মাগুরা-১ আসন

উৎসবমুখর আওয়ামী লীগ, ভয়-আতঙ্কে বিএনপি

>

সকাল থেকে রাত অবধি নির্বাচনী মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন নৌকার প্রার্থী। অন্যদিকে কারাগারে ধানের শীষের প্রার্থী।

উৎসবমুখর পরিবেশে মাগুরা-১ আসনে প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও তাঁর সমর্থকেরা। বিপরীত পরিবেশ বিএনপি শিবিরে। হামলা ও গ্রেপ্তার আতঙ্কে একপ্রকার মাঠছাড়া তারা।

সদরের একাংশ ও শ্রীপুর উপজেলা নিয়ে গঠিত মাগুরা-১ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর সহকারী একান্ত সচিব সাইফুজ্জামান শিখর। প্রথমবার প্রার্থী হলেও দীর্ঘ ১০ বছর ধরে স্থানীয় রাজনীতিতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করায় তৃণমূল নেতা-কর্মীদের সমর্থন আদায়ে তাঁকে বেগ পেতে হয়নি। আনুষ্ঠানিক প্রচার শুরুর আগ থেকেই তাঁর পক্ষে কাজ করে আসছেন জেলা আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতারা। আনুষ্ঠানিক প্রচার শুরুর পর থেকে প্রতিদিন সকাল থেকে গভীর রাত অবধি নির্বাচনী এলাকা চষে বেড়াচ্ছেন প্রার্থী নিজেও।

নির্বাচনী প্রচারের বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক রাশেদ মাহমুদ বলেন, প্রার্থীর পাশাপাশি বিভিন্ন ইউনিটের নেতা-কর্মীরা ভাগ হয়ে দৈনিক প্রচার চালাচ্ছেন। এই আসনে মোট আটজন প্রার্থীর মধ্যে ব্যানার, পোস্টার ও মাইকিং, এমনকি ডিজিটাল প্রচারণাতেও এগিয়ে আছেন নৌকার প্রার্থী।

উল্টো চিত্র বিএনপি শিবিরে। প্রার্থী কারাগারে, নেতারা ঢাকায়, কর্মীরা আতঙ্কে। নির্বাচনী এলাকায় ধানের শীষের প্রকাশ্যে প্রচার নেই বললেই চলে। নেতা-কর্মীরা বলছেন, প্রশাসন ও ক্ষমতাসীনদের চাপে প্রচার চালানোর উপায় নেই।

২০১৫ সালের একটি পেট্রলবোমা হামলা মামলায় গত ২৯ নভেম্বর থেকে কারাগারে রয়েছেন বিএনপির প্রার্থী মনোয়ার হোসেন খান। এর আগে দীর্ঘদিন দেশের বাইরে থাকায় আনুষ্ঠানিকভাবে ভোটের মাঠেই নামতে পারেননি তিনি। আনুষ্ঠানিক প্রচার শুরুর পর তাঁর পক্ষে প্রচারে নেমেছিলেন জেলা বিএনপির নেতারা। তবে তা স্থায়ী হয় মাত্র তিন দিন। ১৩ ডিসেম্বর সদর উপজেলার জগদল বাজারে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় একটি মামলায় আসামি করা হয় জেলা বিএনপির প্রায় অর্ধশত নেতা-কর্মীকে। তারপর থেকেই গা ঢাকা দিয়েছেন বিএনপির প্রার্থীর পক্ষে প্রচারে থাকা বেশির ভাগ নেতা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আসামিদের সবাই উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিতে ঢাকায় অবস্থান করছেন। যদিও ওই ঘটনার জন্য পরস্পরকে দোষারোপ করে আসছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি।

মাগুরা সদর ও শ্রীপুরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, বেশির ভাগ জায়গায় ধানের শীষের পোস্টার পর্যন্ত নেই। এখনো তৈরি হয়নি নির্বাচনী অফিস। এক সপ্তাহ হলো বন্ধ রয়েছে শহরের ভায়নার মোড়ে দলটির প্রধান নির্বাচনী কার্যালয়ও। প্রচারণা সীমাবদ্ধ আছে শুধু মাইকিংয়ে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ধানের শীষের প্রার্থী মনোয়ার হোসেনের নির্বাচনের প্রধান সমন্বয়কারী আইনজীবী শাহেদ হাসান‍ বলেন, জগদলের মামলার পর থেকে কেউ প্রকাশ্যে কাজ করতে পারছেন না। ক্ষমতাসীনদের পাশাপাশি প্রশাসনেরও চাপ রয়েছে। তিনি বলেন, ‘এখানে পরিস্থিতি এমন যে প্রচারের জন্য আমরা মাইক পাচ্ছি না, ইজিবাইক পাচ্ছি না। আমাদের কাছে গাড়ি ভাড়া দিতেও ভয় পাচ্ছেন মালিকেরা।’

বিএনপির দলীয় সূত্র বলছে, তফসিল ঘোষণার পর তাদের নেতাদের হয়রানির উদ্দেশ্যে কমপক্ষে দুটি মামলা দেওয়া হয়েছে। সেসব মামলায় আসামি করা হয়েছে সক্রিয় নেতা-কর্মীদের। আটক হয়েছেন বেশ কয়েকজন নেতা। এর মধ্যে ২০ ডিসেম্বর রাতে ঢাকা থেকে আটক হয়েছেন যুবদলের সভাপতি ওয়াসিকুর রহমান ও ছাত্রদলের সভাপতি আবদুর রহিম। তাঁদের দুই দিন ঢাকার ডিবি কার্যালয়ে আটকে রাখার পর গতকাল রোববার আদালতে উপস্থাপন করা হয়েছে।

অবশ্য বিএনপির এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, প্রার্থী কারাগারে থাকায় স্থানীয় নেতারাও গা বাঁচিয়ে চলছেন। তবে ভোটের দিন মানুষ ভোটকেন্দ্রে যেতে পারলে প্রার্থী কারাগারে থেকেও জয় পেতে পারেন বলে মনে করেন তিনি।

আওয়ামী লীগ-বিএনপি ছাড়া এ আসনে আরও ছয় প্রার্থী রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে নৌকার প্রার্থী সাইফুজ্জামানকে সমর্থন দিয়ে সরে দাঁড়িয়েছেন জাতীয় পার্টির হাসান সিরাজ সুজা। বাকি প্রার্থীদের মধ্যে এনপিপির কাজী তোহিদুল ইসলাম, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নাজিরুল ইসলাম, বিএনএফের মুতাসিম বিল্লাহ ও স্বতন্ত্র প্রার্থী কাজী রেজাউল হোসেন ঢিমেতালে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন।