একমাত্র সরকারি পাঠাগারে তালা ঝুলছে পাঁচ বছর

বন্ধ হয়ে পড়ে রয়েছে ধরমপাশা উপজেলার একমাত্র সরকারি গণপাঠাগারটি। গত শুক্রবার দুপুরে। ছবি: প্রথম আলো-PATAGER-26.07
বন্ধ হয়ে পড়ে রয়েছে ধরমপাশা উপজেলার একমাত্র সরকারি গণপাঠাগারটি। গত শুক্রবার দুপুরে।  ছবি: প্রথম আলো-PATAGER-26.07

বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, চুরি। বারবার এই তিন সমস্যার কবলে পড়েছে সুনামগঞ্জের ধরমপাশার একমাত্র সরকারি গণপাঠাগারটি। এখন প্রয়োজনীয় বই, আসবাব ও লোকবলের অভাব তীব্র। এ অবস্থায় গণপাঠাগারটিতে পাঁচ বছর ধরে তালা ঝুলছে। শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষজন চাহিদামাফিক বই পড়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

উপজেলা প্রশাসন, এলাকাবাসী ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ধরমপাশা উপজেলা পরিষদের পুকুরের পশ্চিম পাশের সড়ক লাগোয়া জায়গায় ১৯৯৩ সালের ২৭ এপ্রিল পাঠাগারটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। এলাকাবাসীর সহায়তায় এটি প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখেন তৎকালীন থানা নির্বাহী কর্মকর্তা হাফিজুর রহমান ভূঁইয়া। এখানে শত শত মূল্যবান বই ছিল। জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকাও রাখা হতো। প্রতিদিনই এখানে নানা শ্রেণি-পেশার পাঠকদের বইপাঠের আসর বসত। ২০০৪ সালের বন্যায় পাঠাগারটির ভেতরে পানি ঢুকে বই ও আসবাব ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফলে পাঠাগারটির কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। ২০০৭ সালে প্রয়োজনীয় বই সংগ্রহ ও আসবাব সংস্কার করে পুনরায় এটি চালু করে উপজেলা প্রশাসন। ২০০৮ সালে রাতের আঁধারে এই পাঠাগার থেকে আট শতাধিক মূল্যবান বই ও কিছু আসবাব চুরি হয়। ফলে আবার এটি বন্ধ হয়ে যায়। ২০১৩ সালের ২৩ ডিসেম্বর পাঠাগারটি চালুর জন্য এর চত্বরে ধরমপাশা সাহিত্য পরিষদ নামের একটি সংগঠন আমরণ অনশন শুরু করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে উপজেলা প্রশাসন পাঠাগারটি চালু করতে বাধ্য হয়। কিন্তু ২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল ঘূর্ণিঝড়ে পাঠাগার ভবনের টিনের ছাউনির একাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ওই সময় পাঁচ শতাধিক মূল্যবান বই বৃষ্টিতে ভিজে নষ্ট হয়। এরপর আবারও বন্ধ হয়ে যায় এই পাঠাগার।

ধরমপাশা সদর বাজারের ব্যবসায়ী আলী নূর বলেন, ‘পাঠাগারটি যখন চালু ছিল, তখন সেখানে মাঝেমধ্যে গিয়ে বই ও পত্রিকা পড়তাম। এটি চালু করার ব্যাপারে এখন কারও কোনো মাথাব্যথা নেই। তা ছাড়া পাঠাগারটি থেকে চুরি হওয়া বই ও আসবাব এখনো উদ্ধার না হওয়ার বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখ ও হতাশাজনক।’

শিল্প-সাহিত্য অঙ্গনের মানুষ, কলেজছাত্রসহ এলাকার বেশ কয়েকজনের সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তাঁরা সবাই বলছেন, বিভিন্ন সময়ে এই পাঠাগারে উন্নয়নের জন্য সরকারিভাবে অর্থ বরাদ্দ এসেছে। কিন্তু সেই টাকা দিয়ে কাজের কাজ কিছুই হয়নি। বরাদ্দের লাখ লাখ টাকা ঠিকই খরচ হয়ে গেছে। কিন্তু পাঠাগারটির দৃশ্যমান কোনো উন্নয়ন হয়নি।

ধরমপাশা সাহিত্য পরিষদের সভাপতি কবি আনিসুল হক বলেন, পাঠাগারটি চালু করা নিয়ে তিনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) সঙ্গে কথা বলেছেন। তিনি দ্রুততম সময়ের মধ্যে যাবতীয় সমস্যা সমাধান করে পাঠাগারটি চালু করার ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।

ইউএনও মোহাম্মদ ওবায়দুর রহমান বলেন, জ্ঞানার্জনের এই বাতিঘর যাতে এভাবে দীর্ঘদিন বন্ধ না থাকে, সে জন্য এলাকার নানা শ্রেণি-পেশার মানুষজনকে নিয়ে সভা করা হবে। দ্রুত এই পাঠাগারের সমস্যা সমাধান করে এটি চালুর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।