উপনির্বাচনে প্রার্থী হতে অনেকটাই ‘হুমড়ি’ খেয়ে পড়েছেন আওয়ামী লীগের নেতারা। দেশের পাঁচটি আসনের উপনির্বাচনে ১৪১ জন দলীয় ফরম সংগ্রহ করেছেন। প্রতি আসনে গড়ে আগ্রহী প্রার্থী ২৮ জন। সাম্প্রতিক সময়ে উপনির্বাচন, এমনকি গত জাতীয় নির্বাচনেও এত আগ্রহী ছিল না।
আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, আগামীকাল সোমবার দলীয় মনোনয়ন বোর্ডের বৈঠক হবে। তবে অধিকাংশ সদস্য বয়োজ্যেষ্ঠ হওয়ায় করোনাকালে তাঁদের বাড়ির বাইরে বের হতে নিষেধ করা হয়েছে। ফলে অল্প কয়েকজন নিয়েই হয়তো বৈঠক হবে। বাকিদের মতামত ফোনে নেওয়া কিংবা ভিডিও কলের মাধ্যমে যুক্ত করা হতে পারে। গতকাল রোববার গোয়েন্দা সংস্থার কাছ থেকেও দলের প্রার্থীদের বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য সংগ্রহ করেছেন দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা।
আওয়ামী লীগের দলীয় সূত্র থেকে জানা গেছে, ২০১৪ সালের একতরফা নির্বাচনে ১৫৩টি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় প্রার্থীরা জয়ী হন। বাকি ১৪৭ আসনের প্রতিটিতে গড়ে ১৭ জন দলীয় ফরম সংগ্রহ করেছিলেন। সর্বশেষ জাতীয় নির্বাচনে প্রতি আসনের বিপরীতে ১৪ জন ফরম সংগ্রহ করেছিলেন।
চলতি বছরের শুরুতে ঢাকা-১০, বগুড়া-১, বাগেরহাট-৪, যশোর-৬ ও গাইবান্ধা-৩ আসনের উপনির্বাচন হয়েছে। এগুলোতে সব মিলিয়ে দলীয় ফরম বিক্রি হয় ৭৮টি, অর্থাৎ প্রতি আসনে গড়ে মাত্র ১৫ জন।
আওয়ামী লীগের একজন দায়িত্বশীল কেন্দ্রীয় নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, উপনির্বাচনে প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে তিনটি বিষয় বিবেচনায় নেওয়া হয়। এগুলো হচ্ছে গোয়েন্দা প্রতিবেদনে অবস্থান, মৃত সাংসদের পরিবারের কেউ যোগ্য আছেন কি না, কাকে মনোনয়ন দিলে দলীয় কোন্দল কম হবে। সিরাজগঞ্জ-১ বাদে অন্য আসনগুলোতে এবার পারিবারিক প্রভাবের সম্ভাবনা তুলনামূলকভাবে কম। বাকিগুলো দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা চুলচেরা বিশ্লেষণ করেন। এ জন্য মনোনয়ন বোর্ডের অন্য সদস্যরা তাঁর দিকেই চেয়ে থাকেন।
উপনির্বাচনে বিপুলসংখ্যায় প্রার্থী হতে চেয়ে ফরম সংগ্রহ করার বিষয়টি নিয়ে নানা ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ চলছে আওয়ামী লীগে। দলটির কেন্দ্রীয় দায়িত্বশীল নেতাদের সঙ্গে কথা বলে এর কিছু কারণ পাওয়া গেছে। এগুলো হচ্ছে—১. গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনসহ সাম্প্রতিক নির্বাচনের অভিজ্ঞতা বলছে, আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়া মানে জয় অনেকটাই নিশ্চিত। এ জন্যই প্রতিযোগিতা বেশি।
২. তৃণমূল পর্যায়েও নেতা-কর্মীদের হাতে টাকা আছে। ফলে ৩০ হাজার টাকা দিয়ে একটি দলীয় ফরম সংগ্রহ করার মাধ্যমে অনেকেই এলাকায় ‘নাম ফোটাতে’ চাইছেন।
৩. সারা দেশেই দলীয় কোন্দল ব্যাপক। ফলে প্রতিপক্ষকে চাপে রাখতে প্রার্থী হতে চেয়েছেন অনেকে।
৪. শূন্য হওয়া পাঁচটি আসনের সাংসদের সবাই দীর্ঘদিন ধরে নিজ নিজ আসনে জয়ী হয়ে আসছেন। ফলে তৃণমূল পর্যায়ের অন্য নেতাদের সুযোগ মেলেনি। এখন তাঁরা নিজেদের সামনে এগিয়ে আনতে চেয়েছেন।
৫. মৃত সাংসদদের পরিবার থেকেও একাধিক সদস্যের প্রার্থী হওয়া।
৬. গত ১১ বছর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায়। এ সময় সামরিক-বেসামরিক বহু আমলা আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছেন। অন্য দলের নেতা ও ব্যবসায়ীরাও বহুসংখ্যায় আওয়ামী লীগে ভিড়েছেন। যেকোনো নির্বাচন এলেই তাঁরা প্রার্থী হওয়ার দৌড়ে অংশ নেন। এ জন্যই সংখ্যা বাড়ে।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলী ও মনোনয়ন বোর্ডের সদস্য কাজী জাফরউল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, দু-এক দিনের মধ্যেই প্রার্থী বাছাইয়ে বৈঠক হবে। বেশি প্রার্থীর বিষয়ে তিনি বলেন, উপনির্বাচন হলেও এই সাংসদ আরও সাড়ে তিন বছর আছেন। সাম্প্রতিক সময়ে নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ফলাফলও ভালো। ফলে আগ্রহ থাকাটাই স্বাভাবিক।
গত কয়েক মাসের মধ্যে মারা গেছেন সাবেক মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিম ও সাহারা খাতুন, সাবেক মন্ত্রী শামসুর রহমান শরীফ, হাবিবুর রহমান মোল্লা ও ইসরাফিল আলম। সবাই আওয়ামী লীগের মনোনয়নে বহুবার সাংসদ হয়েছিলেন। মারা যাওয়ার পর ঢাকা-৫ ও ঢাকা-১৮, সিরাজগঞ্জ-১, পাবনা-৪, নওগাঁ-৬ এবং সিরাজগঞ্জ-১ আসন শূন্য ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। এর মধ্যে শামসুর রহমানের মৃত্যুতে শূন্য হওয়া পাবনা-৪ আসনে ভোট গ্রহণ হবে ২৬ সেপ্টেম্বর। ঢাকা-৫ ও নওগাঁ-৬ আসনে ভোট হবে ১৭ অক্টোবর। বাকি দুটি আসনে পরে ভোট হবে।
ঢাকা-১৮–তে চোখ ৫৬ জনের
এ আসনে ২০০৮ সাল থেকে টানা সাংসদ ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সাহারা খাতুন। মন্ত্রীও হয়েছেন তিনি। প্রধানমন্ত্রীর মেয়ে সায়মা হোসেন পুতুল প্রার্থী হতে পারেন—সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এমন প্রচারে প্রার্থিতা নিয়ে আলোচনা বেড়ে যায়। যদিও পুতুলের প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা নিয়ে আওয়ামী লীগের কোনো পর্যায়ের নেতারাই ওয়াকিবহাল নন। গত জাতীয় নির্বাচনে মনোনয়নবঞ্চিত আওয়ামী লীগের কিছু কেন্দ্রীয় নেতার নামও আলোচনায় আসে। এ ছাড়া স্থানীয় নাকি বাইরের; ব্যবসায়ী নাকি রাজনীতিক; সাহারা খাতুনের পরিবারের নাকি অন্য কেউ—এসব প্রশ্নও সামনে এসেছে এ আসনে। ফলে আগ্রহী প্রার্থীও বেশি, সর্বোচ্চ ৫৬ জন।
আসনটি দক্ষিণখান, খিলক্ষেত, তুরাগ, উত্তরা, উত্তরখান, বিমানবন্দর এলাকার সব থানা নিয়ে গঠিত। এসব থানা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতার প্রায় সবাই দলীয় ফরম কিনেছেন। আছেন স্থানীয় কাউন্সিলররাও। তাঁদের কেউ কেউ বংশপরম্পরায় ওই এলাকায় বসবাস করেন। যাঁদের ‘স্থানীয়’ হিসেবে বিবেচনা করা হয়, তাঁরা শক্ত প্রার্থী হিসেবে বিবেচিত। কিন্তু আবার এক পরিবার অন্য পরিবারকে পছন্দ করেন না। ফলে স্থানীয় কেউ প্রার্থী হলে অন্যদের বিরোধিতার আশঙ্কা করছেন দলের নীতিনির্ধারকেরা।
এ আসনে যুব মহিলা লীগের সভাপতি নাজমা আক্তার। ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগের বিরোধী দলে থাকার সময় যুব মহিলা লীগ আন্দোলন-সংগ্রামে বেশ আলোচিত সংগঠন ছিল। দল ক্ষমতায় আসার পর নাজমা আক্তারকে একবার সংরক্ষিত নারী সাংসদ করা হয়েছে। তাঁকে উত্তরায় প্রার্থী করতে দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের একটা অংশ সক্রিয়।
সাহারা খাতুনের পরিবারের সদস্যদের মধ্যে দুই ভাগনে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। তাঁরা হলেন মজিবুর রহমান ও আনিসুর রহমান। এর মধ্যে মজিবুর রহমান সাহারা খাতুনের এপিএস ছিলেন এবং উত্তরা পশ্চিম থানা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি। আনিসুর রহমান উত্তরা পশ্চিম থানার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। তবে সাহারা খাতুনের অবর্তমানে স্থানীয়ভাবে তাঁরা এতটা শক্তিশালী নন। আবার স্থানীয় আওয়ামী লীগের একটা অংশ তাঁদের ওপর নাখোশ।
আজ শেষ দিন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আবদুল হাফিজ মল্লিক দলীয় ফরম কিনেছেন। এর বাইরে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা থেকে শুরু করে সাবেক সচিব, পুলিশের সাবেক ডিআইজি বা ব্যবসায়ী—সব পেশার প্রার্থীই সেখানে ফরম সংগ্রহ করেছেন। এর মধ্যে সাবেক সচিব মোহাম্মদ মুসাও রয়েছেন, যাঁকে আওয়ামী লীগ ভূতাপেক্ষ সচিবের মর্যাদা দিয়েছিলেন। আছেন সাবেক ডিআইজি এস এম মাহফুজুল হক নুরুজ্জামান।
এ আসনের নির্বাচন এখন হচ্ছে না। ফলে কোনো ব্যবসায়ী নেতা কিংবা বড় কোনো নাম চমক হিসেবে আসে কি না, সে আলোচনা আছে।
ঢাকা-৫–এ শক্ত প্রার্থী খুঁজছে দল
হাবিবুর রহমান মোল্লা পাঁচবারের সাংসদ ছিলেন। প্রভাব, জনপ্রিয়তা ও দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার আস্থা বিবেচনায় নিলে তাঁর অবর্তমানে পরিবারের কারও মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি থাকার কথা। কিন্তু মোল্লা পরিবারের এমন শক্ত প্রার্থীর অভাব দেখছেন দলের কেউ কেউ। যদিও তাঁর বড় ছেলে ও ডেমরা থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মশিউর রহমান মোল্লা দলের মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী।
হাবিবুর রহমান মোল্লা মারা যাওয়ার দিন থেকেই এ আসনে কে প্রার্থী হচ্ছেন—সেই আলোচনা শুরু হয়ে যায় দলে। এ থেকেই বোঝা যায়, দলীয় বিবাদ কতটা গভীর। মোল্লার মৃত্যুর পর থেকে প্রার্থী হতে চেয়ে এলাকায় পোস্টার-ব্যানার টানানো শুরু হয়। এখন তা ছেয়ে গেছে।
গত জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রাথমিক প্রার্থীতালিকায় হাবিবুর রহমান মোল্লার পাশাপাশি যাত্রাবাড়ী থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি কাজী মনিরুল ইসলামের নামও ছিল। পরে হাবিবুর রহমান মোল্লাকে চূড়ান্ত মনোনয়ন দেওয়া হয়। তাই মনিরুল–সমর্থকেরা মনে করছেন, এবার তাঁদের প্রাপ্য।
ডেমরা থানা সভাপতি রফিকুল ইসলাম খান মাসুদও আছেন। এ ছাড়া যাত্রাবাড়ী থানার সভাপতি কাজী মনিরুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশীদও ফরম সংগ্রহ করেছেন। অর্থাৎ স্থানীয় আওয়ামী লীগ বহু ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন।
তাঁদের বাইরে প্রার্থী হওয়ার জন্য ফরম সংগ্রহ করেছেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু আহমেদ মন্নাফী। এটা তাঁর মূল নির্বাচনী এলাকা নয়। এর আগে তিনি নবাবপুর রোড এলাকার কাউন্সিলর ছিলেন। এলাকার বাইরে থেকে এবং মহানগর আওয়ামী লীগের শীর্ষ পদে থেকে তাঁর ফরম সংগ্রহ করাকে ইঙ্গিতবহ মনে করছেন অনেকে। শেষ দিন স্বেচ্ছাসেবক লীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শাখার সভাপতি কামরুল হাসানও ফরম সংগ্রহ করেছেন।
এর বাইরে প্রার্থী হয়েছেন আওয়ামী লীগের শ্রমবিষয়ক সম্পাদক হাবিবুর রহমান সিরাজ। তিনি টানা পাঁচবার আওয়ামী লীগের এ পদে আছেন। তাঁর বাড়ি ফরিদপুরে। সেখানে কখনোই মনোনয়ন পাননি। ঢাকা-৪ আসন থেকে মনোনয়ন পেতে দীর্ঘদিন ধরে চেষ্টা চালাচ্ছেন আওলাদ হোসেন। সেখানে ব্যর্থ হয়ে ঢাকা-৫ আসনের ফরম সংগ্রহ করেছেন। ২০০১ সালের পর তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত কর্মকর্তা ছিলেন আওলাদ। কিন্তু এক-এগারোর পর তিনি গ্রেপ্তার হন এবং আর শেখ হাসিনার কাছে ঘেঁষতে দেওয়া হয়নি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছেলে শেখ কামালের স্ত্রী ক্রীড়াবিদ সুলতানা কামালের ছোট ভাইয়ের মেয়ে নেহরীন মোস্তফাও মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন, যা এলাকায় আলোচিত হচ্ছে।
সব মিলিয়ে এ আসনে আগ্রহী প্রার্থীর সংখ্যা ২০।
ভাইদের পর ভাতিজাদের প্রতিদ্বন্দ্বিতা:
সিরাজগঞ্জ-১ আসনটি শূন্য হয়েছে সাবেক মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিম মারা যাওয়ার পর। নাসিম জীবিত থাকা অবস্থায় এ আসনে একমাত্র তাঁর ভাই প্রয়াত মোহাম্মদ সেলিমই প্রার্থী হওয়ার চ্যালেঞ্জ জানাতে পেরেছিলেন। এখন নাসিম ও সেলিম দুজনই গত হয়েছেন। দৃশ্যপটে এসেছেন তাঁদের ছেলেরা।
উপনির্বাচনে তিনজন দলীয় ফরম সংগ্রহ করেছেন। তাঁরা হলেন মোহাম্মদ নাসিমের ছেলে তানভীর শাকিল জয়। এক-এগারোর সময় মোহাম্মদ নাসিম কারাগারে ছিলেন। বের হওয়ার পর আইনি জটিলতায় তিনি নির্বাচন করতে পারেননি। ২০০৮ সালে তাঁর আসনে ছেলে তানভীর শাকিল জয় দলের মনোনয়ন নিয়ে জয়ী হন। এবার এ আসনে নাসিমের ভাই মোহাম্মদ সেলিমের ছেলে শেহরিন সেলিম মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। তিনি ইংল্যান্ডে থাকতেন। এখন দেশে থাকলেও তিনি এখনো এলাকায় যাননি।
এর বাইরে ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সহসভাপতি অমিত কুমার দেবও মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। তবে তা আলোচনায় আসার জন্যই বলে দলের নেতারা মনে করেন।
পাবনা-নওগাঁয় যুদ্ধ যুদ্ধ ভাব:
সাবেক ভূমিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরীফ মারা যাওয়ায় পাবনা-৪ আসন শূন্য হয়েছে। তিনি এ আসনের পাঁচবারের সাংসদ ছিলেন। ১৯৯৬ সালের পর তিনি হারেননি। আর নওগাঁ-৬ আসনের দীর্ঘদিনের সাংসদ ছিলেন ইসরাফিল আলম। সম্প্রতি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে তিনি মারা যান।
পাবনা-৪ আসনে দলীয় ফরম সংগ্রহ করেছেন ২৮ জন। আর নওগাঁ-৬ আসনে নিয়েছেন ৩৪ জন। মফস্বলের দুটি আসনে এত প্রার্থীর আগ্রহী হওয়ার বিষয়টি অনেকটা অস্বাভাবিক বলে মনে করছেন দলের নেতারা।
শামসুর রহমান দীর্ঘদিন সাংসদ হলেও গত এক দশকে দলে ব্যাপক কোন্দলের জন্ম নিয়েছে। বিশেষ করে তাঁর পরিবারের মধ্যেই দ্বন্দ্ব প্রকট। এ জন্য তাঁর মৃত্যুর পর পরিবারের পাঁচজন প্রার্থী হওয়ার দৌড়ে শামিল হয়েছেন। এতে দলের নীতিনির্ধারকেরা কিছুটা বিরক্ত বলে জানা গেছে। পরিবারের প্রার্থীরা হলেন শামসুর রহমানের স্ত্রী ও ঈশ্বরদী উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কামরুন্নাহার শরীফ, বড় ছেলে গালিবুর রহমান শরীফ, মেয়ে জেলা আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক সম্পাদক মেহজেবিন শিরিন, জামাই ঈশ্বরদী পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও পৌর মেয়র আবুল কালাম আজাদ এবং কামরুন্নাহার শরীফের ভাগনে বশির আহম্মেদ।
তাঁদের বাইরে আটঘরিয়া ও ঈশ্বরদী উপজেলা আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা প্রায় সব নেতাই দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন।
স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ সূত্র জানায়, শরীফের ছেলে-স্ত্রীর সঙ্গে মেয়ে–জামাইয়ের দ্বন্দ্ব অনেক পুরোনো। দুই পক্ষের মধ্যে মারামারির ঘটনাও ঘটেছে। জামাই আবুল কালাম শক্ত প্রার্থী। পরিবারের সদস্য হিসেবে হয়তো ছেলে ও স্ত্রীকে দল বিবেচনা করবে। সে হিসেবে স্ত্রী এবং জামাইয়ের একজনের পাওয়ার সম্ভাবনা আছে।
তবে তাঁদের এ দ্বন্দ্বের কারণে বাইরের কাউকে প্রার্থী করা নিয়েও আলোচনা আছে। সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআইএর মহাপরিচালক এ এস এম নজরুল ইসলামও ফরম সংগ্রহ করেছেন।
নওগাঁ আসনে রানীনগর ও আত্রাইয়ের প্রায় সব গুরুত্বপূর্ণ নেতা ফরম সংগ্রহ করেছেন। তবে ইসরাফিলের স্ত্রী সুলতানা পারভীনের সম্ভাবনা নিয়ে দলে আলোচনা আছে।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার প্রথম আলোকে বলেন, রাজনীতি বা সাংসদ হওয়া এখন লাভজনক ব্যবসায় পরিণত হয়েছে। সরকারি দল হলে জয়ের নিশ্চয়তাও আছে। আর জয়ী হলে এ পদ ব্যবহার করে ব্যবসাও বৃদ্ধি করা যায়। এ জন্যই উপনির্বাচনেও প্রার্থী হওয়ার দৌড় লম্বা হচ্ছে। নয়তো মহামারিকালে এত আগ্রহ থাকার আর কী কারণ থাকতে পারে?