এই ঈদে কোরবানির হাট

কৃষক ও খামারিরা এই ঈদকে উদ্দেশ্য করে হাটে নিয়ে আসছেন গরু। যে গরু বিক্রি করে লাভের আশা করেছিলেন, এখন তা অনেকেরই হতাশায় রূপান্তর হয়েছে। কেননা, তাঁরা যথাযথ দাম পাচ্ছেন না। এতে কৃষক ও খামারিরা হতাশ এবং ক্ষতিগ্রস্ত। হাটে আছে প্রচুর গরু, অথচ ক্রেতা নেই আশানুরূপ। ফলে তাঁরা আশানুরূপ দামে বিক্রি করতে পারছেন না গবাদিপশু।

এর পেছনে বেশ কিছু কারণ রয়েছে। প্রথমত, করোনা। এই মহামারিতে মানুষ কেবল ঘরবন্দীই নয়, বরং মানুষের উপার্জনেও আঘাত হেনেছে। ফলে মানুষের হাতে নেই যথেষ্ট টাকা। আগে অনেকেই একা কোরবানি দিতে পারতেন, এখন তাঁরা একাধিকজনে মিলে কোরবানি দিচ্ছেন। এখানে স্পষ্টত, অর্থনীতি মূল পার্থক্য সৃষ্টি করেছে। দ্বিতীয়ত, বন্যা। বন্যার ফলে অনেকই চরম দুর্দশার মধ্যে দিনাতিপাত করছেন। ফলে তাঁদের জন্য কোরবানি দেওয়াটা অসম্ভবেরও বেশি কিছু। আবার অনেকই বন্যার পানির কারণে বাধ্য হয়ে তাঁদের গবাদিপশু বিক্রি করছেন। ফলে একদিকে মানুষের সামর্থ্যের মধ্যে যেমন ঘাটতি এসেছে, তেমনি বাজারে বাড়ছে গরুর সংখ্যা। ফলে কৃষক ও খামারিরা আশানুরূপ দামে বিক্রি করতে পারছেন না। তবে ক্ষতির মুখে বেশি পড়ছে বেশি ওজনের গরুগুলো। ক্রেতাদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য অনুসারে, মাঝারি আকারের গরুগুলোর চাহিদা তুলনামূলক অনেক বেশি। তৃতীয়ত, স্বাস্থ্যঝুঁকির কথা ভেবে অনেকেই বাজার থেকে গরু কেনা নিয়ে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত। ফলে বাজারের শুরুর দিনগুলোয় ক্রেতার সংখ্যা খুব কম ছিল। তবে ব্যবসায়ীদের আশা ছিল, শেষ দিকে হয়তো জমে উঠবে বাজার। শেষ দিকে ক্রেতার সংখ্যা বাড়লেও তা আশানুরূপ নয় কোনোভাবেই। এবার ব্যবসায়ীদের আশঙ্কা ছিল, মহামারির প্রভাবে গত বছরের তুলনায় অন্তত ২০ ভাগ কম পশু বিক্রি হবে এবারের ঈদে। বাস্তবে ঘটছেও তা–ই।

বাংলাদেশের প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলেছেন, গত বছর কোরবানির জন্য দেশে ১ কোটি ১৭ লাখ পশু ছিল। এর মধ্যে গরু ৪৫ লাখ এবং ছাগল ও ভেড়া ৭১ লাখ। এ বছরও হিসাব অনেকটা কাছাকাছি। বরং বন্যার কারণে সংখ্যাটা বেশিও হতে পারে। অথচ এটা জোর দিয়েই বলা যায়, ক্রেতার সংখ্যা ব্যবসায়ীদের হতাশার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে অনেক কৃষক, খামারিরা তাঁদের গরু ক্ষতি দিয়ে হলেও বিক্রি করে দিচ্ছে। তবে এবার অনলাইনে গরু বিক্রির তোড়জোড় শোনা গেছে। যেহেতু এভাবে গরু বেচাকেনার অভ্যাস কিংবা বিশ্বস্ততা গড়ে ওঠেনি, ফলে এটিও তেমন সুবিধাজনক হয়ে ওঠেনি। কোথাও কোথাও আবার ভালো বিক্রির কথা শোনা যায়। তবে সেটা অপ্রতুল।

অথচ, কয়েক বছর ধরে এই গরু পালন করে ব্যবসায়ীরা বেশ লাভবান ছিলেন। একদিকে ভারত থেকে গরু আসা যেমন বন্ধ ছিল, তেমনি ক্রেতার আগ্রহও ছিল লক্ষণীয়। তবে এই ঈদে তাঁদের হিসাব–নিকাশ উল্টে গেছে। বিগত দিনগুলোয় এই গরু পালনকে কেন্দ্র করে এ দেশে অসংখ্য উদ্যোক্তা তৈরি হয়েছিলেন। এর মধ্যে নিম্নমুখী এই বাজার নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য এক বড় ধাক্কা।

*শিক্ষার্থী, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়