চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার সোনাকানিয়া ইউনিয়নের মির্জাখীল বালিকা উচ্চবিদ্যালয় এলাকায় হাতিয়ার খাল সেতুর সংযোগ সড়ক ধসে পড়েছে। এতে সেতুটি দিয়ে চলাচলকারী সাতকানিয়া সদর ইউনিয়ন ও সোনাকানিয়া ইউনিয়নের কয়েক হাজার বাসিন্দা ভোগান্তিতে পড়েছেন। সেতুর পাশ থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের কারণে সংযোগ সড়কটি ধসে পড়েছে বলে স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ।
স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে ও স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) উপজেলা কার্যালয় থেকে জানা গেছে, আট-দশ বছর আগে ১ কোটি ২৬ লাখ টাকা ব্যয়ে হাতিয়ার খাল সেতুটি নির্মাণ করা হয়। সম্প্রতি ৫১ লাখ টাকা ব্যয়ে মির্জাখীল বালিকা উচ্চবিদ্যালয় সড়কটির হাতিয়ার খাল সেতু পর্যন্ত প্রায় ৭০০ মিটার এলাকায় কার্পেটিংয়ের কাজ শেষ হয়েছে। তবে এখনো সড়কটির উদ্বোধন করা হয়নি। এর মধ্যে শুক্রবার দুপুরে হাতিয়ার খাল সেতুর পূর্ব পাশের সংযোগ সড়কের কিছু অংশ খালের মধ্যে বিলীন হয়ে যায়। এতে সড়ক থেকে সেতুটি বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।
আজ শনিবার সকালে সরেজমিনে দেখা গেছে, সেতুর পশ্চিম পাশে প্রায় ১৫ থেকে ১৭ ফুট সংযোগ সড়ক ধসে খালের মধ্যে বিলীন হয়ে গেছে। দুর্ঘটনা এড়ানোর জন্য স্থানীয় লোকজন সেতুর পূর্ব পাশে ও ধসে পড়া স্থানে বাঁশ দিয়ে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে গাড়ি চলাচল বন্ধ করে দিয়েছেন। তবে এলাকার লোকজন ঝুঁকি নিয়ে ধসে পড়া সড়কের পাশ দিয়ে হেঁটে চলাচল করছেন।
স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ, উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতা বশির আহমদ চৌধুরী সড়ক ও সেতুর পাশ থেকে অবৈধভাবে বালু তোলার কারণে সংযোগ সড়কটি ধসে গেছে। বালু উত্তোলন বন্ধ করা না হলে যেকোনো সময় নবনির্মিত সেতুটিও ধসে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সাতকানিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি বশির আহমদ চৌধুরী বলেন, ‘সেতু বা সড়কের পাশ থেকে বালু উত্তোলন করা হয়নি। সেতু থেকে প্রায় দেড় হাজার ফুট দূরে আমার ইজারাকৃত অংশ থেকেই বালু তোলা হয়েছে। একটি পক্ষ আমাকে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্যই আমার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ করছে।’
সাপ্তাহিক চাটগাঁর সংবাদ পত্রিকার সম্পাদক ও স্থানীয় বাসিন্দা নুরুল আবছার চৌধুরী প্রথম আলোকে, দীর্ঘদিন চেষ্টা চালিয়ে হাতিয়ার খাল সেতুটি নির্মাণ ও মির্জাখীল বালিকা উচ্চবিদ্যালয় সড়কে কার্পেটিংয়ের কাজ হয়েছে। সড়কের কাজে অনিয়ম ও সেতুর পাশ থেকে অবৈধভাবে বালু তোলার কারণে উদ্বোধনের আগেই সড়কটির কিছু অংশ ধসে গেছে। বালু উত্তোলন বন্ধ করার জন্য এলাকার লোকজন প্রশাসনের কাছে অনেকবার যোগাযোগ করেছেন। তারপরও বালু উত্তোলন বন্ধ করা হয়নি। অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধ করে ধসে যাওয়া সড়কটি দ্রুত সংস্কার করার দাবি জানান তিনি।
সড়কটির কার্পেটিংয়ের কাজ করা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স দেবজিৎ এন্টারপ্রাইজের মালিক দেবজিৎ কিরণ শর্মার মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন দেওয়া হলেও তিনি ফোন দেননি।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) সাতকানিয়া উপজেলা প্রকৌশলী পারভেজ সারোয়ার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘শনিবার দুপুরের দিকে ধসে পড়া অ্যাপ্রোচ সড়কের স্থান পরিদর্শন করা হয়েছে। ঠিকাদারের কোনো অনিয়মের কারণে সেতুর অ্যাপ্রোচ সড়ক ধসে গেছে বলে আমার মনে হয় না। তবে সেতুর সংযোগ সড়ক রক্ষা দেয়াল নির্মাণে কোনো ত্রুটি আছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হবে। তা ছাড়া সেতুর আশপাশ থেকে বালু তোলার কারণেও এ ধরনের ধস হতে পারে। ধসে পড়া সংযোগ সড়কটি দ্রুত সংস্কারের ব্যবস্থা করা হবে।’