করোনাভাইরাসের কারণে এইচএসসি পরীক্ষা শুরু করা এবং এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে। ১ এপ্রিল এইচএসসি পরীক্ষা শুরুর কথা ছিল। এখন এই পরীক্ষা কবে শুরু হবে, তা সুনির্দিষ্ট হয়নি। আগামী মাসের শুরুতে এসএসসির ফল প্রকাশও হবে না।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের উচ্চপর্যায়ের একাধিক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেছেন, গতকাল মঙ্গলবার মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেনের সঙ্গে শিক্ষা বোর্ডগুলোর চেয়ারম্যানরা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এই দুই পরীক্ষা নিয়ে আলোচনা করেছেন। তাতে বলা হয়েছে, সীমিত আকারে যানবাহন চলা শুরু হলে তার ১৫ দিন পর এসএসসির ফল প্রকাশ করা হবে। সেটি মে মাসে যদি সম্ভব হয়, তা করা হবে। তবে সীমিত আকারে যান চলাচলের বিষয়ে সরকার কবে সিদ্ধান্ত নেবে, তা এখনো ঠিক হয়নি। আর এইচএসসি পরীক্ষা আসন্ন ঈদুল ফিতরের আগে শুরু হচ্ছে না।
এবারের এইচএসসিতে মোট পরীক্ষার্থী ১৩ লাখের বেশি। শুরুর আগমুহূর্তে পরীক্ষা স্থগিত হওয়ায় দুশ্চিন্তায় পড়েছেন এসব পরীক্ষার্থী। আর গত ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিল প্রায় সাড়ে ২০ লাখ।
ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান মু. জিয়াউল হক গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, এসএসসির উত্তরপত্র মূল্যায়নের কাজ প্রায় শেষ হয়েছে। কিন্তু এখনো প্রায় ৩০ শতাংশ নম্বরপত্র শিক্ষা বোর্ডে এসে পৌঁছায়নি। আলোচনা হয়েছে সীমিত আকারে যান চলাচল শুরু হলে তার ১৫ দিন পর এই পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হবে। আর ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত দেখে ঈদের পর এইচএসসি পরীক্ষা শুরুর জন্য নতুন সম্ভাব্য রুটিন দেওয়া হবে।
শিক্ষক ও শিক্ষা প্রশাসনের কর্মকর্তারা বলছেন, এই দুই পরীক্ষার কারণে পুরো শিক্ষাপঞ্জিতেই প্রভাব পড়বে। কারণ, এসএসসির পরপর কলেজে ভর্তি পরীক্ষা থাকে। আবার এইচএসসির ফল প্রকাশের পর উচ্চশিক্ষায় ভর্তির কার্যক্রম শুরু হয়। এখন সবই পিছিয়ে যাবে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও বন্ধ হয়ে গেছে। সব মিলিয়ে পুরো শিক্ষাব্যবস্থায় সেশনজট দেখা দেবে।
শুধু এই দুই পাবলিক পরীক্ষাই নয়, দেশের পুরো শিক্ষা কার্যক্রমই অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে। ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ হওয়ায় শিক্ষাপঞ্জি অনুযায়ী কোনো কার্যক্রমই করা যাচ্ছে না। এর ফলে প্রাথমিক থেকে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত প্রায় চার কোটি শিক্ষার্থীর পড়াশোনা মারাত্মকভাবে ক্ষতির মুখে পড়েছে। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে শিক্ষায় এ বছরের কিছু ছুটি (যেমন ঈদুল আজহা ও দুর্গাপূজা ইত্যাদি) কমানোর পরিকল্পনা করা হয়েছে।
এদিকে এ রকম পরিস্থিতির মধ্যেও কোনো কোনো বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান টিউশন ফি দেওয়ার জন্য অভিভাবকদের মুঠোফোনে খুদে বার্তা পাঠিয়েছে। রাজধানীর সাউথ পয়েন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজ কর্তৃপক্ষ ৩০ এপ্রিলের মধ্যে টিউশন ফি জরিমানা ছাড়া বিকাশের মাধ্যমে দিতে অভিভাবকদের মুঠোফোনে খুদে বার্তা পাঠিয়েছে। আরও একাধিক প্রতিষ্ঠান টিউশন ফি চেয়ে খুদে বার্তা দিয়েছে।
করোনাভাইরাসের কারণে আনুষ্ঠানিকভাবে গত ১৮ মার্চ থেকে দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করা হলেও কার্যত মার্চের শুরু থেকেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষার্থীর উপস্থিতি কমে যায়। এরপর ২৬ মার্চে সরকারি ছুটি শুরু হওয়ার পর থেকে স্বাভাবিকভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও ছুটি হয়ে যায়। সরকারি ছুটির মেয়াদ এখন পর্যন্ত ২৫ এপ্রিল থাকলেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটি ঈদের ছুটি পর্যন্ত হচ্ছে। এ ছাড়া সরকারি ছুটিও আরও কয়েক দিন বাড়তে পারে। তবে পূর্বঘোষিত শিক্ষাপঞ্জি অনুযায়ী, রমজান, ঈদুল ফিতরসহ আরও কয়েকটি ছুটি মিলিয়ে ২৫ এপ্রিল থেকে আগামী ৩০ মে পর্যন্ত স্কুল-কলেজ ছুটি থাকবে। ফলে দীর্ঘদিন ঘরবন্দী জীবন কাটাতে হবে শিক্ষার্থীদের।
বন্ধের মধ্যে সংসদ টিভির মাধ্যমে রেকর্ডিং করা ক্লাস প্রচার করা হচ্ছে। কিন্তু এটি পুরোপুরি কার্যকর হচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। যদিও মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সৈয়দ গোলাম ফারুক বলেছেন, যেসব সমস্যা ছিল, সেগুলো সমাধান করে ক্লাসের সংখ্যা আরও বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ ছাড়া কলেজগুলোকে অনলাইনে ক্লাস শুরুর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ইতিমধ্যে ঢাকা কলেজ, ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজসহ অনেক কলেজ অনলাইনে ক্লাস নেওয়া শুরু করেছে।
ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ ফওজিয়া প্রথম আলোকে বলেন, তাঁদের প্রথম শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত ইতিমধ্যে ১৬০টি ক্লাস এবং কলেজে ১০-১২টি ক্লাস অনলাইনে দেওয়া হয়েছে। সেখান থেকে ছাত্রীরা তা দেখতে পারছে।