শারদীয় উৎসব

উৎসাহ ও উদ্দীপনায় মহাসপ্তমী উদ্যাপিত

চুয়াডাঙ্গার দর্শনায় হরিজন সম্প্রদায়ের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত মন্দিরে গতকাল ঢাকের তালে নাচছে শিশুরা l ছবি: প্রথম আলো
চুয়াডাঙ্গার দর্শনায় হরিজন সম্প্রদায়ের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত মন্দিরে গতকাল ঢাকের তালে নাচছে শিশুরা l ছবি: প্রথম আলো

বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনায় গতকাল মঙ্গলবার উদ্যাপিত হলো মহাসপ্তমী। এদিন ছিল বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজার দ্বিতীয় দিন। রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে গত সোমবার ষষ্ঠীপূজার মধ্য দিয়ে শারদীয় এ দুর্গোৎসব শুরু হয়।
গতকাল সারা দেশের মণ্ডপে মণ্ডপে আগের দিনের মতোই ঢাকের বাদ্য, শঙ্খ আর উলুধ্বনিতে দেবী দুর্গার মর্ত্যে আগমনের খবর জানান দেওয়া হয়। পূজার মন্ত্রোচ্চারণ, আরতি আর মাইকের আওয়াজে মণ্ডপগুলো ছিল মাতোয়ারা। পালন করা হয় সেবা দান দিবস। পূজার মধ্য দিয়ে করা হয় মানবজাতির কল্যাণ কামনা। ছিল মণ্ডপে মণ্ডপে বিভিন্ন ধর্মের মানুষের ঢল।
আজ বুধবার শারদীয় দুর্গাপূজার মহাষ্টমী। মহানবমী ও বিজয়া দশমী একই সঙ্গে কাল বৃহস্পতিবার পড়ায় পূজা উদ্যাপন পরিষদ পরশু শুক্রবার প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
ঢাকার বাইরে সংশ্লিষ্ট এলাকার প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর:
ভোলায় মহাসপ্তমীতে গতকাল ঢাকের বাদ্য, শঙ্খ আর উলুধ্বনি বেজে ওঠে ৯৫টি পূজামণ্ডপ। পূজার মন্ত্রোচ্চারণ, আরতি আর মাইকের আওয়াজে মণ্ডপগুলো ছিল মাতোয়ারা। কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া কঠোর নিরাপত্তার মধ্যেই চলে পূজা। ভোলা পৌরসভার শক্তিসংঘ, শতদলবিকাশ, মীরালাল সাহার উঠানের পূজামণ্ডপে ভিড় সামলাতে সতর্ক ছিল পুলিশ। সদর উপজেলা পূজা উদ্যাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক জয় চন্দ্র দে বলেন, মণ্ডপে মণ্ডপে স্বেচ্ছাসেবকও নিয়োগ করা হয়েছে।
যশোরে পরম ভক্তি আর আরাধনায় ৬৪০টি মণ্ডপে চলছে শারদীয়া দুর্গোৎসব। মহাসপ্তমীতে গতকাল মণ্ডপগুলোতে পূজা-অর্চনার মাধ্যমে মানবজাতির কল্যাণ কামনা করা হয়েছে। সেই সঙ্গে আর্থিকভাবে অসচ্ছল মানুষের মধ্যে নতুন বস্ত্র বিতরণ করা হয়েছে। শুধু চাঁচড়া বর্মণপাড়ার মণ্ডপেই দুই শতাধিক মানুষকে শাড়ি-কাপড় দেওয়া হয়েছে। এবার যশোরে সবচেয়ে ধুমধামে দুর্গাপূজা হচ্ছে মনিরামপুরের মশিহাটি এলাকায়।
চুয়াডাঙ্গার দর্শনায় আমতলা মণ্ডপে প্রতিমা ঘিরে হরিজন সম্প্রদায়ের নারী-পুরুষ-শিশুরা বাঁধভাঙা আনন্দে মেতে উঠেছেন। জেলায় বিচ্ছিন্নভাবে বসবাসকারী শতাধিক হরিজন পরিবারের এটাই একমাত্র পূজামণ্ডপ। এ বছর জেলার চার উপজেলায় ৯৫টি মণ্ডপে প্রতিমা প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।

শারদীয় দুর্গাপূজার গতকাল ছিল মহাসপ্তমী। এ দিন সকাল থেকেই মন্দিরে মন্দিরে শুরু হয় অর্চনা ও আরতি। রাজশাহী নগরীর বরেন্দ্র গোষ্ঠী মণ্ডপ থেকে তোলা ছবি l প্রথম আলো

বরগুনা: সোমবার রাতে বরগুনা সর্বজনীন আখড়া মন্দিরে প্রদীপ প্রজ্বালন করে দুর্গাপূজার উদ্বোধন করা হয়। প্রদীপ প্রজ্বালন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসক মীর জহুরুল ইসলাম, পুলিশ সুপার বিজয় বসাক, বরগুনা পৌরসভার মেয়র শাহাদাত হোসেন।
ময়মনসিংহ: বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদের ময়মনসিংহ জেলা শাখা সূত্রে জানা যায়, এ বছর জেলায় মোট ৭০৫টি মণ্ডপ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। গতকাল ময়মনসিংহ পৌর শহরের বিভিন্ন পূজামণ্ডপে দেখা যায়, সকালে হিন্দুধর্মাবলম্বীরা অঞ্জলি নিবেদন করছেন। এ সময় তাঁরা প্রসাদও নেন। এ ছাড়া জেলার বিভিন্ন উপজেলার মণ্ডপগুলোতে যথাযথ আচার-অনুষ্ঠানের মাধ্যমে মহাসপ্তমী পালন করা হয়।
বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদের ময়মনসিংহ শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক শংকর সাহা বলেন, হিন্দুধর্মাবলম্বী মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে পূজার আচার পালন করছেন। নিরাপত্তাব্যবস্থা নিয়ে কোনো শঙ্কা নেই।
কুমিল্লা: কুমিল্লার ১৬ উপজেলার ৭৩১টি পূজামণ্ডপে গতকাল মহাসপ্তমীতে দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড় ছিল। সন্ধ্যায় পূজামণ্ডপগুলো ছিল সনাতন ধর্মাবলম্বীদের পদচারণে মুখর। মণ্ডপে মণ্ডপে উলুধ্বনি ও ঢাকের বাদ্য শোনা গেছে। নগরের কান্দিরপাড় কাত্যায়নী কালীবাড়ির মন্দিরে দিনভর বাজতে থাকে নানা ধরনের কীর্তন ও সংগীত। একই চিত্র দেখা গেছে নগরের মনোহরপুর রাজেশ্বরী কালীবাড়ি, ঝাউতলা, বাগিচাগাঁও, ঠাকুরপাড়া, চকবাজার, দেশওয়ালীপট্টি ও জগন্নাথ মন্দির এলাকায়।
গত বছরের তুলনায় এবার কুমিল্লার ১৬ উপজেলায় পূজামণ্ডপের সংখ্যা বেড়েছে। গতবার ৭০৪টি মণ্ডপে পূজা হয়েছিল। পূজা উপলক্ষে মাঠে আছেন ১৮ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, ৮০০ জন পুলিশ, ৪ হাজার ১০০ জন আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষাবাহিনীর সদস্য।
জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভাপতি ও কুমিল্লা জেলা প্রশাসক মো. হাসানুজ্জামান কল্লোল বলেন, পূজায় অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের অধীনে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে তাৎক্ষণিক শাস্তি দেওয়া হবে।

শারদীয় দুর্গাপূজার মহাসপ্তমী ছিল গতকাল। সকাল থেকে কুমিল্লা শহরের নজরুল অ্যাভিনিউ কাত্যায়নী কালীবাড়ির পূজামণ্ডপে নামে পুণ্যার্থীদের ঢল l প্রথম আলো

নেত্রকোনা: পূজা উপলক্ষে বর্ণিল সাজে সাজানো হয়েছে প্রতিটি মণ্ডপ। শহরের কয়েকটি পূজামণ্ডপ ঘুরে পূজারিদের কাছ থেকে জানা যায়, অশুভ অসুর শক্তির বিনাশ ঘটিয়ে শুভ সুর শক্তির প্রতিষ্ঠা করাই দুর্গাপূজার মূল দর্শন। শ্রেণি ভেদাভেদ ভুলে সমাজের সর্বস্তরের মানুষকে একত্র করে মহাসম্মিলন ঘটানো হয় বলে এ পূজাকে বলা হয় সর্বজনীন। আর শরৎকালে অনুষ্ঠিত হয় বলে বলা হয় শারদীয় উৎসব।
বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন কমিটির জেলা শাখার সভাপতি নির্মল কুমার দাশ বলেন, নেত্রকোনা পৌরসভায় ৪৬টিসহ সদর উপজেলায় ৯১টি, মদনে ১৫টি, আটপাড়ায় ৩৩টি, খালিয়াজুরী ২৮টি, দুর্গাপুরে ৫৭টি, কেন্দুয়ায় ৪২টি, কলমাকান্দায় ৪৯টি, পূর্বধলায় ৪১টি, মোহনগঞ্জে ২৭টি ও বারহাট্টায় ৪৬টি মণ্ডপে পূজার আয়োজন করা হয়েছে।
জেলা প্রশাসক তরুণ কান্তি শিকদার বলেন, সরকারি অনুদান হিসেবে প্রতিটি পূজামণ্ডপে ৫০০ মেট্রিক টন করে চাল দেওয়া হয়েছে। পুলিশ সুপার জয়দেব চৌধুরী বলেন, জেলায় উৎসব নির্বিঘ্ন করতে পুলিশের পক্ষ থেকে তিন স্তরের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সঙ্গে মোবাইল টিম কাজ করবে। এদিকে পূজা উপলক্ষে গতকাল বিকেলে ঢাকা বিভাগের অতিরিক্ত কমিশনার (সার্বিক) মো. আনিছুর রহমান প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিয়ে জেলা শহরের পূজামণ্ডপগুলো পরিদর্শন করেন।
শেরপুর: শেরপুরের দানবীর সুরেন্দ্র মোহন সাহা ট্রাস্টি বোর্ডের উদ্যোগে নয়আনী বাজার কালীমন্দির প্রাঙ্গণে গত সোমবার সন্ধ্যায় দুস্থ ব্যক্তিদের মধ্যে বস্ত্র বিতরণ করা হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন ট্রাস্টি বোর্ডের সাধারণ সম্পাদক বাদল চন্দ্র সরকার, মা ভঁবতারা মন্দির পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি প্রকাশ দত্ত প্রমুখ।
নাটোর: সকালে শহরের মণ্ডপগুলোতে শারদীয় দুর্গোৎসবের সপ্তমী বিহিত পূজা সম্পন্ন হয়। এর পরপরই শুরু হয় ভক্তদের অঞ্জলি প্রদান। অঞ্জলি দেওয়ার পর তাঁরা পরিবার, দেশ তথা সারা বিশ্বের মঙ্গলের জন্য দেবীর কাছে প্রার্থনা করেন। এরপর দেবীর ভোগরাগ এবং রাতে ভোগ আরতির মধ্য দিয়ে শেষ হয় সপ্তমী বিহিত পূজা।
এবার শারদীয় দুর্গোৎসব ঘিরে শহরের প্রতিটি মন্দির সাজানো হয়েছে। এদিকে সপ্তমী পূজার দিন সকাল থেকেই দর্শনার্থীদের ঢল নামে মণ্ডপে মণ্ডপে। পূজা উপলক্ষে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে তিন স্তরের নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সাতটি উপজেলায় আটজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োজিত আছেন। বড় বড় মন্দিরে কর্তৃপক্ষ নিজেদের উদ্যোগে মেটাল ডিটেক্টর বসায়। শহরে মোটরসাইকেল চলাচল সীমিত করা হয়েছে।
জয়পুরহাট: গতকাল দুপুরে জয়পুরহাট শহরের পূজামণ্ডপগুলোতে গিয়ে দেখা যায়, পুরোহিতেরা পূজার উপকরণ নিয়ে দেবীর সামনে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। জয়পুরহাট জেলা পূজা উদ্যাপন পরিষদের আহ্বায়ক নন্দ কিশোর আগরওয়ালা ও সদস্যসচিব ঋষিকেশ সরকার বলেন, সরকার থেকে এ বছর প্রতিটি পূজামণ্ডপে ৫০০ কেজি করে চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি পূজা কমিটির পক্ষ থেকে স্বেচ্ছাসেবকেরা শান্তিপূর্ণভাবে পূজা অনুষ্ঠানের জন্য দায়িত্ব পালন করছেন।
জয়পুরহাট জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার (সার্কেল) অশোক কুমার পাল বলেন, এবার জেলার পূজামণ্ডপগুলোতে শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর পরিবেশে পূজা উদ্যাপনের লক্ষ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। সাদাপোশাকধারী বাহিনীর পাশাপাশি র্যাব-পুলিশের টহল অব্যাহত আছে।
জয়পুরহাটে এবার ২৬৬টি মণ্ডপে পূজা হচ্ছে। এর মধ্যে জয়পুরহাট সদর উপজেলায় ৯৪টি, পাঁচবিবিতে ৬০টি, ক্ষেতলালে ৪৪টি, আক্কেলপুরে ৩৯টি ও কালাইয়ে ২৯টি মণ্ডপে পূজা হচ্ছে। পূজা উদ্যাপন পরিষদ সূত্রে জানা গেছে, এবার বাড়তি ১৪টি মণ্ডপে পূজা হচ্ছে।
নওগাঁ: স্থানীয় শিশু সংগঠন ‘শিশু বিকাশ’ সদর উপজেলার ইকরতারা পূজামণ্ডপে গ্রামের শতাধিক শিশুর মধ্যে নতুন কাপড় বিতরণ করেছে। দুপুরে শিশু বিকাশের উপদেষ্টা পুলিশ সুপার (এসপি) মোজাম্মেল হক প্রধান অতিথি হিসেবে শিশুদের মধ্যে কাপড় বিতরণ করেন।
শিশু বিকাশের সভাপতি আল মামুনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন পল্লি সহযোগীবিষয়ক সংস্থার (আরকো) নির্বাহী পরিচালক সজল কুমার চৌধুরী, উপদেষ্টা কায়েস উদ্দিন প্রমুখ। এ সময় রাজশাহীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সমীর কুমার চৌধুরী, সদর সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার কানাইলাল সরকার, সহকারী পুলিশ সুপার (হেড কোয়ার্টার) মোহসীন, সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাকিরুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।

গতকাল মহাসপ্তমীতে পূজামণ্ডপে অর্চনা শেষে প্রণাম করছেন পুণ্যার্থীরা। ঠাকুরগাঁও শহরের হলপাড়া দুর্গাবাড়ি মণ্ডপ থেকে তোলা ছবি l প্রথম আলো

কুড়িগ্রাম: গতকাল ভোর ছয়টায় শহরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, নারীরা মন্দিরে পূজা দিতে যাচ্ছেন। সবারই পরনে নতুন শাড়ি। হাতে কাঁসার থালায় ফল-ফুল। কোমরে কাসার কলসি। পেছনে ঢাকি ঢাক বাজছেন। শহরের সবচেয়ে পুরোনো কালীবাড়ি মন্দিরে ভিড়। মন্দির কমিটির নেতা মানিক চন্দ্র বলেন, নিরাপত্তার মধ্যে বিপুল আনন্দের সঙ্গে পূজা হচ্ছে।
শহর ও গ্রাম—সর্বত্র উৎসবের আমেজ। জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, এ বছর জেলায় ৪৯৮টি মণ্ডপে পূজা হচ্ছে। গতবার মণ্ডপের সংখ্যা ছিল ৪৮৫টি। এ ছাড়া জেলার অভ্যন্তরে ১২টি সাবেক ছিটমহলের মধ্যে এবার শুধু দাসিয়ারছড়ার দুটি মণ্ডপে পূজা হচ্ছে। এর একটি দেবীর পাট, অন্যটি ছোট কামা।
ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক আকতার হোসেন আজাদ বলেন, প্রতিটি মণ্ডপে সরকারের পক্ষ থেকে ৫০০ কেজি করে চাল দেওয়া হয়েছে। কঠোর নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। প্রতিটি উপজেলায় সার্বিক অবস্থা পর্যবেক্ষণের জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে মনিটরিং সেল গঠন করা হয়েছে।
লালমনিরহাট: জেলায় এ বছর ৪০৯টি মণ্ডপে পূজা শুরু হয়েছে। লালমনিরহাট পৌর এলাকার সাপটানা বাজার অমৃত সংঘ, পুরান বাজার (কালীবাড়ি) দুর্গামন্দির, থানা রোডের কাচারীবাড়ি দুর্গামন্দির, গোশালা বাজারের শ্রীশ্রী গৌরীশংকর গোশালা সোসাইটির দুর্গামন্দিরসহ অন্যান্য মন্দির চত্বরে ও আশপাশের এলাকায় দেশীয় বিভিন্ন পণ্যসামগ্রীর মেলা বসেছে।
গতকাল এসব মন্দির ও মণ্ডপ ঘুরে দেখা যায়, পণ্যসামগ্রী সাজিয়ে বসেছেন স্থানীয় এবং আশপাশের এলাকা থেকে আসা ব্যবসায়ীরা।
জেলা পূজা উদ্যাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক গোপাল চন্দ্র বর্মণ বলেন, জেলা ও পুলিশ প্রশাসনসহ স্বেচ্ছাসেবকদের সহযোগিতায় শান্তিপূর্ণভাবে পূজা চলছে।
পুলিশ সুপার টি এম মোজাহিদুল ইসলাম বলেন, পূজামণ্ডপগুলোতে শুক্রবার দেবী বিসর্জন না হওয়া পর্যন্ত নিরাপত্তাব্যবস্থা অব্যাহত থাকবে। জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমান বলেন, কোথাও অপ্রীতিকর কিছু ঘটলে দ্রুত যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
গাইবান্ধা: জেলার সাতটি উপজেলার ৫৫৭টি মন্দির ও মণ্ডপে দুর্গাপূজা হচ্ছে। বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদ গাইবান্ধা সদর উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক সুজন প্রসাদ বলেন, গত বছরের তুলনায় এবার মণ্ডপের সংখ্যা বেশি। প্রশাসনের নিরাপত্তাব্যবস্থা সন্তোষজনক।
জেলা প্রশাসক মো. আবদুস সামাদ বলেন, সুষ্ঠুভাবে পূজা উদ্যাপনের জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সার্বিক তদারকি করা হচ্ছে।
ঠাকুরগাঁও: গতকাল সকাল থেকেই সব মণ্ডপে ছিল ঢাকের বাদ্য, শঙ্খের ধ্বনি, কাঁসর ঘণ্টা আর চণ্ডীপাঠের আসর। মন্দিরে মন্দিরে দেবীর চক্ষুদান ও নবপত্রিকা স্থাপনের মধ্যে দিয়ে সপ্তমী পূজা শুরু হয়। বিকেল থেকেই পূজামণ্ডপগুলোতে দর্শনার্থীদের ভিড় বাড়তে থাকে। শহরের বিভিন্ন মণ্ডপ ঝলমলে আলোকসজ্জায় রঙিন হয়ে ওঠে। মণ্ডপে মণ্ডপে আয়োজন করা হয় আরতি প্রতিযোগিতা।
ঠাকুরগাঁওয়ে এবার ৪৩৩টি মণ্ডপে পূজা হচ্ছে। পুলিশ সুপার ফারহাত আহমেদ বলেন, প্রতিটি মণ্ডপে পর্যাপ্ত পুলিশ ও আনসার বাহিনী দিয়ে বাড়তি নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসক মূকেশ চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, পূজা উদ্যাপন করতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে।
দিনাজপুর: জেলার ১৩ উপজেলায় ১ হাজার ১৮৪টি মণ্ডপে পূজা হচ্ছে। জেলা প্রশাসক মীর খায়রুল আলম বলেন, পূজা উদ্যাপনে সরকারি সহায়তা হিসেবে প্রতিটি মণ্ডপে ৫০০ কেজি করে চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদ দিনাজপুর জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক বিধান চক্রবর্তী বলেন, পুলিশ ও জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে নিরাপত্তাব্যবস্থা ছাড়াও প্রতিটি মণ্ডপ কমিটির উদ্যোগে সার্বক্ষণিক নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে।