ভাড়ায় চালিত প্রাইভেট কারে ঘুরতে যান তিনজন। এরপর তাঁরা চালকের সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলেন। পথে সবাই মিলে পান করেন বিয়ার। কৌশলে চালকের বিয়ারের সঙ্গে দেওয়া হয় চেতনানাশক বড়ি। পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) বলেছে, এভাবেই গাড়ি ছিনতাইয়ের জন্য হত্যা করা হয় সুনামগঞ্জ জেলার ধর্মপাশার মোশারফ হোসেনকে (৩৫)।
গত বছরের ২৭ মে গাড়ি ছিনতাই ও চালক হত্যার এই ঘটনা ঘটেছিল। পিবিআই তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় গত বুধবার দুজনকে গ্রেপ্তার করে। তাঁদের মধ্যে একজন আজ বৃহস্পতিবার হবিগঞ্জের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।
গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন ঢাকার হাজারীবাগ এলাকার বাসিন্দা মো. শামীম ফকির (৪০) ও তাঁর সহযোগী বরিশালের আগৈলঝাড়ার বাসিন্দা সালাউদ্দিন মীর ওরফে মিলন (২৯)। তাঁদের মধ্যে মিলন জবানবন্দি দিয়েছেন। পিবিআইর হবিগঞ্জ জেলায় দায়িত্বরত কর্মকর্তা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মিয়া কুতুবুর রহমান চৌধুরী বলেন, ওই হত্যাকাণ্ডে তিনজন ছিল। গত বুধবার শামীমকে রাজধানীর হাজারীবাগ ও মিলনকে বরিশালের উজিরপুর থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। অপরজন পলাতক।
কুতুবুর রহমান চৌধুরী বলেন, মিলনের জবানবন্দি থেকে হত্যা ও গাড়ি ছিনতাইয়ের বিবরণ জানা গেছে। গ্রেপ্তার অপর আসামি শামীম ফকিরের ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়েছে। আদালত পরবর্তী কার্যদিবসে এর ওপর শুনানি করবেন।
মিলনের স্বীকারোক্তির বরাত দিয়ে কুতুবুর রহমান চৌধুরী জানান, গত বছরের ২৭ মে সিলেট শহরের চৌহাট্টা (প্রাইভেট কার স্ট্যান্ড) এলাকা থেকে আসামিরা সিলেটের জাফলং বেড়ানোর কথা বলে একটি প্রাইভেট কার (ঢাকা মেট্রো গ-২৫-৮৭৬৭) ভাড়া করেন। আসামিরা ওই দিন জাফলং বেড়ানো শেষে সিলেট শহরে ফেরার সময় গাড়ির চালক মোশারফ হোসেনের (৩৫) সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলেন। একসময় তাঁরা বিয়ারে চেতনানাশক বড়ি মিশিয়ে চালককে খাওয়ান। একপর্যায়ে চালক অচেতন হয়ে পড়লে তাঁকে পেছনের আসনে শুইয়ে আসামি শামীম ঢাকার উদ্দেশে গাড়ি চালান। তবে হবিগঞ্জের বাহুবল উপজেলা অতিক্রম করার সময় চেতনা ফিরে পান মোশারফ। এ সময় তিনি ছিনতাইকারীদের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার চেষ্টা করলে তাঁরা তাঁকে শ্বাসরোধে হত্যা করেন এবং বাহুবল থানা এলাকার মহাসড়কের পাশে লাশটি ফেলে দেন। এরপর ছিনতাইকারীরা প্রাইভেট কার নিয়ে নরসিংদী পৌঁছালে পুলিশ চেকপোস্টের সামনে পড়েন। এ সময় তাঁরা গাড়ি রাস্তায় রেখে পালিয়ে যান। পরে পুলিশ ওই গাড়ি জব্দ করে।
নিহত মোশারফ হোসেনের বাড়ি সুনামগঞ্জ জেলার ধর্মপাশা এলাকায়। তিনি সিলেট শহরে বসবাস করতেন। এ ঘটনায় গাড়ির মালিক কামাল আহম্মেদ ঘটনার পর দিন গত বছরের ২৮ মে হবিগঞ্জের বাহুবল থানায় অজ্ঞাতদের আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেছিলেন। পরে গত বছরের ১ জুলাই এই মামলার তদন্তভার পড়ে পিবিআইর ওপর।
পিবিআইয়ের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মিয়া কুতুবুর রহমান চৌধুরী প্রথম আলোকে আরও বলেন, আসামিরা পেশাদার গাড়ি ছিনতাইকারী দলের সক্রিয় সদস্য। তাঁরা ঢাকাসহ সারা দেশে বিভিন্ন জায়গায় প্রাইভেট কার ও অটোরিকশাসহ বিভিন্ন ধরনের গাড়ি ছিনতাইয়ের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে জড়িত।