রাঙামাটির জুরাছড়ি উপজেলায় কোনো কলেজ নেই। এসএসসি পাস করে আর কলেজে যেতে পারেনি এমন তরুণের সংখ্যা দিন দিনই বাড়ছে এই উপজেলায়। পরিবারের সাধ্য নেই শহরে রেখে সন্তানকে পড়ানোর। তাই এবার উপজেলার কয়েকটি গ্রামের বাসিন্দারা উদ্যোগ নিয়েছেন স্বেচ্ছাশ্রমের বিনিময়ে কলেজ নির্মাণের। কলেজটি নির্মিত হচ্ছে উপজেলার বনযোগীছড়া গ্রামে। এ জন্য এলাকার হেডম্যান ৮০ শতক জমি দান করেছেন। ওই জমির জঙ্গল, আগাছা পরিষ্কার করে গত শনিবার বাঁশের বেড়া ও টিনের কলেজ ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করেছেন গ্রামবাসী।
জানা গেছে, নির্মাণাধীন ওই কলেজটির নাম রাখা হয়েছে শলক কলেজ। উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানকে এই কলেজ পরিচালনা কমিটির সভাপতি করা হয়েছে। উদ্যোগের সঙ্গে জড়িত হয়েছেন এলাকার শিক্ষানুরাগী সর্বস্তরের লোকজন।
গত শনিবার দুপুরে বনযোগীছড়ায় গিয়ে দেখা গেছে, শলক কলেজ নির্মাণের জন্য স্বেচ্ছাশ্রমে মাটি কাটছেন গ্রামের লোকজন। এই কাজে অংশ নিতে এসেছেন বিভিন্ন গ্রামের প্রায় তিন শতাধিক মানুষ। উপস্থিত লোকজন দলে ভাগ হয়ে গাছ কাটছেন। এরপর মাটি কেটে জমি সমান করেছেন। সেখানেই নতুন ভবনের খুঁটি তৈরির কাজও শুরু হয়েছে।
জানা গেছে, জুরাছড়িতে ৬১টি সরকারি ও ৪টি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে। একটি সরকারি উচ্চবিদ্যালয়সহ তিনটি উচ্চমাধ্যমিক ও তিনটি নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে। কিন্তু এ উপজেলায় একটিও কলেজ নেই। ফলে শিক্ষার্থীদের মাধ্যমিকের পর রাঙামাটি শহরে গিয়ে পড়াশোনা করতে হয়। আর্থিক সামর্থ্য না থাকায় অনেক শিক্ষার্থীর পক্ষে তা সম্ভব হয় না।
বনযোগীছড়া গ্রামের গঙ্গা দেবী চাকমা বলেন, ‘আমার স্বপ্ন ছিল বড় মেয়ে চম্পা চাকমাকে নিয়ে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করে চিকিৎসক বানাব। কিন্তু ২০০৬ সালে এসএসসি পাস করার পর আর্থিক অনটনে আর পড়ালেখা করানো সম্ভব হয়নি। শলক কলেজ চালু হলে আমার মতো কারওর স্বপ্ন ভঙ্গ হবে না।’
অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক তুষার কান্তি তালুকদার বলেন, দারিদ্র্যের কারণে শহরে গিয়ে পড়াশোনা করতে পারে না যারা, এই কলেজ তাদের জন্য আশার আলো হবে।
মৌজাপ্রধান (হেডম্যান) করুণা ময় চাকমা বলেন, এলাকার ছেলেমেয়েদের উচ্চশিক্ষার কথা ভেবে তিনি ৮০ শতক জমি কলেজের নামে দান করেছেন।
বনযোগীছড়া ইউপি চেয়ারম্যান সন্তোষ বিকাশ চাকমা বলেন, প্রথম পর্যায়ে একাডেমি ভবনের জন্য ১০০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ২০ ফুট প্রস্থের বেড়া ও টিনের ঘর নির্মাণ করা হবে। এতে আটটি কক্ষ নির্মাণ করা হবে।
শলক কলেজ পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সুরেশ কুমার চাকমা বলেন, ‘অবকাঠামো নির্মাণের পাশাপাশি কলেজের একাডেমিক স্বীকৃতি পাওয়ার জন্য আমার পক্ষ থেকে যা কিছু করা প্রয়োজন তা করব। কলেজটি চালু হলে এলাকার শত শত দরিদ্র মেধাবী শিক্ষার্থীর উচ্চশিক্ষার দুয়ার খুলবে।’
জুরাছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মাহফুজুর রহমান বলেন, জুরাছড়িতে একটি কলেজ খুবই জরুরি। অনেক অভিভাবকের রাঙামাটি শহরে রেখে সন্তানদের লেখাপড়া শেখানোর সামর্থ্য নেই। প্রশাসন থেকে জুরাছড়িতে সরকারি কলেজ প্রতিষ্ঠা করার প্রস্তাব দেওয়া রয়েছে। জুরাছড়িবাসী কলেজ নির্মাণের যে উদ্যোগ নিয়েছে তা প্রশংসার যোগ্য বলে মন্তব্য করেন তিনি।