একুশের মহাফেজখানা

একুশে ফেব্রুয়ারি ও আমাদের সাংস্কৃতিক চেতনা

একুশের পর থেকেই এর চেতনাকে উপজীব্য করে লেখা হয়েছে অজস্র কবিতা, গান, ছড়া, নাটক, গল্প, উপন্যাস ও প্রবন্ধ। এগুলোর মধ্য থেকে ভাষা আন্দোলনের অভিঘাতে রচিত প্রথম দিককার কিছু লেখা।

একুশে ফেব্রুয়ারি আমাদের জাতীয় জীবনে অপরিসীম শ্রদ্ধা ও আবেগের সঙ্গে প্রতিষ্ঠিত। বীরের রক্ত আর মায়ের অশ্রু, দেশবাসীর ভালোবাসা আর চৈতন্য, সংগ্রামশীলতা আর কষ্টস্বীকার এ দিনকে গড়ে তুলেছে। বিনিময়ে এ দিনের কাছ থেকে আমরা পেয়েছি ভবিষ্যতে চলার পথের ইঙ্গিত আর একত্রিত হবার স্থান।

যে সমস্ত স্বপ্ন ও আকাঙ্ক্ষা নিয়ে দেশের কোটি কোটি মানুষ পাকিস্তান আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল, দেশ স্বাধীন হবার চার পাঁচ বছর পরও যে আকাঙ্ক্ষা রূপ পেল না বলে জনসাধারণের মনে বিক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছিল সহজেই। একুশে ফেব্রুয়ারি জনসাধারণের এই সর্বতোমুখী বিক্ষোভকে রূপ দিয়েছে। বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করার দাবিই এ দিনের প্রধান আওয়াজ হলেও এর পেছনে রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অধিকারের প্রশ্ন এবং ওইসব ক্ষেত্রে আশাহত হবার পরিচয় জড়িত ছিল। ১৯৪৮–এর মার্চ মাসে ভাষা আন্দোলনের যে অবস্থা, তার সঙ্গে ১৯৫২ সালের ফেব্রুয়ারির তুলনা করলে এ কথা সহজেই বোঝা যাবে।

তবু একুশে ফেব্রুয়ারির প্রধান পরিচয় বিক্ষোভের প্রত্যক্ষ কারণে—বাংলা ভাষার প্রতি আমাদের ভালোবাসা ও ভাবাবেগের প্রকাশ। মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষার জন্যে আত্মাহুতি দানের এমন দুর্লভ নিদর্শন পৃথিবীর ইতিহাসে আর আছে কি না জানি না। মনে পড়ছে মিশরের কথা। আরবরা যখন মিশর জয় করে, মিশরবাসী তখন কপ্‌টিক ভাষায় কথা বলত। কিন্তু শাসকগোষ্ঠীর প্রচণ্ড তাড়নায় কপ্‌টিক ভাষার অস্তিত্ব বিলুপ্ত হয়ে যায়, আরবীই সেই আসন গ্রহণ করে। আজ কপ্‌টিক ভাষা মৃত—তার রূপ নির্ণয় ভাষাতত্ত্বের গবেষণাসাপেক্ষ আর মিশরবাসী অকাতরে আরবী ভাষা বলে চলেছে। ভেবে শিউরে উঠতে হয়, আমাদের ভবিষ্যতের জন্যে দেশের শাসকগোষ্ঠী এই ভাগ্যই নির্ধারণ করে রেখেছিল, শহীদেরা প্রাণের বিনিময়ে যা প্রতিরোধ করেছে।

দেশ স্বাধীন হবার অব্যবহিত পরই সমাজের উঁচু স্তরে ভাষা ও সংস্কৃতিধ্বংসী একটি মনোভাব স্পষ্ট হয়ে ওঠে। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার এক বছরের মধ্যেই আমাদের বলে দেওয়া হয়েছিল যে, বাংলা রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা লাভ করবে না। সে ব্যাপারে আমাদের যে কোনো বক্তব্য থাকতে পারে, এটাও সেদিন স্বাভাবিক বা সমুচিত বলে মনে করা হয়নি। সরকারি উদ্যোগে শুরু হলো আরবি হরফে বাংলা লেখার প্রচেষ্টা। একদল লোক দেখা দিলেন, যাঁরা বাংলায় উর্দু–আরবি–ফারসি মিলিয়ে একটা সংকর ভাষা সৃষ্টি করার জন্যে উঠে পড়ে লাগলেন। মিথ্যে করে বলা হলো যে, বাংলা ভাষা হিন্দুয়ানি ভাষা ও সংস্কৃতের সন্তান। শুধু তাই নয়। বাংলা ভাষা ও তার সাহিত্য সম্বন্ধে আমাদের আবেগ যতই সংক্ষিপ্ত করে আনা যায়, ততই যে পাকিস্তানের মঙ্গল, জনসাধারণের মুরুব্বীরা একথা বোঝাতে কসুর করেননি।

দেশের আপামর জনসাধারণ যে সঙ্গে সঙ্গেই এইসব ধ্বংসমূলক কার্যকলাপের প্রতিবাদে এগিয়ে আসেনি, তার বোধ হয় দুটো কারণ আছে। প্রথমত, যতই তার স্বপ্ন ভেঙেছে, ততই জীবন ধারণের মৌলিক সমস্যা তার দৃষ্টি আচ্ছন্ন করে উৎকটভাবে দেখা দিয়েছে। দ্বিতীয়ত, কোন হরফে বাংলা লেখা সহজ হবে, বাংলা ভাষার উৎপত্তি ও ধারা প্রকৃতি কেমন, এ ভাষায় কতটা বিদেশী শব্দ চলবে, তার অতীতকে বিস্মৃত হলে ক্ষতি কী—এসব প্রশ্নের জবাব মূলত বিশেষজ্ঞের মতামত সাপেক্ষ। কিন্তু এ কথা বলা সহজ যে, দেশের জনসাধারণের ভাষাই রাষ্ট্রভাষা হবে। তাই এইসব ক্রিয়াকলাপের বিরুদ্ধে পূর্ব পাকিস্তানে যে প্রতিবাদ ধ্বনিত হয়েছিল, তা মূলত বুদ্ধিজীবী ও শিক্ষিত মহলে সীমাবদ্ধ ছিল—দেশের ব্যাপক জনসমাজের মধ্যে তা প্রবেশ লাভ করেনি।

কিন্তু রাষ্ট্রভাষার প্রশ্নটি ইতিমধ্যে বৃহত্তর জনমানসে স্থান লাভ করছিল। রাষ্ট্রভাষার প্রশ্ন যতই জটিল হয়ে উঠতে লাগল, জনসাধারণ ততই উপলব্ধি করতে পারল যে, বাংলা ভাষার বিরুদ্ধে সত্যিই এক ষড়যন্ত্রের আয়োজন চলছে। সুতরাং ভাষা সম্পর্কে তার সতর্কতা ও একে রক্ষা করার সংকল্প তার ক্রমশই দৃঢ়তর হতে থাকল।

একুশে ফেব্রুয়ারিতে তার চরম প্রকাশ ঘটেছে। শহীদদের আত্মদানের ফলে ভাষা সংস্কৃতি সম্পর্কে আমাদের বেদনাবোধ ব্যাপকতর হয়ে উঠল। পূর্ব বাংলার সংস্কৃতিক্ষেত্রে এটাই একুশে ফেব্রুয়ারির অবদান। ভাষা ও সংস্কৃতির প্রতি এই অতি গভীর ভালবাসার সূত্রে এ দেশের আপামর জনসাধারণ বারংবার একত্রিত হয়ে সেটাই প্রমাণ করেছে।

জনসাধারণের এই একতাবদ্ধ শক্তির কাছে প্রতিক্রিয়ার শক্তির হার হয়েছে। ভাষা আন্দোলনের অব্যবহিত পরই আরবি হরফে বাংলা লেখার প্রচেষ্টা পরিত্যক্ত হয় এবং এরপর সরকারী পর্যায়ে এ কথা বলা সম্ভব হয়নি যে, বাংলা ভাষার দাবী অস্বীকার্য। (খুব সম্ভব, নাজিমুদ্দিনের মূলনীতি রিপোর্টে রাষ্ট্রভাষার প্রশ্নটি সতর্কভাবে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছিল।) তারপর মাত্র কয়েকদিন আগে গণপরিষদে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বাংলার দাবি স্বীকৃত হওয়ায় জনসাধারণের প্রবল ইচ্ছাশক্তির বিজয়লাভ ঘটেছে।

একুশে ফেব্রুয়ারির আবেগ ও ঐক্য থেকে পরবর্তীকালে জনসাধারণের রাজনৈতিক চেতনা এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের উদ্ভব ও বিকাশ যেমন সম্ভবপর হয়েছিল, সংস্কৃতি ক্ষেত্রেও অনুরূপ আলোড়ন ঘটেছে। একুশে ফেব্রুয়ারির আত্মত্যাগ সারা দেশে এক ব্যাপক সাংস্কৃতিক চেতনার সঞ্চার করেছে। এর সহজ প্রমাণ পাওয়া যাবে ভাষা আন্দোলনের পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সাংস্কৃতিক সম্মেলন প্রভৃতির পারস্পরিক সাফল্যের তুলনা করলে। শুধু তাই নয়। একটু লক্ষ্য করলেই বোঝা যাবে যে, এর পর থেকেই সাংস্কৃতিক উদ্যমসমূহের সঙ্গে জনসাধারণের সম্পর্ক নিবিড় ও গভীর হয়েছে। বাংলা ভাষার উন্নতির জন্যে সক্রিয় ব্যবস্থাবলম্বনের প্রয়োজনীয়তাবোধও যে জনমানসকে উদ্বোধিত করেছিল, তার প্রমাণ পাই গত নির্বাচন–উপলক্ষে যুক্তফ্রন্টের প্রতিশ্রুতিতে। বাংলা একাডেমি প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে জনসাধারণ যে উদ্যোগ ও আগ্রহ প্রকাশ করেছে তার মূল্য কম নয়।

ঢাকা িবশ্ববিদ্যালয়ের সামনে উত্তাল ছাত্র–জনতা, ২১ ফেব্রুয়ারি ১৯৫২

ভাষা ও সংস্কৃতির প্রতি দেশের বৃহত্তর জনপ্রবাহের এই উন্মুখ চেতনা ও সমর্থন দেশের সংস্কৃতিবিদদেরকে প্রেরণা দিয়েছে সৃষ্টিতে, আর সাধারণ মানুষকেও দিয়েছে সংস্কৃতি সাধনার এষণা। একুশে ফেব্রুয়ারির পর তাই বিপুল উৎসাহ ও উদ্দীপনা নিয়ে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সমাবেশ ঘটেছে, উদ্ভব হয়েছে ছোট বড় নানা সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের এবং আবির্ভাব ঘটেছে নানা পত্র–পত্রিকার। বাংলা ভাষার প্রতি আগ্রহ এবং এর পঠন পাঠন ও চর্চা ক্রমশই দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে। আমার মনে হয়, সংস্কৃতিকর্মীরা তাঁদের পেছনে জনসাধারণের সমর্থন ও অস্তিত্ব সম্পর্কে সচেতন হয়েছে। আর বোধ হয় এইজন্যেই পূর্ব বাংলার সংস্কৃতির প্রাণবন্ত ধারা আজ মানুষের কল্যাণকামী, দেশের হিতাকাঙ্ক্ষী এবং জনসাধারণের শক্তিতে বিশ্বাসী।

কোথাও কোথাও এ প্রশ্ন উঠেছে যে, বাংলা ভাষার প্রতি পূর্ব বাংলার জনসাধারণের এই আকর্ষণ দেশের পক্ষে কল্যাণকর কি না। মাত্র একশো বছর আগেও পরাধীনতার বন্ধন ও কুসংস্কারের জালে আবদ্ধ অভিজাত মুসলমান সমাজ এবং তাঁদের সহচর মোল্লা–মৌলভীরা পর্যন্ত ফতোয়া দিয়েছিলেন যে, বাংলা বাঙালি মুসলমানের মাতৃভাষা নয়। তারো আগে দেখেছি বিদেশী শাসকদের প্রতি হীনমন্যতাবশত বাঙালি হিন্দু সমাজও বাংলা ছেড়ে ইংরেজির সাধনায় আত্মনিয়োগ করেছিলেন। কিন্তু এই হীনমন্যতাবোধ এবং এই মিথ্যে সংস্কারের জাল কাটতে পেরেছি বলেই আমরা নিজেদেরকে স্বাধীন হবার যোগ্য মনে করেছিলাম। স্বাধীনতার পর ইতিহাসের চাকা কি আবার উল্টো ঘুরবে? বাংলা ভাষার ঐশ্বর্য আছে বলেই আমরা গর্বিত আর আমাদের হৃদয়ে ভালোবাসা আছে বলে আমরা একে ভালোবাসি।

পশ্চিম বাংলার সঙ্গে আমাদের ভাষাগত সাদৃশ্য সত্ত্বেও এ ভালবাসার জন্যে আমাদের লজ্জিত হবার কিছু নেই। এখানে ভাষাবিদদের মত উদ্ধৃত করলে কথাটা স্পষ্ট হবে। তাঁরা বলেন: ‘ভাষায় একটি নির্দিষ্ট ধ্বনিসমষ্টি ব্যবহারকারী জনসমষ্টিকে বলে ভাষাসম্প্রদায় (Speech-community)। কোনো বিশেষ ভাষাসম্প্রদায়ে ধর্ম, আচার–ব্যবহার, সমাজ, রাষ্ট্র এবং জাতি হিসাবে ঐক্য নাও থাকিতে পারে।’ এইজন্যেই, আমেরিকা যখন ইংরেজের হাতছাড়া হয়ে গেল, তখন রাগ করে তারা ফরাসি বলা ধরেনি। মূলত গোটা বাংলাদেশকে, তার সকল সম্পদসহ আমরা পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তা সফল হয়নি বলে আমরা যে সম্পদের অধিকারী, তাও ত্যাগ করে ভারতকে দিয়ে দিতে হবে, এ কথা যাঁরা বলেন, তাঁদেরকে দেশহিতৈষী ভাবতে আমার স্বাভাবিক সংকোচ আছে।

এঁরাই আবার প্রচার করেছেন যে, আমাদের ভাষা আন্দোলনের সমগ্র মনোভাবটি পাকিস্তানের অন্যান্য ভাষার প্রতি বিদ্বেষমূলক। এ কথা একেবারেই মিথ্যে। একুশে ফেব্রুয়ারি অন্য কোনো ভাষার সঙ্গে আমাদেরকে বিরোধ করতে শেখায়নি, জনসাধারণের ভাষার মর্যাদা, অধিকার ও উন্নতির প্রয়োজনীয়তা শিক্ষা দিয়েছে। এ দিনের চৈতন্য তাই সমগ্র দেশকে ডেকে বলেছে: মাতৃভাষাকে ভালোবাসুন, তার উন্নতির চেষ্টা করুন, তার অধিকার সম্পর্কে সচেতন হোন—ভাষাকে মৃত্যু থেকে রক্ষা করুন।

কোনো ভাষার মৃত্যু হয় কখন? যখন সে ভাষার সঙ্গে বৃহৎ জনপ্রবাহের বিচ্ছিন্নতা ঘটে। সেদিক থেকে আজ এ কথা মনে করে আশ্বস্ত হবার কারণ আছে যে, জনসাধারণ যে গভীর আবেগ ও ভালবাসার সঙ্গে বাংলা ভাষাকে গ্রহণ করেছে, তাতে এ ভাষার মৃত্যু নেই। আজ বারবার শুধু এ কথাই মনে হচ্ছে যে মৃত্যু নেই আমার বাংলা ভাষার, মৃত্যু নেই এর বড় বড় সাধকের আর তেমনি মৃত্যু নেই তাঁদের, যাঁরা আপন দেহকে বর্ম করে এ ভাষার প্রতি আঘাত নিবারণ করে শহীদ হয়েছেন।

এই ভাষায় কথা বলে আমরা ধন্য, এই জনসাধারণের মধ্যে জন্মগ্রহণ করে ধন্য, এই ভাষার জন্যে একত্রিতভাবে শপথ নিয়ে ধন্য, আর ধন্য আজ সেই মহান শহীদদের উদ্দেশ্যে নিজেদের শ্রদ্ধার অর্ঘ্য নিবেদন করতে পারছি বলে।

সূত্র: একুশের সংকলন, সম্পাদক: ডি এ রশীদ ও মহিউদ্দিন আহমদ, ১৯৫৬

সংগ্রহ ও ভূমিকা: সাজ্‌জাদ আরেফিন 

১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারির রক্তাক্ত ঘটনার মধ্য দিয়ে সৃষ্টি হয় এক কালজয়ী ইতিহাসের। বাঙালির যা কিছু অর্জন, তার পুরোটারই পশ্চাৎভূমি হিসেবে রয়েছে অমর একুশে অর্থাৎ ভাষা আন্দোলনের অনন্য ভূমিকা। একুশে আমাদের ভাষাকেন্দ্রিক জাতীয়তাবাদী চেতনাকে শাণিত করেছে, সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছে।

এখানে সংকলিত লেখাগুলোর মধ্যে শওকত ওসমানের ‘মৌন নয়’ একুশের প্রথম গল্প। হাসান হাফিজুর রহমানের সম্পাদিত একুশের প্রথম পূর্ণাঙ্গ সংকলন একুশে ফেব্রুয়ারীতে মুদ্রিত হয়।

আনিসুজ্জামানের প্রবন্ধটি প্রথমে ডি এ রশীদ ও মহিউদ্দীন আহমেদ সম্পাদিত একুশের সংকলন (১৯৫৬)-এ প্রথমে প্রকাশ পেয়েছিল। পরে হাসান হাফিজুর রহমানের একুশে ফেব্রুয়ারীতেও অন্তর্ভুক্ত হয়।

চারটি কবিতার মধ্যে সিকান্‌দার আবু জাফরের ‘একুশে ফেব্রুয়ারি’ ১৯৬৩ সালে লেখা। হাসান হাফিজুর রহমান একুশে ফেব্রুয়ারীর দ্বিতীয় সংস্করণে (১৯৬৫) এটি অন্তর্ভুক্ত করেন। ১৯৫২ সালে লেখা আবদুল গনি হাজারীর কবিতাটিও একই সংকলনে (১৯৫৩) মুদ্রিত । মুর্তজা বশীরের কবিতাটি ১৯৫২ সালেই সহকর্মী (প্রমথ নন্দী) সম্পাদিত কলকাতা থেকে প্রকাশিত একুশের প্রথম সংকলন ওরা প্রাণ দিল এবং পরিচয় পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। পরে আজিজুল হাকিম ও আবদুর রশীদ ওয়াসেকপুরী সম্পাদিত একুশের কবিতাতেও (১৯৫৪) অন্তর্ভুক্ত হয়। আল মাহমুদের কবিতাটিও এই সংকলনেই প্রথম প্রকাশিত হয়।

হেমাঙ্গ বিশ্বাসের গানটি ১৯৫২ সালে লেখা। প্রকাশিত হয় কলকাতা থেকে প্রকাশিত ওরা প্রাণ দিলপরিচয় (১৯৫২) পত্রিকায়।

নির্বাচিত রচনাগুলোর বিষয় একটাই রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন—অমর একুশের রক্তাক্ত ঘটনার স্মৃতি। এসব রচনার মধ্য দিয়ে একটি বিক্ষুব্ধ জাতির আশা-আকাঙ্ক্ষা ও স্বপ্ন-কল্পনারই বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে।