একাত্তরের অদেখা কার্টুন

কলকাতার অধুনালুপ্ত দৈনিক পত্রিকা ‘যুগান্তর’। ১৯৭১ সালে এর বার্তা সম্পাদক ছিলেন দক্ষিণা রঞ্জন বসু। তাঁর আদি বাড়ি ছিল বাংলাদেশের বিক্রমপুরের বজ্রযোগিনী গ্রামে। তাঁর একান্ত আগ্রহে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছিল পত্রিকাটি। পূর্ব পাকিস্তান থেকে যাওয়া শরণার্থীদের মধ্যে ছিল পত্রিকাটির বিপুল জনপ্রিয়তা। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে হুমায়ুন আজাদ, বরুণ রায়, আবদুল গাফফার চৌধুরীর মতো লেখকেরা নিয়মিত লিখতেন এই পত্রিকায়। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধে বাংলাদেশের পক্ষে জনমত তৈরিতে বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখেছিল ‘যুগান্তর’। এ পত্রিকায় যুদ্ধের নয় মাস প্রায় প্রতিদিন মুক্তিযুদ্ধের ওপর চমৎকার কার্টুন ছাপা হতো। এই কার্টুনগুলো নিছক হাস্যরসের বিষয় ছিল না। ছিল বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামের প্রতি প্রকাশ্য অবস্থান। দীর্ঘ ৪৮ বছর পর এ কার্টুনগুলো বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ঐতিহাসিক দলিল হিসেবে স্বীকৃত। কার্টুনগুলো সংগ্রহ করেছেন শিক্ষক ও গল্পকার জয়দীপ দে। ‘যুগান্তর’ পত্রিকায় প্রকাশিত সেসব মহামূল্যবান কার্টুন থেকে উল্লেখযোগ্য কিছু কার্টুন ‘প্রথম আলো’য় প্রকাশ করা হলো।
১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার প্রথম বৈঠকের সংবাদ লিড নিউজ করে যুগান্তর। তার ওপর একটি চমৎকার কার্টুন প্রকাশিত হয়। এই কার্টুনে বিশাল একটা মানুষ হিসেবে দেখানো হয়েছে বঙ্গবন্ধুকে। আর ইয়াহিয়া সামান্য একটা কামানের গোলা। তিনি কামান থেকে বের হয়ে বিশাল শেখ মুজিবুর রহমানকে দেখে হতবাক হয়ে গেছেন।
১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার প্রথম বৈঠকের সংবাদ লিড নিউজ করে যুগান্তর। তার ওপর একটি চমৎকার কার্টুন প্রকাশিত হয়। এই কার্টুনে বিশাল একটা মানুষ হিসেবে দেখানো হয়েছে বঙ্গবন্ধুকে। আর ইয়াহিয়া সামান্য একটা কামানের গোলা। তিনি কামান থেকে বের হয়ে বিশাল শেখ মুজিবুর রহমানকে দেখে হতবাক হয়ে গেছেন।
২৮ মার্চ দৈনিক যুগান্তর এর ৫ম পৃষ্ঠায় দারুণ একটি কার্টুন প্রকাশিত হয়। তার শিরোনাম ছিল ‘ইয়াহিয়ার বেতার ভাষণ’। তাতে দেখা যায়, ইয়াহিয়ার কামানের সামনে একটি মাইক্রোফোন। ইঙ্গিতটা স্পষ্ট। ইয়াহিয়া তাঁর বেতার ভাষণে বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণের উত্তর দিয়েছেন কামানের ভাষায়।
৯ এপ্রিলের কার্টুনে দেখা, যাচ্ছে ডাইনোসররূপী ইয়াহিয়ার ঘাড়ে উঠে লাঠি দিয়ে আঘাত করছে মুক্তিফৌজ।
১২ এপ্রিল প্রকাশিত কার্টুনে দেখা যাচ্ছে বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামকে কার্টুনিস্ট একটি দীপশিখার সঙ্গে তুলনা করেছেন। সেই শিখার আলোয় আকৃষ্ট হয়ে পতঙ্গরূপী পাকিস্তানি সৈন্যরা অকাতরে প্রাণ দিচ্ছে।
কার্টুনের ক্যাপশনে লেখা, ‘অস্ত্র চাই না— কিছু হজমি দিয়ে সাহায্য করুন।’ শকুনরূপী ইয়াহিয়া বাঙালির মাংস খেতে খেতে আর নড়তে পারছে না।
পাকিস্তান নামে কুকুরের হাত থেকে বাংলাদেশ নামের শিশুকে বাঁচাতে ব্যস্ত ভারত। আর বিশ্বমোড়লদের এদিকে ভ্রুক্ষেপ নেই। তারা খোশগল্পে ব্যস্ত। ‘ব্যস্ত সাহেবের মস্ত কুকুর’ শিরোনামের এ কার্টুনটি প্রকাশিত হয় ২৯ মে ১৯৭১।
১০ জুন ভারতের বিদেশমন্ত্রী শরণ সিং মস্কো ঘুরে আসার পর এই কার্টুন ছাপা হয়। শরণ সিং মস্কো থেকে আশ্বাস পান বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভারতের পাশে থাকবে। ব্যাপারটা ভারতের জন্য ছিল প্রতিষেধক নেওয়ার মতো।
১৯ জুন প্রকাশিত এ কার্টুনে দেখা যাচ্ছে বিশ্ব নেতৃবৃন্দের পেছনে শরণ সিং ছুটছেন বাংলাদেশের শরণার্থী সমাধানের জন্য। কিন্তু তাঁদের তিনি নাগাল পাচ্ছেন না।
চীন ও আমেরিকা পাকিস্তানকে অস্ত্র দিয়ে সাহায্য করাকে উপজীব্য করে ৩ জুলাই দৈনিক যুগান্তরে ছাপা হয়।
১৪ জুলাই প্রকাশিত এই কার্টুনের বিষয় ছিল ইয়াহিয়া কর্তৃক পূর্ব পাকিস্তানের সরকারি কর্মচারীদের আনুগত্য দেখার জন্য ৪১টি প্রশ্নের একটি পরীক্ষা নেওয়া হয়।
প্রতি সেকেন্ডে ১ জন করে শরণার্থী প্রবেশ করছে পশ্চিমবঙ্গে। এই সংবাদের ভিত্তিতে ১১ জুলাই এ কার্টুন ছাপা হয়।
মি. বটমিলের নেতৃত্বে চার সদস্যের ব্রিটিশ লেবার পার্টির সাংসদদের একটি প্রতিনিধি দল পাকিস্তানে ইয়াহিয়া খানের সঙ্গে দেখা করে ভারত এসেছিল শরণার্থী পরিস্থিতি দেখার জন্য। তারা যুদ্ধের বীভৎসতা এবং ইয়াহিয়ার গোঁয়ার্তুমি স্বীকার করেন। এর প্রেক্ষিতে ১৩ জুলাই এই কার্টুনটি ছাপা হয়।
পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট বারবার ভারতকে আলোচনার প্রস্তাব দিলেও ভারত সরকার বলছিল, আলোচনা যদি করতে হয় তাহলে শেখ মুজিবের সঙ্গে করুন। এটা নিয়েই ২২ জুলাই এ কার্টুনটি ছাপা হয়।
মুজিবনগর সরকার গঠন করা হলে পাকিস্তানের কলকাতার ডেপুটি হাইকমিশনের কর্মচারীরা মুজিবনগর সরকারের প্রতি আনুগত্য দেখায়। তখন এর নাম হয় বাংলা মিশন। পাকিস্তান সরকার খুব চেষ্টা করেছিল এদের পাকিস্তানে ফিরিয়ে আনতে। ২১ জুলাই এ বিষয় নিয়ে এই কার্টুনটি ছাপা হয়।
ভূপাতিত ইয়াহিয়ার নামবারও জো নেই। নিচে ভারতীয় বাহিনীর বেয়নেট। ১ ডিসেম্বর প্রকাশিত কার্টুন।
৩ ডিসেম্বরে প্রকাশিত কার্টুন। ইন্দিরা গান্ধীর দৃঢ়তাই এই কার্টুনের উপজীব্য।