ইসির কাছে এটি থাকলে কোনো অসুবিধা নেই। ইসি সেবা দিতে পারছে। তারপরও সরকারের কী চিন্তাভাবনা আছে, তা ইসি সচিব মন্ত্রিপরিষদ পর্যায়ে বা অন্যান্য পর্যায়ে আলোচনা করে বোঝানোর চেষ্টা করবেন।
এনআইডি এক দপ্তরে থাকলে আর ভোটার তালিকা ইসির হাতে থাকলে কোনো জটিলতা হবে কি না, এমন এক প্রশ্নের জবাবে সিইসি নূরুল হুদা বলেন, অসুবিধা হবে। কারণ ইসি ভোটার তালিকা তৈরি করে। ভোটারের বয়সটা নির্ধারণ করে। বহুদিন থেকেই এটি ইসি করে আসছে। এখন ইসি ভোটার তালিকা করবে আর এনআইডি থাকবে অন্যদের হাতে। এতে ওই মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে ‘সাবঅর্ডিনেশন’ বা ‘সুপেরিয়রিটি’ এসে যায়। যেটা সংবিধান গ্রহণ করে না। নির্বাচন কমিশন আলাদা থাকবে। অন্য কোনো মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে এ রকম দাপ্তরিক যোগাযোগ থাকবে না।
এর আগে সিইসির সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে বাংলাদেশ ইলেকশন কমিশন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নুরুজ্জামান তালুকদার সাংবাদিকদের বলেন, এনআইডি ভোটার তালিকার একটি বাই প্রোডাক্ট। এই কার্যক্রম স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে নিলে জাতীয় পরিচয়পত্র ও ভোটার তালিকার মধ্যে জটিলতা তৈরি হবে। যুক্তিগুলো সরকারের কাছে পৌঁছালে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা হতে পারে।
এখন জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন কার্যক্রম পরিচালনা করছে ইসি। চলতি মাসে এই কাজটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগে স্থানান্তর করা যায়, মত দিয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগকে চিঠি দেয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এই নির্দেশনা বাস্তবায়িত হলে ইসির পরিবর্তে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) দেবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
২০০৭ সাল থেকে ছবিসহ ভোটার তালিকা প্রণয়ন কাজের অংশ হিসেবে নাগরিকদের জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে আসছে ইসি। তারাই এখন জাতীয় পরিচয় নিবন্ধনের সব কার্যক্রম পরিচালনা করে। ইসিকে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন আইনে এই ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ১৭ মে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে দেওয়া চিঠিতে বলা হয়, জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন কার্যক্রম নির্বাহী বিভাগের দায়িত্বের অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় বিভিন্ন দেশের উদাহরণের আলোকে সুরক্ষা সেবা বিভাগ এই দায়িত্ব পালনে উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ বিবেচিত বিধায় সুরক্ষা সেবা বিভাগের দায়িত্বগুলোর মধ্যে জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধনসংক্রান্ত যাবতীয় কার্যক্রম অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে।
জাতীয় পরিচয়পত্র আইন ২০১০ সংশোধন করে ‘নির্বাচন কমিশন’-এর পরিবর্তে ‘সরকার’ শব্দ অন্তর্ভুক্ত করে আইনের প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনা যেতে পারে। এ ছাড়া স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন কার্যক্রম পরিচালনার জন্য বিদ্যমান অবকাঠামো ও জনবল ইসি থেকে সুরক্ষা সেবা বিভাগে হস্তান্তরের ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে।